• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর ভূমিকা Role of Pressure Groups in Establishing Good Governance

সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অপরিহার্য। আর আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ বা শর্ত। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:

১. সরকারি নীতিকে প্রভাবিত করে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলো সরকারি নীতি ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করে। সরকার কোনো নীতি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগ নিলে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীগুলো সে আইন বা সিদ্ধান্ত নিজেদের অনুকূলে আনার জন্য বিভিন্নভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে বা প্রভাবিত করার চেষ্টা চালায়। এতে অবশ্য অনেক গণ-বিরোধী নীতি থেকে সরকার সরে আসে, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রসারিত করে।

২. স্বার্থের সমন্বয়সাধন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের স্বার্থের সমন্বয় বা সংহতি বিধান করেই সমাজে ত্রুটিবিচ্যুতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এভাবে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী প্রশাসনের দক্ষতা বজায় রাখতে এবং সরকারের দোষত্রুটি দূরীকরণে সাহায্য করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করে।

৩. সামাজিকীকরণ: চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিক, সামাজিকীকরণের মাধ্যম হিসেবেও কাজ করে। চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী অনেক সময় তাদের স্বার্থ উদ্ধারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে পরোক্ষভাবে যুক্ত হয় এবং প্রচার প্রচারণা চালায়। এভাবে তারা সমাজে রাজনৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করে, সমাজকে সচেতন করে তোলে, যা সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথকে সহজ করে তোলে।

৪. সরকারকে পরামর্শ দান চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী তাদের অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণের আলোকে সরকারকে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে উপদেষ্টার ভূমিকাও পালন করে। সরকারের বিভিন্ন নীতি, সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপ সম্পর্কে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী গঠনমূলক পরামর্শের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কাজ ত্বরান্বিত করে।

৫. রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণা চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণার সংগঠিত মাধ্যম হিসেবে অনেক সময় কাজ করে। নির্বাচনের সময় বিভিন্ন চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বিভিন্ন দলের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। নানাভাবে রাজনৈতিক প্রচার-প্রচারণার কাজে অংশ নিয়ে জনগণের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে।

৬. সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সরকারের সাথে জনগণের সংযোগ সাধনের পথকে সুগম করে দেয়। গোষ্ঠীসমূহ জনগণের অভাব-অভিযোগ এবং দাবিদাওয়া সরকারের কাছে তুলে ধরে এবং সরকার তাদের মাধ্যমে জনগণের অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে অবগতি লাভ করে। ফলে সাধ্যানুযায়ী সরকার উক্ত অভাব-অভিযোগ সমাধানে সচেষ্ট হয়।

৭. তথ্য সরবরাহ: প্রচার মাধ্যমগুলোর (Press Media) ন্যায় চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সংবাদ প্রদানের উৎস। সরকারি নীতির ওপর প্রভাব বিস্তারের (Influence) জন্য গোষ্ঠীগুলো আইনসভার সদস্য, আমলা, সাধারণ মানুষ এবং প্রশাসনের উচ্চপদস্থ বিষয়ে তথ্য প্রদান করে থাকে। এরূপ তথ্য সরবরাহের মাধ্যম হিসেবে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সরাসরি বক্তৃতা, বিবৃতি, মিছিল-মিটিং, পুস্তিকা প্রকাশ, সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন কিংবা বিক্ষোভ, ধর্মঘটের আশ্রয় নিয়ে থাকে।

৮. সরকারি নীতি ও আইন প্রণয়ন চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সরকারি সিদ্ধান্ত, নীতি ও আইন প্রণয়ন সম্পর্কে সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখে। সরকার কোনো নীতি প্রণয়ন কিংবা কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগ নিলে অথবা আইনসভা কোনো আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিলে চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী (Pressure groups) প্রভাব বিস্তার করে উক্ত আইন বা সিদ্ধান্ত নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার চেষ্টা করে।

৯. চলমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ভূমিকা চাপ সৃষ্টিকারী গোষ্ঠী অনেকটা রাজনৈতিক দলের মতোই ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যেখানে বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা (Multi-party system) বিদ্যমান, সেখানে যেমন একাধিক বিরোধী দল সব সময় সরকারের বিরুদ্ধে লেগে থাকে তেমনি স্বার্থগোষ্ঠীগুলো বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব বিস্তার করে। ফলে স্বার্থগোষ্ঠীগুলো সুবিধাজনক ও নমনীয়তার প্রশ্নে বিদ্যমান ব্যবস্থা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়, নতুবা উক্ত ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য আন্দোলনের ডাক দেয়।

১০. সরকারের গণতান্ত্রিক চরিত্র সংরক্ষণ স্বার্থগোষ্ঠীগুলো সরকারের গণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখে। সরকারের নীতি অগণতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে তারা গঠনমূলক ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সরকারকে সতর্ক করে দেয়। সরকার এতে সংশোধিত হলে তারা আন্দোলনে যায় না। কিন্তু বিপরীত হলে স্বার্থগোষ্ঠীগুলো আন্দোলনে অবতীর্ণ হয়ে সরকারকে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি পালনে বাধ্য করে। 

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ