- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব | Importance of Democratic Values in Formation of Good Governance
সরকারের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে শাসনকার্য পরিচালনাই হলো সুশাসন। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য। আর গণতান্ত্রিক শাসনের অন্যতম শর্ত হলো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ।
অপরদিকে, স্বাধীনতা, সাম্য, ভ্রাতৃত্ববোধ, ঐকমত্য, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শিষ্টাচার ইত্যাদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অন্তর্ভুক্ত। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সফলতা নির্ভর করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর।
সুশাসন হলো উত্তমরূপে শাসনকার্য পরিচালনা। সংবিধান অনুযায়ী শাসনকার্য পরিচালনা, সংবিধানের সর্বোচ্চ প্রাধান্য, আইনের শাসন, সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, সরকারি তথ্যের অবাধ প্রবাহ, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার সংরক্ষণ, সম্পদের সুষম বণ্টন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ ইত্যাদি বিষয় সুশাসনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। নাগরিক জীবনের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিজ দায়িত্ব পালন, অন্যের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেওয়া, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, আইন মেনে চলা প্রভৃতি বিষয়গুলো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেরই অংশ। আর এসব বিষয় নিশ্চিত হলে সমাজে সুশাসন মাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সহজ হয়।
নিম্নে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
১. আইনের শাসন: আইনের শাসন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অন্যতম উপাদান। আইনের শাসন রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করে। যেখানে আইনের শাসন নেই, সেখানে সুশাসন থাকতে পারে না।
২. জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রশাসন ব্যবস্থায় জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। যে সরকার ব্যবস্থা বা প্রশাসনে জবাবদিহিতার নীতি কার্যকর হয়, স্বচ্ছতার নীতি অনুসরণ করা হয়, সেখানে ততো বেশি সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
৩. দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সরকারি কর্মকর্তা ও প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখে। দায়িত্বশীলতার নীতি ছাড়া কাউকে তার কাজের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায় না। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দায়িত্বশীলতার নীতি প্রতিষ্ঠিত করে সুশাসনের পথ প্রশস্ত করে।
৪. পরমতসহিষ্ণুতার পরিবেশ তৈরি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পরমতসহিষ্ণুতা ও সহনশীলতার নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত গ্রহণের পাশাপাশি সংখ্যালঘিষ্ঠের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনই পরমতসহিষ্ণুতা। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ পরমতসহিষ্ণু হতে সাহায্য করে বলেই সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়।
৫. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নাগরিকদের অধিকার রক্ষায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সুশাসনের অন্যতম উপাদান। তাই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষিত হলে সুশাসন নিশ্চিত হয়।
৬. জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। রাজনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম মাপকাঠি। অন্যদিকে, সুশাসন এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
৭. গণতন্ত্রের চর্চা: গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দীর্ঘদিনের চর্চার বিষয়। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা ও লালন ছাড়া গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করতে পারে না। তাই গণতন্ত্রের সফলতার জন্য গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা জরুরি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত বা বিকশিত হলে সুশাসনের ভিত্তি শক্তিশালী হয়।
৮. মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিত হয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জনগণের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এর ফলে সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
৯. পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নাগরিকদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহযোগিতার সম্পর্ক তৈরি করে। সরকারি ও বিরোধী দলের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সমঝোতা ও সহযোগিতার মনোভাব সমাজে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে।
১০. দেশপ্রেম জাগ্রত করে দেশের জনগণকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। দেশের জনগণ দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হলে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়। ফলে সুশাসন সহজেই প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
সুতরাং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সফলতা যেমন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর নির্ভরশীল, তেমনি সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের 'ওপর নির্ভরশীল। রাষ্ট্রের জনগণের চিন্তা-চেতনায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগ্রত থাকলেই কেবল সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে, জনগণের পক্ষে শাসনের সুফল লাভ সম্ভব হবে এবং রাষ্ট্র তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে সক্ষম হবে। আর এ কারণেই বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ