- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
স্বাধীনতার শ্রেণিবিভাগ | Classification of Liberty
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা নাগরিকদের স্বাধীনতা সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে সাত প্রকার স্বাধীনতার উল্লেখ করেছেন যা নিম্নে ছকের সাহায্যে দেখানো হলো:
১. প্রাকৃতিক স্বাধীনতা (Natural liberty): সামাজিক চুক্তিবাদী দার্শনিক হবস, লক এবং রুশো বিশ্বাস করতেন, রাষ্ট্র পূর্বাবস্থায় প্রকৃতির রাজ্যে (State of Nature) মানুষ কতকগুলো সুযোগ-সুবিধা বা স্বাধীনতা ভোগ করত। কিন্তু স্বাধীনতার এরকম ধারণা অলীক, অসার ও অবাস্তব বলেই প্রতিপন্ন হয়। কারণ অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন, রাষ্ট্র এবং আইনের অনুপস্থিতিতে স্বাধীনতার অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। এ প্রসঙ্গে জন লক (John Locke) বলেন, "Where there is no law, there is no freedom." অর্থাৎ, যেখানে আইন নেই, সেখানে স্বাধীনতার অস্তিত্ব থাকতে পারে না। দাশর্নিক রুশো তাঁর বক্তব্যে তাই স্বাধীনতাকে চমৎকারভাবে বর্ণনা করে বলেছেন, "মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মায়, কিন্তু সর্বত্রই যে শৃঙ্খলাবদ্ধ।" ("Man is born free but everywhere he is in chain.")
২. আইনগত স্বাধীনতা (Legal liberty): রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত, সংরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতাকে আইনগত স্বাধীনতা বলে। রাষ্ট্রের সংবিধান ও আইনে এ ধরনের স্বাধীনতার কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। ব্যক্তি কল্যাণের স্বার্থে রাষ্ট্র আইনের মাধ্যমে আইনগত স্বাধীনতা প্রদান করে থাকে। আইনগত স্বাধীনতা সুনির্দিষ্ট এবং আইন দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়।
৩. সামাজিক স্বাধীনতা (Civil liberty): সামাজিক স্বাধীনতা বলতে অনেকেই Rule of Law-তথা আইনের শাসনকে বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ মানুষ সমাজের সুসভ্য সদস্য হিসেবে যেসব সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন অনুভব করে সেগুলোকে সামাজিক স্বাধীনতা বলে। যেমন- জীবন রক্ষার স্বাধীনতা, সম্পত্তি রক্ষার স্বাধীনতা, ধর্মচর্চার স্বাধীনতা ও অবাধে চলাফেরা করার স্বাধীনতা। বস্তুত, সামাজিক ধারণা থেকে সামাজিক স্বাধীনতা উদ্ভূত এবং এ স্বাধীনতা এমনভাবে ভোগ করতে হয় যাতে অন্যের অনুরূপ স্বাধীনতা ক্ষুন্ন না হয়।
৪. রাজনৈতিক স্বাধীনতা (Political liberty): রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যক্তির অংশগ্রহণের ক্ষমতা বা পরিবেশকে বোঝায়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী লাস্কিও রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডে ব্যক্তির অংশগ্রহণকে বুঝিয়েছেন। আবার, অধ্যাপক লীকক (Prof. Leacock)-এর মতে, "Political liberty as Constitutional liberty." গিলক্রিস্টসহ অনেকেই রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে গণতন্ত্রের সমার্থবোধক বলে উল্লেখ করেছেন। ভোটাধিকার, সরকারের সমালোচনা করা, সরকারি চাকরি লাভ প্রভৃতি রাজনৈতিক স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত।
৫. ব্যক্তিগত স্বাধীনতা (Personal liberty): ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হলো সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির এমন স্বাধীনতা যেগুলো ব্যক্তির একান্তই নিজের, যার প্রতি অন্য কেউ কোনোরূপ হস্তক্ষেপ (interfere) করতে পারে না। যেমন- খাদ্য, বস্ত্র, উন্নত জীবনযাপন, বিবাহ, সন্তান-সন্ততির শিক্ষা ইত্যাদি এ শ্রেণির পর্যায়ভুক্ত।
৬. অর্থনৈতিক স্বাধীনতা (Economic liberty): অর্থনৈতিক কার্যাদির ব্যাপারে জনগণের স্বাধীনতাকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বুঝানো হয়। অধ্যাপক এইচ. জে. লাস্কি (H. J. Laski) তাঁর 'A Grammar of Politics' গ্রন্থে বলেন, "অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিনিয়ত বেকারত্বের আশংকা ও আগামীকালের অভাব থেকে মুক্তি এবং দৈনন্দিন জীবিকার্জনের সুযোগ-সুবিধাকে বোঝায়।" ("By economic liberty, I mean, security and the opportunity to find reasonable significance in the earning of one's daily bread, against the wants tomorrow.")
৭. জাতীয় স্বাধীনতা (National liberty): বৈদেশিক অধীনতা থেকে মুক্তি লাভ করে যখন একটি জাতি পূর্ণ সার্বভৌমত্ব লাভ করে তখন তাকে জাতীয় স্বাধীনতা বলে। অর্থাৎ কোনো জাতি বা দেশ যখন অন্য কোনো দেশের পরাধীনতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটাতে পারে তখনই সে জাতি বা রাষ্ট্রকে স্বাধীন বলা যায়। জাতীয় স্বাধীনতা সব ধরনের স্বাধীনতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
তবে এসব স্বাধীনতা উপভোগের জন্য অবশ্যই অনুকূল পরিবেশ দরকার। সমাজে যদি বিশৃঙ্খলা, ভয়, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সন্ত্রাস ইত্যাদি থাকে তাহলে কোনো স্বাধীনতাই অর্থবহ হয় না।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ