- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
অসহযোগ আন্দোলন (Non-co-operation movement)
খিলাফত আন্দোলনের পাশাপাশি ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলনের গতি সঞ্চার হতে থাকে। ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে ন্যায্য বিবেচনা লাভ করার সকল আশা যখন তিরোহিত তখন মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশ শাসন কর্তৃপক্ষের প্রতি ভারতীয়দের সহযোগিতা ও সমর্থন প্রত্যাহার করে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ রাজত্ব বিপন্ন করে তোলার জন্য যে কর্মসূচি গ্রহণ করেন তাই ইতিহাসে অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০) নামে পরিচিত।
অসহযোগ আন্দোলনের কারণ অসহযোগ আন্দোলনের মূল কারণ ছিল-
(ক) রাওলাট আইন ১৯১৮: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন এবং বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য ব্রিটিশ সরকার কতগুলো দমনমূলক আইন চালু করেন। তন্মধ্যে রাওলাট আইন অন্যতম। এই কুখ্যাত আইন দ্বারা সংবাদপত্রের কণ্ঠ রোধ করা হয় এবং যেকোনো লোককে যেকোনো মুহূর্তে কারণ না দর্শিয়ে গ্রেপ্তার বা বিনা বিচারে কারাদণ্ড কিংবা আটক রাখা যেত। এ আইনের সমালোচনা করে গান্ধীজী বলেছেন, "আপীল নেহি, দলিল নেহি, উকিল নেহি"। এ আইনের প্রতিবাদে গান্ধীজীর নেতৃত্বে দেশব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়, যা অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয়।
(খ) জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড: রাওলাট আইন প্রতিবাদের চরম পরিণতি ছিল জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড। পাঞ্জাবে কুখ্যাত রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে জনগণের শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রায় পুলিশ গুলি চালিয়ে কিছু লোককে হত্যা করে। এর প্রতিবাদে ১৩ এপ্রিল, ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে অমৃতসরে জালিয়ানওয়ালাবাগের উদ্যানে ১০,০০০ মানুষ প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়। জেনারেল ডায়ারের নির্দেশে পুলিশ উক্ত সভায় গুলি চালালে ঘটনাস্থলেই ৩৭৯ জন নিহত এবং ১২০০ জন আহত হয়। এই ঘটনায় রবীঠাকুর ব্রিটিশদের দেওয়া 'নাইট' উপাধি বর্জন করেন। এ ঘটনা অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম কারণ।
গ) ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের মন্ট-ফোর্ড সংস্কার আইন অসহযোগ আন্দোলনের আর একটি কারণ ছিল ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে মন্ট-ফোর্ড সংস্কার আইন প্রবর্তন। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে মন্ট-ফোর্ড সংস্কার আইন ভারতবাসীকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। সর্বোপরি ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয় মুসলমানদের খিলাফত আন্দোলন মহাত্মা গান্ধী তথা কংগ্রেসকে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে।
অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচির মধ্যে ছিল- (১) বিদেশি পণ্য বর্জন ও স্বদেশী পণ্য ব্যবহার (২) খেতাব পদবি বর্জন (৩) সরকার মনোনীত ভারতীয় আসনসমূহ থেকে পদত্যাগ (৪) সরকারি কার্যক্রমে অংশগ্রহণে অসম্মতি (৫) স্কুল-কলেজ বর্জন (৬) নতুন কাউন্সিল নির্বাচন ও ভোট দান বর্জন।
বয়কটের নেতিবাচকের পাশাপাশি গান্ধীজী ইতিবাচক স্বদেশীর ওপর জোর দেন। গান্ধীজীর নেতৃত্বে আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল বর্জন থেকে শুরু করে যাবতীয় অফিস-আদালত বর্জনের হিড়িক পড়ে যায়। বিদেশি পণ্য বর্জন ও পুড়িয়ে ফেলা শুরু হয়। দেশব্যাপী এ ধরনের আন্দোলন দেখে শাসকগোষ্ঠী ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ব্যাপক দমন নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে। হাজার হাজার লোক কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়, চলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ।
অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব: ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনের অবসান ঘটে। প্রায় দু'বছর নিরস্ত্র ভারতবাসী অর্থ-সম্পদে ও সামরিক শক্তিতে বলীয়ান এক বিদেশি সরকারের বিরুদ্ধে অসম-সংগ্রামে লিপ্ত থাকে। সংগ্রামী ভারতবাসীর একমাত্র অস্ত্র ছিল উদ্দীপনা। এ সংগ্রামকে গান্ধীজী "আত্মশক্তি" ও বৈষয়িক শক্তির মধ্যে সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছিলেন। এ আন্দোলন স্বরাজ অর্জনে ব্যর্থ হলেও ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়। অসহযোগ আন্দোলনের গুরুত্ব হিসেবে বলা যায়-
প্রথমত, এ আন্দোলনের ফলে ভারতের জনগণের মধ্যে অভূতপূর্ব রাজনৈতিক জাগরণের সৃষ্টি হয়।
দ্বিতীয়ত, উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির গণ্ডি পেরিয়ে এ আন্দোলনে কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।
তৃতীয়ত, এ আন্দোলনের ফলে জাতীয় কংগ্রেসের শক্তি ও প্রচার প্রসারিত হয় এবং কংগ্রেস সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের মর্যাদা লাভ করে। নেহেরু বলেছেন, "অসহযোগ আন্দোলনটি ভারতীয় জাতীয়তাবোধের ক্ষেত্রে নব প্রাণের সঞ্চার করে।"
চতুর্থত, এ আন্দোলনে কংগ্রেস দুটি উপদলে বিভক্ত হয়। 'স্বরাজ পার্টি' নামে পৃথক একটি দলের সৃষ্টি হয়।
পঞ্চমত, হিন্দু-মুসলমান যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল তেমনি শেষ পর্যন্ত ঐক্য বিনষ্টও হয়। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি হয়। ভারতবাসীর প্রতি ইংরেজদের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

