- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কার্যক্রম
গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
বলা হয়ে থাকে "প্রচারেই প্রসার"। যেকোনো দেশ বা জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে প্রচার মাধ্যম বিরাট ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে যুদ্ধের সময় প্রচার মাধ্যমের গুরুত্ব অনেক বেশি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রচার মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রচার মাধ্যমের গুরুত্ব অনুধাবন করেই স্বাধীন বাংলাদেশের মুজিবনগর সরকার একটি স্বাধীন বাংলার বেতার কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা একান্তভাবে উপলব্ধি করে। বাংলাদেশ পাকবাহিনী ও তাদের দোসরদের অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতনের কাহিনী দেশ এবং বহির্বিশ্বে প্রচারের জন্য বেতার কেন্দ্র স্থাপন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। একমাত্র বেতার যন্ত্রের মাধ্যমেই যুদ্ধকালীন সময় সরকারের অনুগত বাহিনী অগ্রগতি এবং শত্রু পক্ষের অবস্থান, যুদ্ধে গতি ও প্রকৃতি ইত্যাদি বিষয় জনসম্মুখে তুলে ধরে সাধারণ মানুষদের চাঙ্গা রাখা যায়।
মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং বহির্বিশ্বে প্রচারের ক্ষেত্রে 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র' বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মী এবং মুজিবনগর সরকারের কূটনৈতিক কর্মতৎপরতা অপরিসীম অবদান রেখেছে।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরপরই বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বেতার সম্প্রচার কেন্দ্রই স্বাধীন বংলা বেতার কেন্দ্র নামে পরিচিত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র'-এর প্রশংসনীয় ভূমিকা রয়েছে। ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাস এ বেতার কেন্দ্র উৎসাহ উদ্দীপনামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করে বাংলার আপামর জনসাধারণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের জনপ্রিয় অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে ছিল এম.আর আখতার মুকুল রচিত ও পরিচালিত ব্যঙ্গ রচনা 'চরমপত্র'। মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ অনুষ্ঠান- জল্লাদের দরবার, অগ্নিশিখা, বাংলা ও ইংরেজি খবর, উদ্দীপনামূলক গান যেমন- জয়বাংলা বাংলার জয় (সূচনা সংগীত), আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি, কারার ঐ লৌহ কপাট, কেঁদোনা কেঁদোনা মাগো, সোনা সোনা লোকে বলে সোনা, শোন একটি মুজিব থেকে লক্ষ মুজিব, মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি ইত্যাদি।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রাথমিক যাত্রা শুরু হয় চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণার মধ্য দিয়ে। ৩০ মার্চ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পাক বিমান বাহিনীর বোমা হামলায় বেতার কেন্দ্রটি ধ্বংস হয়। দ্বিতীয় পর্বে ৩ এপ্রিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় এবং শিলাগুরিতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে মুজিবনগর সরকার ২৫ মে থেকে কলকাতার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে ৫৮/৮ বাড়িতে ৫০ কিলোওয়াট শক্তিসম্পন্ন একটি বেতার সম্প্রচার কেন্দ্র স্থাপন করে। এটিই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্থায়ী কার্যালয়। ঢাকা বেতার কেন্দ্রের কতিপয় শিল্পী এখানে যোগদান করেন। তাদের মধ্যে আশফাকুর রহমান খান, তাহের সুলতান, শহিদুল ইসলাম, আলী রেজা চৌধুরী, এ.কে শামসুদ্দিন, মঞ্জুর কাদের প্রমুখ। বেতার কেন্দ্রটি পরিচালনার 'দায়িত্বে ছিলেন আব্দুল মান্নান। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সম্পর্কে পাক শাসকগণ কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, ঐ বেতার কেন্দ্র সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করলে অনেকটা স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকার করা হয়, বিষয়টি ছিল খুবই স্পর্শকাতর। এদিক থেকে 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র' নামকরণ শতভাগ স্বার্থক হয়েছে।
পত্র-পত্রিকার অবদান
গণমাধ্যমের প্রসঙ্গ উঠলেই সবার সামনে চলে আসে পত্র-পত্রিকার কথা। যুদ্ধ সংঘটিত করতে, মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতে, জনগণের মনে প্রত্যাশা জাগাতে ও স্বাধীনতার সপক্ষে জনমত গঠনে বাংলাদেশ ও বিদেশ থেকে প্রকাশিত অসংখ্য নিয়মিত ও অনিয়মিত পত্র-পত্রিকা এক বিশাল উজ্জ্বল ভূমিকা রেখেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় বাংলাদেশকে নিয়ে লেখা হয়েছে সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়, প্রবন্ধ, সংবাদ, কবিতা, গান, কার্টুন ইত্যাদি। ঐ সময় প্রকাশিত পত্র-পত্রিকাগুলো আমাদের জাতীয় ইতিহাসে এক একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। একাত্তরে কী ঘটেছিল, তার বাস্তবতার প্রামাণিক দলিল হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন পত্র-পত্রিকা। মুক্তিযুদ্ধে ৯ মাসে যে পরিমাণ পত্র-পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে তা পৃথিবীর ইতিহাসে এত সংক্ষিপ্ত সময়ে এত পরিমাণ পত্র-পত্রিকা বের হয়েছে এমনটা আর দেখা যায় না। এখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে মুক্তিযুদ্ধের সময় অবদান রেখেছে এমন কতিপয় পত্র-পত্রিকা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১। জয়বাংলা: ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের গণহত্যার পর ১১ই মে মুজিবনগর থেকে 'জয়বাংলা' নামে প্রথম মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন আহমদ রফিক এবং মতিন আহমদ চৌধুরী। পত্রিকাটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাপ্তাহিক মুখপত্র ছিল। ২৫ পয়সা মূল্যের এ পত্রিকাটি ২৪শে ডিসেম্বর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট ৩৪টি সংখ্যা বের হয়। মুজিবনগর সরকারের বিভিন্নমুখী কর্মতৎপরতা যেমন পত্রিকাটিতে স্থান পেত তেমনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা, নির্যাতন ও দেশ-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনের সংবাদ ছাপা হতো। একটি সংখ্যায় সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে ছাপা হয়েছিল ইয়াহিয়ার মুখের হিংস্র ছবি, যার ক্যাপসন ছিল 'এই জানোয়ারটাকে হত্যা করতে হবে'। জয়বাংলা-২, জয়বাংলা-৩ ও জয়বাংলা-৪ নামে ভিন্ন ভিন্ন পত্রিকা ছিল। যার ভিন্ন ভিন্ন সম্পাদক ছিল।
২। বাংলার বাণী: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সাপ্তাহিক পত্রিকা হচ্ছে বাংলার বাণী। হাফেজ হাবিবুর রহমানের সম্পাদনায় ১৯৭০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে পত্রিকাটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটিতে ৬ষ্ঠ সংখ্যায় একটি রাজনৈতিক ভাষ্যের শিরোনাম ছিল "কাহার সঙ্গে আপস, কীসের আপস"।
৩। অমর বাংলা: এটি একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। এর সম্পাদক ছিলেন এবি ছিদ্দিকী। এটি বেঙ্গল প্রেস এ্যান্ড পাবলিকেশন, ঢাকা। এটি স্বত্বাধিকারী পিপি বড়ুয়া কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। পত্রিকার নামের নিচে ইংরেজিতে Weekly Amor Bangla এবং "বাংলাদেশ মুক্তি আন্দোলনের মুখপত্র" এই কথাটি লেখা হতো। প্রথম প্রকাশ ৪ ঠা নভেম্বর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ।
৪। অগ্রদূত: রংপুরের রৌমারী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক জনাব আজিজুল হকের সম্পাদনায় ১৯৭১ সালের ৩১ শে আগস্ট এই পত্রিকাটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। স্বাধীন বাংলার মুক্ত অঞ্চলের সাপ্তাহিক মুখপাত্র হিসেবে রংপুর জেলার রৌমারী কুড়িগ্রাম হতে পত্রিকাটি হাতে লিখে সাইক্লোষ্টাইলে প্রকাশিত হতো।
৫। অভিযান: খ্যাতনামা কবি ও সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফর 'অভিযান' পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ১৮ই নভেম্বর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে "প্রয়োজন হলে দেবো এক নদী রক্ত... আমাদের সংগ্রাম চলবেই" এই লেখার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটির। সাপ্তাহিক এ পত্রিকাটিতে যুদ্ধের সংবাদ ছাড়াও বিশ্ব রাজনীতি, কবিতা, সাংস্কৃতিক সংবাদ ও অনন্য সাধারণ সংবাদও প্রকাশিত হতো।
৬। অগ্নিবাণ: ঢাকা জেলার দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মুক্তি সংগ্রামীদের মুখপাত্র ছিল এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটি। 'সবকিছুর ঊর্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান' পত্রিকাটিতে এ কথা লেখা হতো।
৭। আমার দেশ: মুক্তিযুদ্ধ সহায়ক এই জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন খাজা আহমদ। ২৫ পয়সা মূল্যের ৬ পৃষ্ঠার এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটিতে মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর, হানাদার বাহিনীর পরাজয় ও মুক্তাঞ্চলের খবরাখবরই বেশি প্রাধান্য পেত।
৮। আমোদ: কুমিল্লা জেলার একটি আঞ্চলিক সাপ্তাহিক পত্রিকা আমোদ। একাত্তরে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে কুমিল্লা থেকে স্বাধীনতা বিরোধী তৎপরতার ওপর এর আটটি সংখ্যা বের হয়।
৯। ওরা দুর্জয় ওরা দুর্বার: মুক্তিবাহিনীর ক্রোড়পত্র হিসেবে 'ওরা দুর্জয় ওরা দুর্বার' বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রচার দপ্তরের পক্ষ থেকে এম.আর. আকতার মুকুল কর্তৃক মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
১০। জন্মভূমি: বিয়ানীবাজার থানার মোস্তফা আল্লামার একান্ত প্রচেষ্টায় ও খরচে ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে জন্মভূমি সাপ্তাহিক পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির স্লোগান ছিল 'বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণের বিপ্লবী মুখপাত্র'। বিজয় পর্যন্ত এর ৩০টি সংখ্যা বের হয়।
১১। জাগ্রত বাংলা: বাঙালি ছদ্মনামে একজন সম্পাদক ছিলেন পত্রিকাটির। পত্রিকাটির কোন সংখ্যায় 'মুক্তি ফৌজের সাপ্তাহিক মুখপাত্র' আবার কোন সংখ্যায় 'মুক্তিবাহিনীর সাপ্তাহিক মুখপাত্র' লেখা থাকত।
১২। দাবানল: দাবানল নামের এই সাপ্তাহিক পত্রিকাটির স্লোগান ছিল "মুক্তিযোদ্ধা ও সংগ্রামী জনতার মুখপাত্র"। সম্পাদক ছিলেন মো. জিনাত আলী।
১৪। বিপ্লবী বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের প্রচারের ক্ষেত্রে বরিশাল থেকে প্রকাশিত অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি পত্রিকা বিপ্লবী বাংলাদেশ। এর সম্পাদক ছিলেন নুরুল আলম ফরিদ। "জনগণের নির্ভীক কণ্ঠস্বর" কথা তিনটি পত্রিকাটির নামের ওপরে লেখা থাকত। ২৬ শে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৯টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের মুখপাত্র হিসেবে সে সময়ের অনন্য পত্রিকার মধ্যে ছিল- স্বাধীন বাংলা, স্বদেশ, লড়াই, রণাঙ্গন, মুক্তি, মুক্তবাংলা, মায়ের ডাক, বাংলাদেশ, বাংলার মুখ, বাংলার ডাক, বাংলার কথা, বঙ্গবাণী, ধূমকেতু, নতুন বাংলা, প্রতিনিধি, দুর্জয়বাংলা, গণমুক্তি, গ্রেনেড, উত্তাল পদ্মা ও ইশতেহার প্রভৃতি প্রায় শতাধিক পত্র-পত্রিকা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নানাদিক তুলে ধরে যুদ্ধকে বেগবান করেছে এবং জয়ের ধারায় নিয়ে গেছে। দৈনিক ইত্তেফাকের মতো জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকাগুলো যখন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তখন উল্লিখিত পত্রিকাগুলো মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিদেশি বাংলা পত্র-পত্রিকার মধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রচারিত আনন্দবাজার পত্রিকা সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এমন কোনো দিন যায়নি যেদিন আনন্দবাজার পত্রিকায় বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছু ছাপা হয়নি। কলকাতা থেকে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি পত্রিকা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে নিয়মিত প্রচারণা চালিয়েছে। ব্রিটেন থেকে বাংলাদেশ নিউজ লেটার ও বাংলাদেশ টুডে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রেখেছে।
[তথ্যসূত্র: মুনতাসির মামুন সম্পাদিত, গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম, দ্বাদশ খণ্ড।
মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান
মুক্তিযুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি নারীর অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব। অসংখ্য নারী মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়ে, খাবার দিয়ে, অস্ত্র লুকিয়ে রেখে, আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করে বিশেষ অবদান যেমন রেখেছে তেমনি সম্মুখ যুদ্ধেও তাদের অবদান রয়েছে। বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত ২ জন নারী তারামন বিবি ও ডাক্তার সিতারা বেগমের ন্যায় অসংখ্য নারী জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে।
"কোন কালে একা হয়নিকো জয়ী পুরুষের তরবারী প্রেরণা দিয়েছে শক্তি দিয়েছে বিজয়ী লক্ষী নারী"
জাতীয় কবি কাজী নজরুলের এই লাইন কয়টি যেন পরিপূর্ণভাবে স্বার্থক ঘটেছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্রে। মুক্তিযুদ্ধে নারী সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ ইতিহাসে নারীদের সম্মান ও মর্যাদা অনেকখানি বৃদ্ধি করেছে। ছাত্রী বা বোন স্বতঃস্ফূর্ত যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তাছাড়া ছেলে মুক্তিযোদ্ধা, ভাই মুক্তিযোদ্ধা, স্বামী মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার অপরাধে কত নারীকে যে সম্ভ্রম দিতে হয়েছে, জীবন দিতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ৯ মাস ধরে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে প্রায় দু লক্ষ মা-বোনকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। স্বাধীনতা, শুধু স্বাধীনতার জন্য। ঘরে বাইরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন উপায়ে সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বঙ্গ নারীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা আহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসার জন্য পাশে দাঁড়িয়েছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নারীদের "বীরাঙ্গনা" উপাধিতে ভূষিত করে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছেন।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

