• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

লক্ষ্ণৌ চুক্তি-১৯১৬ The Lucknow Pact-1916

ভারতীয় উপমহাদেশে দুই বিরোধমান হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের ক্ষেত্রে ১৯১৬ সালের লক্ষ্ণৌ চুক্তি একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে। ব্রিটিশদের নির্যাতনমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে স্বাধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায় একমত হলে লক্ষ্ণৌ শহরে ১৯১৬ সালে যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় তাই ইতিহাসে লক্ষ্ণৌ চুক্তি নামে পরিচিত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ভারতের মডারেট নেতারা ব্রিটিশদের বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে এই আশায় যে, এই সাহায্যের বিনিময়ে ব্রিটিশ সরকার ভারতকে স্বায়ত্তশাসনের অধিকার দিবে।

লক্ষ্ণৌ চুক্তির পূর্বেও ব্রিটিশদের কাছ থেকে অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে হিন্দু ও মুসলিম ঐক্যের বহু প্রচেষ্টা চলছিল। ১৯১১ সালে মহামান্য আগাখানের নেতৃত্বে এলাহাবাদে একটি মুসলিম প্রতিনিধি দল হিন্দুদের সাথে আলোচনা করে ব্যর্থ হয়। ১৯১৩ সালে কায়দে আজম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ মুসলিম লীগে যোগদান করলে এবং ১৯১৫ সালে লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের দ্বার উন্মোচন হয়। কংগ্রেস ও লীগের মধ্যে এই ধারণা জন্মে যে, ব্রিটিশদের কাছ থেকে ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের মধ্যকার সকল ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে হবে। তা না হলে ভারতবাসীর দাবি-দাওয়া কোনো দিনই পূরণ হবে না।

এমনই প্রেক্ষাপটে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ব্রিটিশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য কংগ্রেসের সাথে আপস প্রস্তাবে ব্যর্থ হয়। অপরদিকে, কংগ্রেস নেতা বালগঙ্গাধরতিলক মুসলিম লীগের সঙ্গে আপস দ্বারা ব্রিটিশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাজি হয়। ফলে ১৯১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর লক্ষ্ণৌ শহরে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের এক যৌথ অধিবেশনে বসে। এই যৌথ অধিবেশনে কংগ্রেস ও লীগের মধ্যে সম্প্রীতি ও সমঝোতা স্মারক লক্ষ্ণৌ চুক্তি ১৯১৬ সম্পন্ন হয়। 

ধারাসমূহ (Provision of the act)

১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর লক্ষ্ণৌ শহরে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ বার্ষিক সম্মেলন আহ্বান করেন। এ সময় উভয় দলের নেতারা ঐতিহাসিক লক্ষ্ণৌ চুক্তি প্রণয়ন করেন; যা হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি ও সমঝোতার মূল্যবান দলিল। এ চুক্তির প্রধান দিকসমূহ হলো-

১। প্রাদেশিক আইনসভাগুলোতে সদস্যদের অংশ নির্বাচিত, অংশ মনোনীত হবে।

২। প্রধান প্রদেশগুলোর আইনসভার সদস্য সংখ্যা ১২৫ জন এবং ছোট প্রদেশগুলোর আইনসভার সদস্য সংখ্যা ৪০ থেকে ৭৫ জন হবে।

৩। মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস সম্মিলিতভাবে ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হবে।

৪। প্রাদেশিক আইন পরিষদে মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা কংগ্রেস স্বীকার করে নিবে।

৫। যে যে প্রদেশে মুসলমানরা সংখ্যালঘু সে প্রদেশে তারা জনসংখ্যা অনুপাতে প্রাপ্য আসন অপেক্ষা অধিক আসন এবং সংখ্যাগুরু প্রদেশে অনুপাত অপেক্ষা কম আসন লাভ করবে।

মোট নির্বাচিত সদস্যের পাঞ্জাব ৫০%, যুক্ত প্রদেশ ৩০%, বাংলাদেশ ৪০%, বিহার ২৫%, মধ্য প্রদেশ ১৫%, মাদ্রাজ ১৫% এবং মুম্বাই ৩৩%। শর্ত থাকে যে, এসব নির্ধারিত আসন ছাড়া মুসলমানরা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক অন্য কোনো আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না।

৬। যুদ্ধ, সামরিক, বৈদেশিক ও রাজনৈতিক বিষয়াদি পরিচালনা, শান্তি স্থাপন ও সন্ধিতে আবদ্ধ হওয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার আইনসভার থাকবে না।

৭। মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস পৃথক নির্বাচন মেনে নিবে।

গুরুত্ব (Importance)

ভারতীয় রাজনৈতিক ইতিহাসে ৮ বছর স্থায়ী লক্ষ্ণৌ চুক্তির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম-

১। লক্ষ্ণৌ চুক্তি হিন্দু ও মুসলিম রাজনৈতিক সমঝোতার গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এটাই হচ্ছে ভারতের জন্য একটি সংবিধানের রূপরেখা প্রণয়নের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ প্রয়াস। এর ফলেই হিন্দু-মুসলমান যৌথভাবে ব্রিটিশদের নিকট নিজেদের দাবি-দাওয়া পেশ করার সুযোগ হয়। এই চুক্তির ফলেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন অনেক দূরে এগিয়ে যায়।

২। মুসলমানদের পৃথক নির্বাচন মেনে নেওয়া হয়। কংগ্রেস মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক অস্তিত্ব স্বীকার করে নেয়। এই চুক্তিতে মুসলমানদের ৩টি সুবিধা হয়- (ক) বিভিন্ন আইনসভায় স্বতন্ত্র নির্বাচনের অধিকার (খ) মুসলিম সংখ্যালঘু প্রদেশে তাদের ওপর গুরুত্ব আরোপ (গ) যেকোনো আইন পরিষদে মুসলমান সদস্যের অংশ কোনো বিলের ব্যাপারে আপত্তি জানালে সে বিল পাস না হওয়া।

৩। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে কংগ্রেস মুসলমানদের সমর্থন পাওয়ায় কংগ্রেসের আন্দোলন আরও জোরদার হয়।

৪। লক্ষ্ণৌ চুক্তির অনেক নীতি ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে কিছু রদবদল সহকারে রূপদান করা হয়। এই চুক্তির সূত্র ধরে হিন্দু-মুসলিম সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন সংঘটিত হয়।

৫। লক্ষ্ণৌ চুক্তি ৮ বছর স্থায়ী হয়েছিল। এই স্বল্প সময় হলেও হিন্দু-মুসলমানদের ঐক্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

৬। ১৯১৯ সালের মন্টেগু চেমসফোর্ড শাসন সংস্কার আইন এবং ১৯৫৩ সালের ভারত শাসন আইন লক্ষ্ণৌ চুক্তির ওপর ভিত্তি করেই রচিত হয়। খালেকুজ্জামান বলেছেন, "লক্ষ্ণৌ চুক্তি হওয়ার ফলে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।"

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ