- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
আইনের শ্রেণিবিভাগ | Classification of Law
ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানাদি সব কিছুই আইনের অধীন। আর তাই ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, ব্যক্তির সাথে রাষ্ট্রের এবং রাষ্ট্রের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্কের ভিত্তিতে ত্তিতে আইনজ্ঞ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং সমাজবিজ্ঞানিগণ আইনের শ্রেণিবিভাগ করেছেন।
নিম্নে আইনের প্রকারভেদ সম্পর্কে সবিস্তারে আলোকপাত করা হলো:
আইন প্রধানত তিন প্রকারের। যথা:
(ক) বেসরকারি আইন (Private law)
(খ) সরকারি আইন (Public law) এবং
(গ) আন্তর্জাতিক আইন (International law)
(ক) বেসরকারি আইন (Private law): সমাজে ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক রক্ষার জন্য যে সকল আইন প্রয়োগ করা হয় এবং মান্য করা হয় তাকে বেসরকারি আইন বলে। বেসরকারি আইনের প্রয়োগ ও কার্যকর করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করে। চুক্তি, দলিল, দেওয়ানী বিধি এই আইনের অন্তর্ভুক্ত।
(খ) সরকারি আইন (Public law): রাষ্ট্রের সাথে ব্যক্তির সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে যে আইন প্রবর্তিত ও প্রয়োগ করা হয় তাকে সরকারি আইন বলে। সরকারি আইনের দ্বারাই রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারিত হয়, রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগঠনের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন, কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন, নাগরিকদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা ইত্যাদি হয়ে থাকে। এই
আইন আবার চার প্রকার যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
১. সাংবিধানিক আইন (Constitutional law) যে সমস্ত বিধানাবলি লিখিত কিংবা অলিখিত অবস্থায় রাষ্ট্রের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয় তাই সাংবিধানিক আইন। সাংবিধানিক আইনকে মৌলিক আইনও বলা হয়। এই আইনের দ্বারাই রাষ্ট্রের তিনটি অপরিহার্য অঙ্গ-সংগঠন তথা- আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ ও বিচার বিভাগের গঠন ও কার্যাবলি নির্ধারিত হয়। শাসক ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়, আঞ্চলিক ভিত্তিতে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন ও সরকারের স্বরূপ নির্ধারিত হয় এই আইনের মাধ্যমে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উইলোবী বলেন, "সাংবিধানিক আইন সেই সকল বিধান যা সরকারের স্বরূপ এবং সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষমতা বণ্টন ও নিয়ন্ত্রণের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।"
২. প্রশাসনিক আইন (Administrative law): ব্রিটিশ শাসনতন্ত্র বিশেষজ্ঞ আইভর জেনিংস (Ivor Jennings) বলেন, "রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা সংক্রান্ত আইনকে প্রশাসনিক আইন বলে। এই আইনের মাধ্যমে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের সংগঠন, ক্ষমতা ও দায়িত্ব নিরূপিত হয়।" আবার অধ্যাপক রবসন মনে করেন, "লোকপ্রশাসন সংক্রান্ত আইনই প্রশাসনিক আইন।" কর্মচারী প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বসাধারণের কল্যাণমূলক কার্যাবলি পরিচালনার ক্ষেত্রে এই আইন প্রযুক্ত হয়।
৩. ফৌজদারি আইন (Criminal law): আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকল্পে রাষ্ট্র যে সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে সেগুলোর বিরোধিতা করা বা অমান্য করাকে রাষ্ট্র অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে। এহেন অপরাধের শাস্তি বিধান এবং কারও অধিকার ভঙ্গ করা থেকে বিরত রাখার জন্য রাষ্ট্র যে সমস্ত আইন প্রয়োগ ও বলবৎ করে, তাই ফৌজদারি আইন।
৪. ফৌজদারি আইন সংক্রান্ত বিধি (Criminal procedure): রাষ্ট্রের অধিকারের বিরুদ্ধে অথবা আইন-শৃঙ্খলার পরিপন্থী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কোনো অপরাধীকে যে পদ্ধতিতে শাস্তি প্রদান করা হয়, তাই ফৌজদারি আইন সংক্রান্ত বিধি।
(গ) আন্তর্জাতিক আইন (International law): যে সকল আইনের দ্বারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা হয় তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ওপেনহেইম-এর মতে, "আন্তর্জাতিক আইন হলো সেই সব নিয়ম-কানুন ও চুক্তির সমষ্টি, যার আইনগত বাধ্যবাধকতা সভ্য রাষ্ট্রসমূহ পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেনে চলে।"
আইন প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষের প্রকৃতির ভিত্তিতে আইনকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:
১. সংবিধি (Statute): আইনসভা কর্তৃক নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে সকল আইন প্রণীত হয় সেগুলোকে সংবিধি বলে। বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রেই সংবিধির উপস্থিতি লক্ষণীয়।
২. অধ্যাদেশ (Ordinance): শাসন বিভাগের প্রধান বা রাষ্ট্রপ্রধানের জারিকৃত আদেশকে অধ্যাদেশ বলে। সাধারণত আইন সভা অধিবেশনরত না থাকলে বা ভেঙে গেলে রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক অধ্যাদেশ জারি হয়ে থাকে। পরবর্তীতে আইনসভা কর্তৃক অধ্যাদেশগুলো অনুমোদিত হলে তা আইনে পরিণত হয়।
৩. সাধারণ আইন (Common Law): সমাজে বহুল প্রচলিত প্রথা, রীতিনীতি, অভ্যাস, বোঝাপড়া, কলাকৌশল ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে যে সমস্ত বিধি-বিধান গড়ে ওঠে তাকে সাধারণ আইন বলে। সাধারণ আইনগুলো সমাজের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে মেনে চলে। সাধারণ আইন আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য নয়। ব্রিটিশ শাসনব্যবস্থায় অধিকাংশ আইনই এভাবে প্রথা ও রীতিনীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।
৪. সামরিক আইন (Martial Law): নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণকারী সামরিক জান্তা কর্তৃক জারিকৃত বিধান অথবা সাংবিধানিক উপায়ে রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক জারিকৃত সামরিক শাসনের বিধানকে সামরিক আইন বলে। সামরিক আইন কোনো স্থায়ী বিধান নয়। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসলে সামরিক আইনের বিলুপ্তি ঘটে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ