- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
আইন | Law
সমাজ বা রাষ্ট্রপূর্ব অবস্থায় সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ কতকগুলো বিধি-নিষেধের আলোকে পরিচালিত হতো। আদিম বর্বর কিংবা বন্যদশা থেকে কালক্রমে সভ্যতার সোপান রচনার পশ্চাতে আইন বা বিধি-বিধান এক অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছে। সমাজের মানুষ সামাজিক ও রাজনৈতিক আইন মেনে চলার মাধ্যমে জীবনকে সুন্দর ও সুসংহত করার পক্ষে বদ্ধপরিকর। তাই মানুষের সুশৃঙ্খল জীবনের জন্য আইন অপরিহার্য। প্রতিটি রাষ্ট্রের আইন বিভাগ (Parliament) আইন প্রণয়নের গুরুদায়িত্ব পালন করে থাকে। যেমন- বাংলাদেশের আইনসভা 'জাতীয় সংসদ', ব্রিটেনের আইনসভা 'পার্লামেন্ট' (উচ্চ কক্ষ লর্ড সভা এবং নিম্নকক্ষ কমন্স সভা), ভারতের আইন সভা 'পার্লামেন্ট' (উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভা, নিম্ন কক্ষ লোক সভা), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন সভা 'কংগ্রেস' (উচ্চ কক্ষ সিনেট এবং নিম্ন কক্ষ প্রতিনিধি সভা)। তবে আইন তৈরির পশ্চাতে কতকগুলো Reason বা যুক্তি উৎস হিসেবে কাজ করে এবং আইনের সাথে নৈতিকতার সম্পর্ক রয়েছে, যা এ অধ্যায়ে আলোচিত হয়েছে।
আইনের ধারণা (Concept of law)
'আইন' ফারসি ভাষার একটি অতি পরিচিত শব্দ, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ Law। এটি টিউটনিক শব্দ (Teutonic word) 'Lag' থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। বাংলা ভাষায় Lag-এর অর্থ স্থির, অপরিবর্তনীয় এবং সকল ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য। সে হিসেবে আইন হলো কতকগুলো নিয়ম-কানুনের সমষ্টি যা সর্বক্ষেত্রে প্রয়োগের উপযোগী। আইন মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ মাধ্যম।
আইনের ধারণা সম্পর্কে দার্শনিকগণ নিম্নোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেছেন:
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল (Aristotle)-এর মতে, "যুক্তিসিদ্ধ ইচ্ছার অভিব্যক্তিই হচ্ছে আইন।" ("Law is the passionless reason.")
প্রখ্যাত রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হল্যান্ড (Holland) আইনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, "মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্বভৌম শক্তি কর্তৃক প্রযুক্ত কতকগুলো সাধারণ নিয়মই হলো আইন।" ("Law is a general rule of external human action enforced by a sovereign political authority.")
দার্শনিক থমাস হবক্স (Thomas Hobbes)-এর মতে, "প্রজাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য রাষ্ট্রীয় সার্বভৌম ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির আদেশই আইন।" ("The civil law is the command of him which indowed with supreme power in the state concerning the future actions of his subjects.")
জন অস্টিন (John Austin) আইনের একটি ছোট অথচ সুন্দর সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। তিনি বলেন, "আইন হলো সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের আদেশ।" ("Law is the command of the sovereign.")
অধ্যাপক গেটেল (Prof. R. G. Gettell) বলেন, "রাষ্ট্র যে সমস্ত নিয়ম-কানুন তৈরি করে, অনুমোদন দেয় এবং প্রয়োগ করে সেগুলোই আইনে পরিণত হয়।" (Only those rules which the state creates of which it recognized and enforced become laws.)
আইনের সুন্দর ও জনপ্রিয় ধারণা প্রদান করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন (Woodrow Wilson)। তিনি বলেন, "আইন হলো সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত ধ্যান-ধারণা ও অভ্যাসের সেই অংশ যা রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত বিধিতে পরিণত হয়েছে, নিয়মিতভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে এবং যার পশ্চাতে রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের সমর্থন রয়েছে।" ("Law is that portion of the estableshed thought and habit which has gained distinct and formal recognition in the shape of uniform rules hacked by the authority and power of the government.")
উপরে প্রদত্ত ধারণাগুলো বিশ্লেষণ করলে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত, রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত বিধি-বিধানই হলো আইন। আইন কতগুলো সুনির্দিষ্ট বিধিমালা যার আলোকে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান সুচারুরূপে পরিচালিত হয়। আইনের মাধ্যমে ব্যক্তিজীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবন সুন্দর ও সুসংহত হয়।
আইনের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য (Nature and features of law)
১. সামাজিক সংস্থায় প্রয়োগ: আইন সমাজ ও মানবীয় সংস্থায় প্রযুক্ত হয়। অতএব, উন্মাদ, শিশু কিংবা সন্ন্যাসীর কাছে আইন অর্থহীন। আইন মানবিক সংস্থায় প্রয়োগ ও কার্যকর হয়ে থাকে।
২. সর্বজনীনতা: আইন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের ওপর সমভাবে প্রযোজ্য হয়। এক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য করা হয় না। আইনের চোখে সকলেই সমান।
৩. বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ আইন মানুষের বাহ্যিক আচার-আচরণ ও বাস্তব কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা, অনুভূতির সাথে আইনের কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই।
৪. সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টতা আইনের ধারাসমূহ সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত থাকে। তাই আইন সকলের নিকট বোধগম্য হয়। আইনের ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যার প্রয়োজন হলে উচ্চ আদালত সে ব্যাপারে ব্যাখ্যা প্রদান করে।
৫. রাষ্ট্রীয় অনুমোদন ও সামাজিক স্বীকৃতি: আইন রাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত ও সমাজ কর্তৃক স্বীকৃত। রাষ্ট্রের অনুমোদন ও সমাজের সম্মতি ছাড়া কোনো বিধি-বিধান আইনে পরিণত হতে পারে না।
৬. বাধ্যবাধকতা: বাধ্যবাধকতা আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। অর্থাৎ, আইন মেনে চলা রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক। আইন ভঙ্গ করলে তাকে শাস্তি ভোগ করতে হয়।
৭. পরিবর্তনশীলতা: আইন পরিবর্তনশীল। সময় ও জনগণের চাহিদা মোতাবেক অনেক পুরনো আইন বাতিল, নতুন আইন প্রণয়ন করা হতে পারে। অনেক সময় প্রচলিত আইনসমূহের সংশোধন, পরিবর্তন করা হয় সময়ের প্রয়োজনে, জনগণের কল্যাণে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ