- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক | Relationship Between Law and Liberty
স্বাধীনতা ও আইনের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের পরস্পর বিরোধী মতামত লক্ষ করা যায়। অধ্যাপক ডাইসি, মিল, হার্বার্ট স্পেন্সার (Prof. Dicey, J. S. Mill, Herbert Spencer) প্রমুখ দার্শনিক মনে করেন, আইন ও স্বাধীনতা পরস্পর বিরোধী। তাদের মতানুসারে ব্যক্তিগত কার্যকলাপের ওপর রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব বা আইনের অধিক নিয়ন্ত্রণ ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরোধী। আবার একদল দার্শনিক মনে করেন আইন ও স্বাধীনতার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। কেউ কেউ আবার আইন স্বাধীনতার পূর্বশর্ত বলে মন্তব্য করেছেন। জন লক (John Locke) বলেন, "আইন স্বাধীনতাকে খর্ব করে এমন ধারণা ভুল; বরং আইন স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ ও সম্প্রসারিত করে।" নিম্নে আইন ও স্বাধীনতার সম্পর্ক নিয়ে আলোকপাত করা হলো:
১. আইন স্বাধীনতার রক্ষক বাস্তবতার কষ্টিপাথরে যাচাই করলে দেখা যায় যে, আইনের উপস্থিতিতেই কেবল স্বাধীনতা উপভোগ করা যায়। সুতরাং আইন স্বাধীনতার রক্ষক। কেননা, আইন না থাকলে স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতায় পরিণত হবে। অর্থাৎ "Might is right" এ নীতির বিজয় হবে। আইনের মাধ্যমে স্বাধীনতাকে বলবৎ করতে না পারলে কিংবা স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের কোনো প্রতিকার করতে না পারলে স্বাধীনতার কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। জন লকের মতে, "যেখানে আইন থাকে না, সেখানে স্বাধীনতা থাকতে পারে না।" (Where there is no law, there is no liberty.) বস্তুত, আইন ও আদালত আছে বলেই স্বাধীনতার ওপর কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা ব্যক্তিমহল হস্তক্ষেপের সাহস পায় না।
২. আইন স্বাধীনতার শর্ত: কোনো কোনো চিন্তাবিদ আইনকে স্বাধীনতার পূর্বশর্ত (Precondition) বলে গণ্য করেছেন। তাদের মতে, এক একটি আইন এক একটি স্বাধীনতা। আইনের মাধ্যমেই স্বাধীনতা সুসংঘবদ্ধ রূপ লাভ করে। আইন স্বাধীনতাকে প্রতিপালন করে সবল ও সুষ্ঠু রূপ দান করে। সুতরাং স্বাধীনতা আইনের ওপর প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। আইনের নিয়ন্ত্রণ ব্যতিরেকে স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতায় পরিণত হয়। আর আইনের অধীনে স্বাধীনতা বিকশিত হয়ে ওঠে।
উইলোবী (W. W. Willoughby) বলেন, "নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই স্বাধীনতা রক্ষা পায়।"
৩. আইন স্বাধীনতার সহায়ক আইন স্বাধীনতাকে রক্ষা করে বলে ব্যক্তির আত্মোপলব্ধি ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ সম্ভব হয়। আইন স্বাধীনতার দ্বারকে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। এ সম্পর্কে রিচি (Richi) বলেন, "আত্মবিকাশের জন্য যে সকল সুযোগ-সুবিধা স্বাধীনতার স্বরূপে প্রকাশিত হয়, সেগুলো আইনের দ্বারা সৃষ্ট।"
৪. আইন স্বাধীনতাকে সম্প্রসারিত করে আইন স্বাধীনতার ক্ষেত্রকে প্রসারিত করে। যেমন- শ্রমিক কল্যাণের জন্য যেসব আইন প্রণীত হয়েছে এর দ্বারা মালিক শ্রেণির স্বেচ্ছাচারিতা সংকুচিত হয়েছে। আবার, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের প্রতিনিধিপুষ্ট আইনসভার মাধ্যমে যে আইন প্রণীত হয় তা জনগণের স্বাধীনতাকে প্রসারিত করে। রুশো বলেন, "সুনির্দিষ্ট আইনের প্রতি আনুগত্যই স্বাধীনতা।" সুতরাং আইনের নিয়ন্ত্রণ অর্থ স্বাধীনতা নয়; বরং রাষ্ট্র কর্তৃক আইনের দ্বারা স্বীকৃত-সংরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত পরস্পরের আপেক্ষিক স্বাধীনতাই প্রকৃত স্বাধীনতা।
৫. আইন স্বাধীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করে একদিকে আইনের যৌক্তিক নিয়ন্ত্রণে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে; অন্যদিকে স্বাধীনতার পূর্ণ বিকাশের সাথে সাথে ব্যক্তিত্বের পরিপূর্ণ বিকাশ সহজতর হয়। আইনহীন সমাজে স্বাধীনতা স্বেচ্ছাচারিতা আর অরাজকতার নামান্তর। রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে ব্যক্তিগত কাজের সীমা নির্দেশ করে এবং স্বাধীনতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। অতএব, আইন ও স্বাধীনতার মধ্যে অত্যন্ত নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান।
৬. আইনের দ্বারা স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আইনের দ্বারা স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত করা হয়। স্বাধীনতা অনিয়ন্ত্রিত হলে সামাজিক নৈরাজ্য দেখা দিতে পারে। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী উইলোবী বলেন, "নিয়ন্ত্রণ আছে বলেই স্বাধীনতার অস্তিত্ব সম্ভব।
৭. পরস্পর পরিপূরক আইন ও স্বাধীনতা পরস্পরের পরিপূরক। আইন না থাকলে যেমন স্বাধীনতার অস্তিত্ব থাকে না, তেমনি স্বাধীনতা না থাকলে আইনের অস্তিত্ব থাকে না। আর স্বাধীনতা না থাকলে আইনের প্রয়োজনও হয় না।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, আইন ও স্বাধীনতার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। আইন যদি জনগণের মতভিত্তিক হয় এবং স্বাধীনতা যদি জনকল্যাণমূলক সুবিধা উপভোগ করা বোঝায় তা হলে তারা পরস্পর বিরোধী হতে পারে না। বরং একে অপরের সহায়ক সমর্থক এবং পরিপূরক হতে বাধ্য।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ