• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম

প্রশাসনিক বিভাগ (Administration Department)

দেশব্যাপী সুষ্ঠু প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য জুলাই মাসে বাংলাদেশকে ১১টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়। এগুলোর নাম দেওয়া হয়েছিল জোনাল কাউন্সিল। মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য ঘোষণাকারী প্রাদেশিক ও জাতীয় পরিষদের সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে আঞ্চলিক চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়। প্রতিটি অঞ্চলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে একজন করে আঞ্চলিক প্রশাসক বা জোনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ করা হয়। আঞ্চলিক প্রশাসক তার অধীনস্থ অঞ্চলে রাজনৈতিক সমন্বয়কারীর দায়িত্ব লাভ করেন। প্রতিটি অঞ্চলে আঞ্চলিক কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়।

পরিকল্পনা কমিশন

মুজিবনগর সরকার ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিকল্পনা কমিশন গঠন করে। কমিশনটি ছিল নিম্নরূপ:

ড. মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী
চেয়ারম্যান
ড. খান সরওয়ার মুর্শেদ
সদস্য
ড. মোশাররফ হোসেন
সদস্য
ড. এম আর বোস
সদস্য
ড. আনিসুজ্জামান
সদস্য

যুব অভ্যর্থনা শিবির নিয়ন্ত্রণ বোর্ড

মুক্তিযুদ্ধের সময় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ২৪টি যুবশিবির ও ১১২টি অভ্যর্থনা শিবির স্থাপন করা হয়েছিল। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। অধ্যাপক ইউসুফ আলী (এমএনএ) ছিলেন এই বোর্ডের প্রধান। বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে আসা ব্যক্তিদেরকে প্রথমে অভ্যর্থনা শিবিরে রিপোর্ট করতে হতো এবং সেখান থেকে তাদেরকে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে প্রেরণ করা হতো। যুবকদের পাঠানো হতো যুবশিবিরে, নারীদের নারী শিবিরে। বিভিন্ন যুবশিবির থেকে মুক্তিযোদ্ধা বাছাই করা হতো।'

মুজিবনগর সরকারের কার্যাবলি

মুজিবনগর সরকার স্বাধীনতা সংগ্রামে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছে। এ অস্থায়ী সরকারের উল্লেখযোগ্য কার্যাবলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১. সামরিক তৎপরতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করাই ছিল মুজিবনগর সরকারের প্রধান কাজ। তাছাড়া মুক্তিবাহিনীকে সংগঠিত করা, ট্রেনিং-এর ব্যবস্থা করা, পুনর্বিন্যাস করা এবং আহত সৈনিকদের চিকিৎসা ও সাহায্যের ব্যবস্থা করা এবং এ সকল উদ্দেশ্যে সাহায্য লাভের জন্য ভারত সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা ছিল মুজিবনগর সরকারের অন্যতম কাজ।

২. কূটনৈতিক তৎপরতা: মুজিবনগর সরকার বৈদেশিক রাষ্ট্রগুলোর নিকট থেকে সাহায্য, সহানুভূতি, সমর্থন ও স্বীকৃতি লাভের উদ্দেশ্যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালায়। কলকাতা, দিল্লি, লন্ডন, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক ও স্টকহোমসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রচারণা ও সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে। মুজিবনগর সরকার বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীকে বহির্বিশ্বের বিশেষ দূত নিয়োগ করে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বনেতাদের সমর্থন ও সহযোগিতা আদায়ের চেষ্টা করে।

৩. বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা: মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধে যোগদানকারী বাঙালিদের নিয়ে বেসামরিক প্রশাসনযন্ত্র গড়ে তোলে। শত্রুমুক্ত এলাকায় শাসন করার ব্যবস্থা করে সেখানে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহের ব্যবস্থা করে।

৪. জনগণের নৈতিক মনোবল অক্ষুণ্ণ রাখা যুদ্ধ অবস্থায় দেশের প্রতিজন নাগরিক উদ্বিগ্ন থাকে। প্রতি মুহূর্তে যুদ্ধের অবস্থা, গতি-প্রকৃতি ইত্যাদি জানতে চায়; যা একটি কেন্দ্র থেকে সাধারণত সরবরাহ করা হয়ে থাকে। মুজিবনগর সরকার সেই শক্তিশালী কেন্দ্রের ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে জনগণের নৈতিক মনোবল সবসময় চাঙ্গা রেখেছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে গান, সংবাদ, চরমপত্র প্রভৃতি প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে উদ্দীপ্ত রেখেছে।

৫. স্বাধীনতা পরবর্তী কার্যাবলি কার্যত স্বাধীন হওয়ার পর মুজিবনগর সরকারই প্রথম দেশ শাসনের দায়িত্বভার গ্রহণ করে। এ সরকার নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনে। ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে শীঘ্রই অনেক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জন করে।

এ সরকার গঠিত হওয়ায় বাঙালিরা সংগ্রামী চেতনায় এবং নব আশায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যুদ্ধাবস্থায় এবং যুদ্ধ পরবর্তী সংকটময় মুহূর্তে মুজিবনগর সরকারই ছিল বাঙালি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ