- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মূল্যবোধ, আইন, স্বাধীনতা ও সাম্য
নৈতিকতা | Morality
মানব চরিত্রের একটি অপরিহার্য গুণ ও বৈশিষ্ট্য হলো নৈতিকতা। নৈতিকতা মানুষের মন থেকে উৎসারিত হয় এবং হিতাহিত বোধ বা জ্ঞানের বিকাশ লাভ করে। মানব চরিত্রের সবচেয়ে উন্নত এই গুণটি সুন্দর, সুশৃঙ্খল এবং সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নৈতিকতা এমন একটি গুণ বা মানসিক অবস্থা যা কোনো ব্যক্তিকে অপরের মঙ্গল কামনা করতে এবং মানুষের কল্যাণে ভালো কাজের অনুপ্রেরণা দেয়। নৈতিকতা আইন নয় কিন্তু আইনের মতোই গুরুত্বসহকারে মান্য করা হয়। নৈতিকতা সমাজ স্বীকৃত আচরণবিধি। নৈতিকতা মানুষের মনে উদ্ভব ও বিকশিত হয় এবং সমাজ তা লালন করে। নৈতিকতা নাগরিক সচেতনতার মানদণ্ড এবং সুশাসনের অন্তর্নিহিত শক্তি।
নৈতিকতার ধারণা (Concept of morality)
নৈতিকতার ইংরেজি প্রতিশব্দ 'Morality'। ইংরেজি Morality শব্দটির এসেছে ল্যাটিন 'Moralitas' থেকে। যার অর্থ আচরণ (Manner), চরিত্র (Character) বা যথার্থ আচরণ (Proper behaviour)। নৈতিকতা ভালো বা ন্যায়ের সমার্থক। নৈতিকতা বোধ মানুষকে ন্যায়-অন্যায় বা ভালো ও মন্দের মধ্যকার পার্থক্য করতে শেখায়। তাই সাধারণত যে সকল সামাজিক রীতিনীতি অনুসরণ করে মানুষ দৈনন্দিন কার্যাবলি সম্পাদন করে তাকে নৈতিকতা বলে। নৈতিকতা মানুষের কাজের ভালো-মন্দ নির্ধারণ করে। মানুষের কাজ, অভ্যাস ও আচরণের ভালো-মন্দের মাপকাঠি হলো নৈতিকতা।
নৈতিকতা বলতে মানুষের ভালো নীতিকে বোঝায়, যার মাধ্যমে ব্যক্তির নিজের এবং সমাজের কল্যাণ সাধিত হয়। নৈতিকতা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত ধ্যান-ধারণার সমষ্টি যা মানুষের সুকুমার বৃত্তিকে বিকশিত করে তোলে। নৈতিক চরিত্রই মানুষকে সভ্যতার আসনে অধিষ্ঠিত রাখে। নৈতিকতা মানুষকে অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করে সুপথে পরিচালিত করে। নৈতিকতা মানুষকে সততা, ন্যায়পরায়ণতা, দায়িত্বশীলতা, সহিষ্ণুতা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করে। মানুষের সু-অভ্যাস ও সামাজিক রীতিনীতিই হলো নৈতিকতা। সাধারণত যেসব সামাজিক রীতিনীতি অনুসরণ করে মানুষ তার দৈনন্দিন কাজ সম্পাদন করে তাকেই নৈতিকতা বলে। মানুষের কোন কাজটি ভালো, কোন কাজটি মন্দ, নৈতিকতা তা নির্ধারণ করে। নৈতিকতা হলো মানুষের ভালো-মন্দ কাজের বিচারের মাপকাঠি।
নৈতিকতা সম্পর্কে উইলিয়াম সিলি বলেন, "মানুষের দৈনন্দিন কথাবার্তা, কাজের ভালো, উচিত, সঠিক শব্দমালা নীতিশাস্ত্রের নৈতিকতার মানদণ্ডের দ্বারা নির্ধারণ করা হয়।"
অধ্যাপক নিউনার ও কিলিং বলেন, "নৈতিকতা হলো বিজ্ঞান ও দর্শনের সেই সকল কাজ যা মানুষের নৈতিক আচরণ, কর্তব্য এবং বিচার বিবেচনা বিশ্লেষণ করে।"
জোনাথান হেইট (Jonathan Haidt) বলেন, "ধর্ম, ঐতিহ্য এবং মানব, আচরণ- এই তিনটি থেকেই নৈতিকতার উদ্ভব হয়েছে।"
নীতিশাস্ত্রবিদ ম্যুর নৈতিকতার একটি সংক্ষিপ্ত অথচ চমৎকার সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। ম্যুর বলেন, যা কিছু শুভ তার প্রতি অনুরাগ এবং অশুভর প্রতি বিরাগই হচ্ছে নৈতিকতা"।
অতএব বলা যায়, দৈনন্দিন কার্যক্রম ও সামাজিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য মানুষ যে সকল নীতি, আদর্শ এবং সামাজিক, ধর্মীয় ও আইনগত অনুশাসন মেনে চলে তার সমষ্টিই হলো নৈতিকতা।
নৈতিকতার প্রভাবে মানুষ আইন মেনে চলে, শৃঙ্খলার পরিপন্থী কাজ করে না এবং রাষ্ট্রের অনুশাসনকে মেনে চলে। সামাজিক প্রথা, আদর্শ, ধর্ম, ন্যায়বোধ থেকে নৈতিকতা সৃষ্টি হয়। নৈতিকতা মানুষের বাহ্যিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চিন্তা-চেতনাকেও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। নৈতিকতার ধারণা সর্বজনীন। সব দেশে নৈতিকতা বিদ্যমান। নৈতিকতা ভঙ্গ করলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না, তবে সামাজিক নিন্দা, ঘৃণা ও বিবেকের দংশন মানুষকে পীড়িত করে। নৈতিকতা মানুষকে সৎ, ন্যায়বান ও বিবেকসম্পন্ন করে তুলে সামাজিক শান্তি, শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের পথে পরিচালিত করে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ