- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম
গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধ
যুদ্ধ পদ্ধতি ছিল গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম পর্যায়ের যুদ্ধগুলো ছিল পরিকল্পনাহীন। অস্ত্র প্রাপ্তি ও প্রশিক্ষণ এ দু'কারণে মুক্তিযোদ্ধারা জুলাই মাসের আগে পরিকল্পিত কোনো আক্রমণ করতে সক্ষম হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আস্থার অভাবে প্রথম দিকে ভারত অস্ত্র দেয়নি। অবশ্য আগস্ট মাসে ৬৭ কোটি টাকার অস্ত্র পাওয়া গিয়েছিল। আগস্ট মাস থেকেই অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা পদ্ধতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাকসেনা ও তাদের দোসরদের ওপর হামলা ও পাল্টা হামলা চালায়। হামলা চালায় পাকিস্তানি সামরিক ঘাঁটি, সামরিক স্থাপনার ওপর। রাস্তা কেটে, ব্রিজ ভেঙে, ট্রেন লাইন উপরে ফেলে পাকবাহিনীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাদের অবরুদ্ধ করে ফেলে। অক্টোবরের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা আক্রমণের পাশাপাশি সম্মুখ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে পাকবাহিনীকে দিশেহারা করে ফেলে। এ সময় মুক্তিবাহিনী ৩,৫৫৯ জন পাক সৈনিক হত্যা করতে সক্ষম হয়। পাকিস্তানের জনসংযোগ অফিসার মেজর সিদ্দিক মালিক বলেছেন, "প্রথম দিকে লাশ আমরা আকাশপথে পাকিস্তানে পাঠিয়েছি। কিন্তু জুলাই-আগস্ট মাসে সংখ্যা বাড়তে থাকে। ফলে আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে অযথা আতঙ্ক সৃষ্টির ভয়ে মৃতদেহ পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হয়।"
স্থলযুদ্ধের পাশাপাশি নৌ যুদ্ধেও মুক্তিযোদ্ধারা আগস্ট মাসের মাঝামাঝি ব্যাপক অভিযান চালায়। নৌপথে অভিযানের নাম ছিল অপারেশন জ্যাকপট। এ অভিযানের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর বাংলাদেশে নৌপথে সৈন্য ও অন্যান্য সমর সরঞ্জাম পরিবহন বানচাল করা। গেরিলাদের আক্রমণে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিগুলো প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। মুক্তিযোদ্ধারা ৪৫টি অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানি এম.ভি হুরমুজ ও এম.ভি আব্বাস যুদ্ধ জাহাজসহ ১২৬টি যুদ্ধ জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। পাকবাহিনীর সীমাহীন হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ধ্বংসযজ্ঞ এদেশের সকল পেশার জনগণকে আরও ঐক্যবদ্ধ করে। তারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধে শামিল হতে থাকে। যেকোনো মূল্যে স্বাধীনতা অর্জনই ছিল তাদের একমাত্র লক্ষ্য।
স্বতঃস্ফূর্তভাবে ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, নারী, শিক্ষক, কবি, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, শিল্পী, কামার, কুমার, জেলে বিভিন্ন পেশার মানুষ মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববদ্যালয়ের ছাত্ররা বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। বাঙালি ছাত্র যুবকরা শত্রুকে আঘাত হানবার প্রয়োজনীয় রণকৌশল শিখে নিয়ে দ্রুত বাংলার বনে-জঙ্গলে-গ্রামে-গঞ্জে এবং শহরে-নগরে ঢুকে পড়ে। গেরিলা পদ্ধতিতে চলে আক্রমণ। মুক্তিযোদ্ধারা সুযোগ বুঝে পাকবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকবাহিনীকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কখনো কখনো পাকবাহিনী অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। মুক্তিবাহিনীর গেরিলা হামলায় পাকিস্তানি সুসজ্জিত বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের জনগণের নিকট গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিফৌজ নামে সুপরিচিত ছিল। গেরিলা হামলা পাকবাহিনীর নিকট আতঙ্ক ছিল। ঢাকা শহরে - গেরিলা বাহিনী হামলা করে আইয়ুব খানের কু-কর্মের দোসর সাবেক গভর্নর মোনায়েম খানকে তার বাসভবনে হত্যা করে। গেরিলা বাহিনীর এরূপ নজিরবিহীন সাফল্য মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয়ের পথ প্রশস্ত করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গেরিলা বাহিনীর অবদান অনেকখানি।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

