- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন
রাজনৈতিক দল ব্যবস্থার উৎপত্তি ও বিকাশ (Origin and development of political party system)
রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যত ধরনের শাসনব্যবস্থা প্রচলিত আছে প্রায় সব ধরনের শাসনব্যবস্থায়ই রাজনৈতিক দল একটি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে পরিগণিত হয়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় বিশেষত সংসদীয় ধরনের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় দলীয় ব্যবস্থা অপরিহার্য। অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সংসদীয় শাসনব্যবস্থাকে দলীয় শাসনব্যবস্থা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সরকার গঠন, সরকার ও জনগণের মধ্যে সংযোগ সাধন, জনমত গঠন ও প্রকাশ, বিভিন্ন শ্রেণির স্বার্থের গ্রন্থিকরণ, রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থায়িত্ব, সংরক্ষণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব ও ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। Barker-এর মতে, "Parliament and parties are essentially connected." অন্যদিকে, সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থায়ও দল ব্যবস্থার অস্তিত্ব বিদ্যমান। যারা শ্রমিক শ্রেণির একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারাও দল ব্যবস্থার অস্তিত্বকে স্বীকার করেন। J.V. Stalin মনে করেন, "The party is an instrument of the dictatorship of the proletariat." আর এই দৃষ্টিকোণেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন। তবে সাধারণত রাজনৈতিক দলের উদ্ভবের মূলে যে কারণগুলো নিহিত সেগুলো হলো:
প্রথমত, বহুজাতিক রাষ্ট্রে বিভিন্ন জাতিধর্মের লোকের বসবাসের কারণে প্রতিটি জাতি নিজ নিজ ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, ভাষা ইত্যাদি সংরক্ষণের জন্য পৃথক পৃথক রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ধর্মের ভিত্তিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল গড়ে উঠতে পারে। যেমন- বাংলাদেশে ধর্মীয় আদর্শ ভিত্তিক কতিপয় রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব প্রত্যক্ষ করা যায়।
তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক স্বার্থকে কেন্দ্র করেও রাজনৈতিক দলের উৎপত্তি হতে পারে। সমাজতন্ত্রীরা মনে করেন, রাজনৈতিক দল একটি বিশেষ শ্রেণি-স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে। ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ধনী-গরিবের বৈষম্য বিদ্যমান। সেখানে পুঁজিপতিরা রাষ্ট্রকে শ্রেণি শোষণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। অন্যদিকে, শোষিত শ্রেণি উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর সামাজিক মালিকানা এবং শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতা অধিকার করতে সচেষ্ট হয়।
চতুর্থত, আদর্শগত ও কর্মপন্থাগত পার্থক্যের কারণেও রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হতে পারে। যেমন- ব্রিটেনের রাজনৈতিক দল ব্যবস্থা শাসনতান্ত্রিক ক্রমবিবর্তনের ধারায় জাতীয় জীবনের প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে গড়ে উঠেছে। সেখানে 'হুইগ' (Whig) ও 'টোরি' (Tory) দলের মধ্যে মতাদর্শগত ভিন্নতা রয়েছে। ১৮৩২ সালে সংস্কার আইন প্রণীত হওয়ার পর দল দুটির নাম পরিবর্তিত হয় 'হুইগ' দল' 'উদারনৈতিক দল' (Liberal Party) এবং 'টোরি' দল 'রক্ষণশীল দল' (Conservative Party)।
তবে বর্তমানে ব্রিটেনে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল (Liber Party) বা শ্রমিক দল এবং (Conservative Party) রক্ষণশীল দলের কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করা যায়। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল- Democratic Party এবং Republican Party পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার ওপর আস্থাশীল হওয়া সত্ত্বেও উভয় দলের মধ্যে কর্মপন্থা নির্ধারণের প্রশ্নে মতদ্বৈততা বিদ্যমান থাকায় পরস্পর বিরোধী দুটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়েছে অর্থনৈতিক স্বার্থকে ভিত্তি করে। তবে ধর্মীয় আদর্শভিত্তিক কিছু কিছু দলও গড়ে উঠেছে। মোটকথা বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভিন্ন কারণে রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে থাকে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ