• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য

স্বাধীনতায় সাম্যের গুরুত্ব | Importance of Equality in Liberty

স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যকার সম্পর্কের আলোচনা থেকে একথা সুস্পষ্ট যে, স্বাধীনতার উপভোগকে অর্থবহ করে তোলার জন্য সাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সাম্যের উপস্থিতি ছাড়া স্বাধীনতা উপলব্ধি অসম্ভব। দার্শনিক রুশো মনে করেন, সাম্য ব্যতীত স্বাধীনতা থাকতে পারে না (Liberty can not exist without equality)। স্বাধীনতার আদর্শকে বাস্তবে রূপদানের জন্য সাম্যের পরিবেশ প্রয়োজন। আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সমান অধিকার স্বীকৃত হলে এবং অধিকার উপভোগের ক্ষেত্রে সকল প্রকার বৈষম্য দূর হলে নাগরিকদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য অধিকার উপভোগ করা সম্ভব হবে।

ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষিত না হলে স্বাধীনতা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। সাম্য ব্যক্তি স্বাধীনতার ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করে। সমাজে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য-অসাম্য দেখা দিলে স্বাধীনতা বিপন্ন হতে বাধ্য। সাম্য এ অবস্থার অবসান ঘটিয়ে সামাজিক সমতা রক্ষা করে। তাই ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষায় সাম্যের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রসঙ্গে আর, এইচ, টনি (R.H. Taruney) বলেন, "স্বাধীনতা বলতে যদি মানবতার নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রসারণকে বোঝায়, তাহলে সে স্বাধীনতা শুধু সাম্যভিত্তিক সমাজেই সম্ভব।"

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা তথা সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে ব্যক্তির অর্থনৈতিক জীবনকে সমৃদ্ধ করার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার স্বাদ সবাই পেতে পারে। আর এ জন্য অর্থনৈতিক সাম্য রক্ষা করা জরুরি; যা স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলে। এ প্রসঙ্গে কোল (Cole) যথার্থই বলেছেন, "অর্থনৈতিক সাম্য ব্যতীত রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন।" ("Political liberty in the absence of economic equality is held to be a mere myth")

এছাড়া সামাজিক বৈষম্য বিলোপ, মানুষের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন রক্ষা, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সাম্যের ভূমিকা স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখে।

তাই আমরা বলতে পারি যে স্বাধীনতার জন্য মানুষের এত সংগ্রাম, বিপ্লব, নিরন্তর প্রচেষ্টা সেই স্বাধীনতা রক্ষা, স্বাধীনতার সুফল সবার কাছে পৌছানোর জন্য সাম্যের ভূমিকা অপরিসীম। স্বাধীনতা ও সাম্যের সম্পর্ক গভীর, পরিপূরকের মতো অবিচ্ছিন্ন। অধ্যাপক পোলার্ড (Prof. Polord) তাই বলেন, "স্বাধীনতার সমস্যার একটিমাত্র সমাধান রয়েছে, আর তা সাম্যের মাঝেই নিহিত।"

সুতরাং সাম্য স্বাধীনতার পরিপন্থী নয় বরং স্বাধীনতা অর্থবহ হয়ে ওঠে কেবলমাত্র সাম্যভিত্তিক সমাজে। কাজেই স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় সাম্যের গুরুত্ব অত্যধিক। ১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রে এবং ১৭৮৯ সালের ঐতিহাসিক 'ফরাসি বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে' আদর্শ হিসেবে সাম্য ও স্বাধীনতার সমন্বিত রূপের বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

সর্বশেষ আমরা বলতে পারি, স্বাধীনতা ও সাম্যের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর এবং একে অপরের পরিপূবক হিসেবে কাজ করে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে হলে অবশ্যই সাম্য থাকতে হবে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ