- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম
পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়
দেশকে স্বাধীন করার দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে বাংলার সূর্য সন্তানরা ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে যে অস্ত্র কাঁধে তুলে নিয়েছিল সে অস্ত্র দীর্ঘ ৯ মাসে বিভিন্ন রণাঙ্গনে গর্জে উঠে পাকবাহিনীকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এমনি অবস্থায় ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সর্বপ্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন। ভারতের স্বীকৃতি লাভের পর বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত হয় যৌথবাহিনী। যৌথবাহিনীর সেনাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন ভারতের লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। অতঃপর যৌথবাহিনী জল, স্থল, ও আকাশ পথে একযোগে প্রচণ্ড আক্রমণ করে পাকহানাদার বাহিনীকে একেবারে কাবু করে ফেলে। দিশেহারা পাকবাহিনী পালাতে শুরু করে। এ সময় যৌথবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা পাকিস্তান বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালে তারা কোনো কিছু না ভেবেই দ্রুত রাজি হয়ে যান।
অবশেষে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বিকাল ৪.৩০ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লে. জে. এ.কে. নিয়াজী ৯৩ হাজার সৈন্য অস্ত্রশস্ত্রসহ যৌথ বাহিনীর পক্ষে লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরার নিকট আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন পাকবাহিনীর প্রধান আমির আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী এবং যৌথবাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুজিবনগর সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ক্যাপ্টেন এ.কে খন্দকার। আর এই আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের অবসান ঘটে। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বিশ্বের মানচিত্রে লাল সবুজের পতাকায় বাংলাদেশ নামে একটি নবীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতা ভূলণ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা হারিয়ে বাঙালি জাতি পরাধীনতার অথৈ জলে হাবুডুবু খেতে থাকে এবং একই সাথে স্বাধীনতার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা অব্যাহত রাখে। সে চেষ্টার সারথি হয়ে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নেন তিতুমীর, হাজী শরীয়তউল্লাহ, তাতিয়াতপি, লক্ষ্মীবাঈ, ক্ষুদিরাম, মাস্টার দ্যা সূর্যসেন, প্রীতিলতা প্রমুখ বীর বাঙালি। সেই দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্ত, ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম এবং অপরিসীম ত্যাগ ও তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। আমাদের জাতীয় জীবনে এটি শ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস। প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে এবং শহিদদের প্রতি অকৃত্রিম বিনম্র শ্রদ্ধা রেখে জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব পরিবেশে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করা হয়। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বহমান থাকবে ততদিন ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস থাকবে। প্রতিবছর আসবে; প্রজন্মের পর প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দিবে মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোর কথা। লাল সবুজের বাংলাদেশে রয়েছে রক্তাক্ত ইতিহাস। সে ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।
আত্মসমর্পণের দলিল
"পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কর্তৃপক্ষ পূর্ব রণাঙ্গণে ভারতীয় এবং বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে বাংলাদেশে পাকিস্তানের সকল সশস্ত্রবাহিনীর আত্মসমর্পণের স্বীকৃত হচ্ছেন। এ আত্মসমর্পণ পাকিস্তানের সকল সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী এবং আধা-সামারিক ও বেসরকারি, সশস্ত্রবাহিনীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এসব বাহিনীর সকলেই- যারা যেখানে আছে, সেখানকার নিকটস্থ লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কর্তৃত্বাধীন নিয়মিত সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ ও সকল অস্ত্র সমর্পণ করবে।"
"এই দলিল স্বাক্ষরের সময় থেকে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কর্তৃপক্ষ লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরার নির্দেশের অধীনস্থ বলে বিবেচিত হবে। কোনো প্রকার অবাধ্যতা আত্মসমর্পণের শর্ত ভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং যুদ্ধের স্বীকৃত ও প্রচলিত রীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গৃহীত হবে। যদি আত্মসমর্পণের কোনো শর্তের ব্যাখ্যা বা অর্থ সম্পর্কে বিতর্ক দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে লেফটেন্যান্ট জেনারেল অরোরার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে।"
"লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এ আশ্বাস প্রদান করেছেন যে, আত্মসমর্পণকারী প্রত্যেক ব্যক্তির প্রতি জেনেভা কনভেনশনের শর্ত অনুযায়ী একজন সৈনিকের প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন করা হবে এবং আতত্মসমর্পণকারী সকল সামরিক ও আধা-সামারিক ব্যক্তির নিরাপত্তা ও সুব্যবস্থার অঙ্গীকার প্রদান করছেন। লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার অধীনস্থ সেনাবাহিনী সকল বিদেশি নাগরিক, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও পশ্চিম পাকিস্তানি ব্যক্তিদের নিরাপত্তা প্রদান করবে।"
জগজিৎ সিং অরোরা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জেনারেল অফিসার কমান্ডিং ইন চিফ ভারত-বাংলাদেশ বাহিনী পূর্ব রণাঙ্গন ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ | আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল সামরিক আইন প্রশাসক পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড (পাকিস্তান) ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ |
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

