- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম
মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা
রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের পাশাপাশি মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির প্রতি বিশ্বব্যাপী যে সহানুভূতি সৃষ্টি হয়েছিল তা ছিল বহির্বিশ্বে মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার ফল। কূটনৈতিক তৎপরতার মধ্যে ছিল বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধি প্রেরণ করে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন আদায় ও বিদেশে তহবিল সংগ্রহ।
মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সমর্থন আদায়
বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে ইরাক, ইরান, ফিলিপাইন, আর্জেন্টিনার পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতগণ এবং কলকাতা, দিল্লি, লন্ডন, ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, কাঠমান্ডু, হংকং প্রভৃতি স্থানে নিযুক্ত পাকিস্তান দূতাবাসের উচ্চপদস্থ কূটনৈতিকগণ মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আনুগত্য জানায়। এ সংবাদে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রীয়ভাবে চীন এবং আমেরিকা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করলেও এ সকল দেশের জনগণ এবং প্রচার মাধ্যম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। মুজিবনগর সরকারের প্রেরিত কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন উপাচার্য বিচারপতি আবু সাইদ চৌধুরীর নাম সর্বাগ্রে স্মরণীয়। তিনি প্রথম বাঙালি হিসেবে লন্ডন ও জেনেভায় বিভিন্ন সমাবেশে বক্তৃতা দিয়ে হানাদার বাহিনীর নৃশংস হত্যাকাণ্ড তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠনে অপরিসীম ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী স্যার ডগলাস হিউম, জাতিসংঘের তৎকালীন মহাসচিব উখান্টের বিশেষ প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সমর্থন লাভের চেষ্টা করেন। এছাড়া মে মাসের প্রথম দিকে শেখ মুজিবের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক রেহমান সোবহান মুজিবনগর সরকারের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রে যান। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রতিনিধি। তিনি সেখানে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করেন। এ সময় তিনি বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় তদবির, বাংলাদেশের জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলে যোগদান, বাঙালি ও মার্কিন শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ, মার্কিন কংগ্রেসে তদবির ইত্যাদি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সহায়তামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পাশাপাশি পাকিস্তানে বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এ সকল তৎপরতার ফলে জুন মাসের শেষে বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেন। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে দাতাগোষ্ঠী পাকিস্তানকে নতুন সাহায্যদানে এবং ঋণ প্রদান থেকে বিরত রাখে।
মুক্তিযুদ্ধের তহবিল সংগ্রহ
মুজিবনগর সরকারের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তৎপরতা ছিল মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বিদেশে তহবিল সংগ্রহ করা। এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে 'বাংলাদেশ ফান্ড' নামে একটি তহবিল গঠন করা হয়। বিচারপতি আবু সাঈদ এ ফান্ডের বোর্ড অব ট্রাস্টির সদস্য ছিলেন। এ ফান্ড ৩,৭৬,৫৬৮ পাউন্ড সংগ্রহ করে বাংলাদেশে প্রেরণ করেন। এছাড়া বাহরাইন বাংলাদেশ ক্লাব হতে ১৪৯৭.৫৭ পাউন্ড, কাতারের বাংলাদেশ শিক্ষাকেন্দ্র হতে ৩১০০.২৯ পাউন্ড, লিবিয়ার বাংলাদেশ শিক্ষাকেন্দ্র হতে ২৩৮২.২৯ পাউন্ড সংগ্রহ করেন। জাতিসংঘের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে যে অর্থ সাহায্য পাওয়া গিয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৮,৯১,৫৭,০০০ ডলার (যা বিভিন্ন দেশের সহায়তার মধ্যে সর্বোচ্চ), যুক্তরাজ্য ৩,৮১,১২,১৩২ ডলার, কানাডা ২,০২,৬০,৩০৭ ডলার এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ২,০০,০০,০০০ ডলার। এসব সাহায্য মুক্তিযুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

