- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম
যৌথবাহিনীর অভিযান
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে যৌথবাহিনী গঠন এবং অভিযান একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ভারতীয় বাহিনী নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিক্ষিপ্তভাবে প্রবেশ করতে থাকে। এদিকে মুক্তিবাহিনী গেরিলা ও সম্মুখ উভয় আক্রমণ করে ঢাকা, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ এবং খুলনা প্রভৃতি বড় বড় শহর থেকে পাকবাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে। পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসকের নির্দেশে নভেম্বরে শেষের দিকে পাকিস্তানি বাহিনী ভারতের অমৃতসর, যোধপুর, পাঠনকোর্ট এবং আগ্রায় বিমান হামলা চালায়। এই বিমান হামলার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পাশ কাটিয়ে পাক-ভারত যুদ্ধে রূপদান। ফলে বাধ্য হয়ে ভারত ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে পাক-ভারত যুদ্ধে রূপদানে ব্যর্থ হয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আর এক ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধের প্রাণপণ চেষ্টা করেন। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন 'নিক্সন'। তিনি যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে সপ্তম নৌবহর পাঠান এবং তা বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এসেছিল। পাশাপাশি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেটো' প্রয়োগের ফলে উক্ত প্রস্তাব কার্যকর হয়নি। সোভিয়েত ইউনিয়নের অষ্টম নৌবহরের হুমকির মুখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার সপ্তম নৌবহর ফেরত নিতে বাধ্য হয়। ২১ নভেম্বর ১৯৭১, বাংলাদেশ ও ভারত সরকার যৌথ কমান্ডার গঠন করে। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে এটি গঠন করে। ভারতের লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরা এ বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত হন। যৌথ কমান্ডারের উদ্যোগে বাংলাদেশের রণাঙ্গনকে ৪টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। ৩ ডিসেম্বর ভারতের অমৃতসরসহ বিভিন্ন বিমান ঘাঁটিতে পাকিস্তানি বিমান বাহিনী হামলা চালালে শুরু হয় সর্বাত্মক যুদ্ধ। ঐ দিনই 'যৌথ কমান্ডার' ৩৩টি পাকিস্তানি বিমান ভূপাতিত করে। ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, সর্বপ্রথম যশোর শত্রু মুক্ত হয়। এরপর ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লালমনিরহাট মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। কুমিল্লা ও ফেনীতে ৭০০ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ঐ দিন অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর সর্ব প্রথম ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করেন। পরের দিন যশোর বিমান বন্দরের পতন ঘটে। ১১-১২ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ, হিলি, কুষ্টিয়া, খুলনা, রংপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর ও সিরাজগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। অতঃপর যৌথবাহিনী ঢাকা দখলকে গুরুত্ব দেয়। ১২ ডিসেম্বর যৌথবাহিনী ঢাকায় পাক সামরিক অবস্থানে বিমান হামলা অব্যাহত রেখে চারদিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করে। ভারতের স্বীকৃতির সাথে সাথে মুক্তিযুদ্ধের পট পরিবর্তন ঘটে। একদিকে মুক্তিযোদ্ধারা উৎসাহিত হয়; অন্যদিকে পাক সেনারা কোণঠাসা হয়ে যায়। ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু বসে রইল না। এবার তারা যে পরিকল্পনা গ্রহণ করল তা সভ্যতার সকল নৃশংসতাকে হার মানিয়ে দিল। তারা বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করল। বিজয়ের কোনো সম্ভাবনা না দেখে তারা বাংলার বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে (১৪ ডিসেম্বর) তাদের এই কাজে সহযোগিতা করে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী। বুদ্ধিজীবী হত্যায় তাদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। পাকহানাদার বাহিনীর এরূপ নৃশংসতায় বাংলার দামাল ছেলেরা দমে না গিয়ে বরং আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাক-বাহিনী এবং তাদের দোসরদের ওপর।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

