• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য

স্বাধীনতা ও সাম্যের সম্পর্ক সাম্যের সম্পর্ক | Relationship Between Liberty and Equality

স্বাধীনতা ও সাম্য সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী অভিমত প্রচলিত আছে। একদল মনে করেন উভয়ের মধ্যে বৈরী সম্পর্ক বিদ্যমান। তাদের মধ্যে লর্ড অ্যাক্টন ও ভি টকভিল (Lord Acton ও V. Tocqueville)-এর নাম উল্লেখযোগ্য।

কিন্তু ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ফরাসি বিপ্লবের মূলমন্ত্র সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা। এ বিষয়গুলোর মধ্যে পারস্পরিক পরিপূরক সম্পর্কের কথা নিহিত আছে। এমনকি উদারনৈতিক গণতন্ত্রের প্রবক্তাগণও সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যকার বিরোধিতাকে অস্বীকার করেছেন। সুতরাং উভয়ের মধ্যে বিরোধিতা নয়; বরং গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। এ দুয়ের মধ্যে সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে নিম্নে আলোকপাত করা হলো:

১. সাম্যই স্বাধীনতার ভিত্তি: রুশো, লাস্কি, মেইটল্যান্ড প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন যে, "সাম্য ও স্বাধীনতা পরস্পরের পরিপূরক ধারণা। সাম্যের অস্তিত্ব ব্যতিরেকে স্বাধীনতার উপলব্ধি অসম্ভব।" রুশো বলেন, "সাম্য ছাড়া স্বাধীনতা টিকে থাকতে পারে না।" ("Liberty cannot exist without equality.") স্বাধীনতার আদর্শকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য সাম্যের পরিবেশ প্রয়োজন। আইনের মাধ্যমে সমান অধিকার স্বীকৃত হলে এবং অধিকার উপভোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর হলে নাগরিকদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অন্যান্য অধিকার উপভোগ সম্ভবপর হয়ে ওঠে। বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থায় স্বাধীনতা অর্থহীন।

২. একে অপরের পরিপূরক অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাম্য ও স্বাধীনতাকে অভিন্নরূপে দেখেছেন। যেমন- অধ্যাপক লাস্কি স্বাধীনতা সম্পর্কে বলেছেন, "এটা এমন এক পরিবেশ যে পরিবেশে মানুষ তার ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন করতে পারে। আবার সাম্যও এক ধরনের পরিবেশ যেখানে মানুষ তার ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশের সমান সুযোগ-সুবিধা লাভকরে।" সুতরাং সাম্য ও স্বাধীনতা একে অপরের পরিপূরক।

৩. সাম্য স্বাধীনতার পূর্বশর্ত: রাষ্ট্রবিজ্ঞানী টনি (Taruney)-এর মতানুসারে স্বাধীনতা বলতে যদি মানবতার নিরবচ্ছিন্ন প্রসার বোঝায়, তাহলে সেই স্বাধীনতা কেবল সাম্যভিত্তিক সমাজেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তিনি বলেন, সাম্য স্বাধীনতার পরিপন্থী নয়, স্বাধীনতার স্বার্থে একান্ত প্রয়োজন। রাষ্ট্র একদিকে যেমন আইনের মাধ্যমে স্বাধীনতা সৃষ্টি ও সংরক্ষণ করে তেমনি স্বাধীনতা সংরক্ষণের স্বার্থে আইনের মাধ্যমে সাম্যভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করে, যেখানে সকলের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হয়।

৪. সাম্য ও স্বাধীনতা অধিকারের সংরক্ষক স্বাধীনতা হলো নাগরিক অধিকার সংরক্ষণের একটি পূর্বশত। আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান। আইনের মাধ্যমে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তাছাড়া সাম্য জাতি, ধর্ম, বর্ণ ভুলে সমান অধিকার ভোগের সুযোগ করে দেয়।

৫. অর্থনৈতিক সাম্য: মাকর্সবাদী দার্শনিকগণ সাম্য ও স্বাধীনতার সম্পর্ককে ইতিবাচক হিসেবে দেখেছেন। তারা অর্থনৈতিক সাম্যকে স্বাধীনতার পূর্বশর্ত হিসেবে গণ্য করেছেন। এ মতানুসারে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় প্রকৃত অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যকার সম্পর্ক অতি নিবিড়। যারা মনে করেন যে, উভয়ের উভয়ে মধ্যে বৈরী ও তিক্ত সম্পর্ক বিদ্যমান, তারা সাম্যের অর্থ সম্পর্কে সম্যক অবহিত নন। এটা তাদের সাম্য ও স্বাধীনতা সম্পর্কিত ভ্রান্ত ধারণাপ্রসূত সিদ্ধান্ত। বস্তুত, সাম্য ও স্বাধীনতার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ভিত্তিতেই সমাজে সমতা বিরাজ করে এবং স্বাধীনতা উপভোগ সহজতর হয়। সাম্য ভিত্তিক সমাজেই স্বাধীনতা অর্থপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ