• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন

গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের কার্যাবলি বা ভূমিকা Functions or Role of Political Party in Democracy

গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও রাজনৈতিক দলব্যবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আধুনিক কালে গণতন্ত্রকে পরোক্ষ বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র বলা হয়। রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র বাস্তবায়িত হয়। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলব্যবস্থা অপরিহার্য অঙ্গ রূপে সর্বজন স্বীকৃত। আর তাই গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা বা কার্যাবলি ব্যাপক ও সুবিস্তৃত। নিম্নে তা নিয়ে আলোকপাত করা হলো:

১. দলীয় নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন দলীয় নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন রাজনৈতিক দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় এমনকি ভৌগোলিক সমস্যাদির সমাধান এবং দলের সামগ্রিক উন্নতি বিধানকল্পে পরিকল্পনা রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে স্থান লাভ করে।

২. নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন নির্বাচন হলো ক্ষমতায় যাবার সোপান স্বরূপ। তাই রাজনৈতিক দলের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া, যাতে জনগণ তাদের মনোনীত প্রার্থীকে ভোটদানের মাধ্যমে তাদের দলকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দেয়। কারণ যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নের ওপর দলের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে।

৩. জাতীয় সমস্যা নির্ধারণ: আধুনিক রাষ্ট্রগুলোর আয়তন যেমন বিশাল, জনসংখ্যাও তেমনি বিপুল। এরূপ রাষ্ট্রের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে হাজারো সমস্যা বিদ্যমান। রাজনৈতিক দলের কাজ হলো এসব সমস্যার মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং জাতীয় স্বার্থের সাথে সম্পৃক্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং সেগুলো সমাধানের পদক্ষেপ নেওয়া।

৪. নির্বাচনি প্রচারাভিযান পরিচালনা: রাজনৈতিক দল নির্বাচনি প্রচারকার্য চালায়। বিভিন্ন ধরনের সভা-সমিতিতে বক্তৃতা দান বা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ তাদের নির্বাচনি মেনিফেস্টো ও ভবিষ্যৎ কর্মপ্রচেষ্টা সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করে ও তাদের মনোনীত প্রার্থীকে ভোটদানের আহ্বান জানায়।

৫. সরকার গঠন: নির্বাচনে জয়ী রাজনৈতিক দলের প্রধান কাজ হলো সরকার গঠন করা। সরকার গঠন করার পর রাজনৈতিক দল তার নির্বাচনি মেনিফেস্টোতে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতিসমূহ পালনে তৎপর থাকে এবং পাশাপাশি দলীয় নীতি ও আদর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করে থাকে।

৬. রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচারকার্য ও পারস্পরিক পর্যালোচনা জনসাধারণকে তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং এভাবে রাজনৈতিক শিক্ষা ও চেতনার বিকাশ ঘটে।

৭. রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: জনগণ রাজনৈতিক দলগুলোর মাধ্যমেই রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অধিকতর অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। গণতন্ত্রে বহুদলীয় ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় জনগণ বিভিন্ন দলের আদর্শ, নীতি ও কর্মসূচির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সমর্থন ব্যক্ত করে। ফাইনারের মতে, "রাজনৈতিক দল জনগণকে রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে যোগদান করতে উৎসাহ যোগায়।"

৮. জনমত গঠন: গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য কাজ হলো জনমত গঠন করা। রাজনৈতিক দলসমূহ তাদের কর্মসূচি ও প্রচারণার মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যাগুলো সম্পর্কে জনগণকে নিজস্ব মতামত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্য করে।

৯. স্বৈরাচারী শাসনের পথ রুদ্ধ করে রাজনৈতিক দলব্যবস্থা স্বৈরাচারের পথ রুদ্ধ করে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকারি দল বিরোধী দলের অস্তিত্বের কারণে স্বৈরাচারী হতে পারে না। তাই লাঙ্কি বলেন, "দেশে স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা রোধের প্রধান রক্ষাকবচ রাজনৈতিক দল।"

১০. শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে ক্ষমতা হস্তান্তর রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সহাবস্থান নীতি মেনে চলে। সহাবস্থান নীতি মেনে চলার ফলে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করে। তাই দলীয় ব্যবস্থা সরকারের স্থায়িত্ব প্রদান করে। গণতন্ত্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের শান্তিপূর্ণ পদ্ধতি হলো নির্বাচন। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পালা-বদল হয়।

১১. সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে: আধুনিক রাষ্ট্রগুলোর আয়তন যেমন বিশাল তেমনি জনসংখ্যাও বিপুল। এই বিপুলসংখ্যক জনগণের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে সরকারের সাথে সম্পর্ক রাখা সম্ভব হয় না। তাই রাজনৈতিক দলগুলো সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।

১২. স্বার্থের একত্রীকরণ: আধুনিক রাষ্ট্রে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও শ্রেণির বসবাস। এ কারণে অনেক রাষ্ট্রকেই বহুজাতিক রাষ্ট্র বলা হয়। রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন শ্রেণির স্বার্থ সংরক্ষণ করে থাকে। অর্থাৎ স্বার্থের একত্রীকরণ এবং স্বার্থ প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে রাজনৈতিক দলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

১৩. স্বদেশপ্রেম জাগ্রতকরণ রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের মধ্যে ঐক্যবোধ জাগ্রতকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। দল ব্যবস্থা, জাতি, বর্ণ, ধর্ম প্রভৃতি ক্ষেত্রে সংকীর্ণতা দূর করে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের পরিপ্রেক্ষিতে দেশবাসীর মধ্যে স্বদেশ-প্রীতি জাগ্রত করে। যে দল দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক দেশের প্রতি আন্তরিকতার পরিচয় দেবে, সেই দল অধিক জনসমর্থন লাভে সক্ষম হবে।

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার তাপমান যন্ত্র হিসেবে রাজনৈতিক দল তার মান নির্ণয় ও নিরূপণ করে। রাজনৈতিক দলকে গণতন্ত্রের ভিত্তিমূল বলা যেতে পারে, কারণ রাজনৈতিক দলই জনমত গঠন করে। তাই রাজনৈতিক দল ব্যতীত গণতন্ত্র চলতে পারে না। অধ্যাপক ফাইনার তাই বলেন, "প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার মানেই দলীয় সরকার।" ("Representative government is the party government.") তাই গণতান্ত্রিক শাসন পরিচালনায় রাজনৈতিক দল অপরিহার্য।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ