• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল
ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ইংরেজ উপনিবেশিক শাসন: ব্রিটিশ আমল

সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ-১৯৩২ Communal Award-1932

ভারতে সাম্প্রদায়িক সমস্যা নিরসনে ১৯৩০ ও ১৯৩১ সালে লন্ডনে প্রথম ও দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠক সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। দ্বিতীয় গোল টেবিল বৈঠকের সমাপনী ভাষণে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামজে ম্যাকডোনাল্ড সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন, "ভারতের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সাম্প্রদায়িক সমস্যা নিরসনে ভারতীয়রা মতৈক্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হলে ব্রিটিশ সরকার তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে বাধ্য হবেন।" বাস্তবে হয়েছিল তাই। গোল টেবিল বৈঠকে দ্বিতীয় অধিবেশনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। ফলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ সমস্যার যথাযথ সমাধানের জন্য ম্যাকডোনাল্ড-এর ওপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এদিকে ব্রিটিশ প্রতিনিধিরাও সর্বসম্মত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেননি। এমতাবস্থায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্বীয় উদ্যোগে এক রোয়েদাদ প্রদান করেন (১৯৩২ সালের ১৬ আগস্ট)। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাকডোনাল্ডের উক্ত ঘোষণা 'সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ' বা Communal Award (সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা) নামে পরিচিত।

সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদের বিষয়সমূহ

ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িক সমস্যা নিরসনকল্পে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ম্যাকডোনাল্ড যে রোয়েদাদ প্রদান করেছিলেন তার বিষয়সমূহ ছিল নিম্নরূপ-

১। সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ প্রাদেশিক পরিষদে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে আসন বণ্টন করে দেয়।

২। এ রোয়েদাদে পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা মেনে নেয়।

৩। বাংলা ও পাঞ্জাবে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।

৪। সংখ্যালঘিষ্ঠ মুসলিম প্রদেশে সংখ্যা অনুপাতে বেশি আসনদানের নীতি মেনে নেয়। অনুরূপভাবে পাঞ্জাবে শিখদের, সিন্ধু ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে হিন্দুদের এবং বাংলায় ইউরোপীয়দেরকে সেখানকার আইন পরিষদগুলোতে সংখ্যার তুলনায় বেশি আসন দান করা হয়।

৫। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ ছাড়া বাকি সব প্রদেশগুলোর আইনসভায় মহিলাদের জন্য ৩% আসন সংরক্ষণ করা হয়।

৬। এ রোয়েদাদে শ্রমিক, কৃষক, শিল্পপতি, জমিদার ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নির্দিষ্ট আসন ও পৃথক নির্বাচনি তালিকা প্রদান করা হয়।

৭। সাম্প্রদায়িক এ রোয়েদাদে হরিজনদের সংখ্যালঘু হিসেবে ঘোষণা করা হয়। হরিজনদের জন্য পৃথক আসন বরাদ্ধ করা হয়। এ রোয়েদাদে বলা হয়, সাধারণ নির্বাচনে তারা অন্যান্য ভোটারদের মতোই ভোট দিতে পারবে। হরিজনদের জন্য কিছু সংরক্ষিত আসন থাকবে। এই সংরক্ষিত আসনে শুধুমাত্র অনুন্নত শ্রেণির ভোটাররা ভোট দিতে পারবে। অর্থাৎ অনুন্নত শ্রেণি দুবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবে।

৮। এ রোয়েদাদে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশে মুসলমানদের সুযোগ-সুবিধা দান করবে।

সমালোচনা

সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ কঠোরভাবে সমালোচিত হয়। হিন্দুরা একে মুসলমান ঘেঁষা বলে আখ্যায়িত করে। শিখ সম্প্রদায় এর বিরোধিতা করে। হরিজন সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচন প্রদান করায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এছাড়া কেন্দ্রীয় আইনসভার আসনের ব্যাপারে এ রোয়েদাদে কিছু উল্লেখ ছিল না। এও সমালোচনা করা হয় যে, রোয়েদাদে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশে মুসলমানদের এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশে হিন্দুদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদান করেছে।

এ রোয়েদাদের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমান উভয়ই তীব্র প্রতিবাদ জানায়। কংগ্রেস এর নিন্দা করে। কংগ্রেসের মতে, হিন্দু ও শিখদের প্রতি অন্যায় করা হয় এ রোয়েদাদের মাধ্যমে। মুসলমানরা যেসব প্রদেশে সংখ্যালঘু সেসব প্রদেশে মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব সংখ্যানুপাতিক হার অপেক্ষা বেশি দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য প্রদেশে মুসলমানরা যে সুবিধা পায় শিখরা তা পায়নি।

গান্ধীজী উপলব্ধি করেন যে, সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা চালু হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐক্য ভেঙে পড়বে এবং রাজনৈতিক দিক হতে তাদের সর্বনাশ হবে। তিনি ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ আগস্ট এক পত্রের মাধ্যমে ম্যাকডোনাল্ডকে জানান যে, তিনি ও রবিঠাকুর এ রোয়েদাদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান।

পুনা চুক্তি

গান্ধীজী সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদ রহিত করার জন্য কারাগারে আমরণ অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। গান্ধীজীর এ অনশন ধর্মঘটে ভারতের সর্বত্র গভীর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলেও ব্রিটিশ সরকার কোনো গুরুত্ব দেয়নি। গান্ধীজীর অমূল্য জীবন রক্ষায় হিন্দু ও অনুন্নত শ্রেণির নেতৃবৃন্দ জোর তাগিদ অনুভব করে। হরিজনরা তাদের দাবি পরিত্যাগ করতে সম্মত হয়। শেষ পর্যন্ত পুনা শহরে গান্ধীজী ও অনুন্নত শ্রেণির নেতা ড. আম্বেদকারের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এটাই ঐতিহাসিক পুনা চুক্তি (Poona Pact) নামে খ্যাত।

এ চুক্তির মাধ্যমে স্থির হয় যে, হরিজনদের জন্য কিছু সংখ্যক আসন নির্দিষ্ট থাকবে, তবে তারা সাধারণ হিন্দুদের ভোটে নির্বাচিত হবে। এভাবে কংগ্রেস এবং অন্যান্য হিন্দু নেতৃবৃন্দ সাম্প্রদায়িক রোয়েদাদকে 'জাতির রাজনৈতিক সংহতি বিনাশের চক্রান্ত' বলে আখ্যায়িত করে এবং সুতীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ