- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
মানুষ কেন আইন মেনে চলে | Why People Obey Law
কোন কোন যুক্তির নিরিখে সামাজিক মানুষ আইনকে মেনে চলে বা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে নানা মত রয়েছে। এসব মতামত বিশ্লেষণ করে মানুষ যেসব কারণে আইন মেনে চলে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. ধর্মীয়বোধ: প্রাচীনকালে শাসককে ঈশ্বরের প্রতিনিধি মনে করা হতো। সুতরাং রাজা বা সম্রাটের আদেশ মেনে চলাকে মানুষ ধর্মীয় কর্তব্য বলে মনে করত। তাই জনগণ আইন মেনে চলত।
২. সম্মতি: সামাজিক চুক্তিবাদী দার্শনিক যেমন- হবস, লক, রুশোর মতে, "মানুষের সম্মতিই আইন মেনে চলার কারণ।" জনগণের সম্মতি বা রায় নিয়েই রাষ্ট্রীয় আইন ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার আইন প্রণয়ন করে বলে জনগণ আইন মেনে চলে।
৩. শাস্তির ভয়: টমাস হবস, বেস্থাম, অস্টিন মনে করেন, শাস্তির ভয়ে মানুষ আইন মেনে চলে। প্রতিটি রাষ্ট্রে আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের বিধান রয়েছে। আইন ভঙ্গের পরিণতি সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা মানুষকে আইন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করে।
৪. গুরুত্ব ও উপযোগিতা আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ আইন মেনে চলার কারণ হিসেবে আইনের প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আইন ছাড়া সুশৃঙ্খল জীবনযাপন সম্ভব নয়। আইন না মানলে সমাজে নৈরাজ্য দেখা দিবে। মানুষের জীবন হয়ে ওঠবে দুর্বিষহ। তাই সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপনের জন্য মানুষ আইন মেনে চলে।
৫. নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষার জন্য আইন সমাজবদ্ধ মানুষের জীবনে নিরাপত্তা প্রদান করে। অধিকারকে করে সুসংহত। আইনের মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়। আর্নেস্ট বার্কার তাই বলেন, মানুষ আইন মেনে চলে কারণ আইন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে।
৬. সামাজিক কল্যাণ সমাজের মানুষ সম্যকভাবেই উপলব্ধি করতে পারে যে, সমাজের কল্যাণ বিধান করাই হলো আইনের লক্ষ্য। তাছাড়া আইনের ভিত্তি হলো 'জনমত'। আবার, টি. এইচ. গ্রীন (T.H. Green) বলেন, "Will, not force, is the basis of the state." অর্থাৎ শক্তি নয়, ইচ্ছাই রাষ্ট্রের ভিত্তি। সুতরাং রাষ্ট্র সৃষ্ট আইনের বিরুদ্ধাচরণ করার অর্থ হলো নিজেদের বিরোধিতা করা। এ সত্যানুসন্ধান ও সত্যোপলব্ধি মানুষকে স্বাভাবিকভাবে আইন মেনে চলতে উৎসাহ যোগায়।
৭. শক্তি প্রয়োগ: মার্কসবাদী দার্শনিকদের মতে, আইন সমাজে একটি বিশেষ উৎপাদন সম্পর্ক (Relation of production) টিকিয়ে রাখে। সমাজের উৎপাদন যন্ত্র যখন যে শ্রেণির কর্তৃত্বাধীনে থাকে তখন আইন সেই শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে। আইনের পশ্চাতে আছে প্রভাবশালী শ্রেণির বল প্রয়োগকারী যন্ত্র তথা রাষ্ট্র। রাষ্ট্র বল প্রয়োগ করে থাকে সশস্ত্র বাহিনী ও বিচার বিভাগের মাধ্যমে। সুতরাং, রাষ্ট্র বল প্রয়োগ করে জনগণকে আইন মানতে বাধ্য করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, সমাজ ও ব্যক্তিজীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে গড়ে তুলতে আইনের কোনো বিকল্প নেই। মানুষের আচার-আচরণের প্রতি সহানুভূতিবশত একে অপরকে অনুসরণ করে আইন মেনে চলে। সেই সাথে আইন ভঙ্গের কারণে রাষ্ট্র যে শাস্তির বিধান করে এ সত্য উপলব্ধির কারণে মানুষ স্বভাবজাতভাবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ