• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

রাজনৈতিক দল, নেতৃত্ব ও সুশাসন

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধী দলের ভূমিকা Role of the Opposition Party in a Democratic State

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব একান্ত অপরিহার্য। বিশেষ করে যেসব রাষ্ট্রে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রচলিত আছে, সেখানে রাজনৈতিক দলব্যবস্থার বিকল্প নেই। Barker বলেন, "আইনসভা ও রাজনৈতিক দল অপরিহার্যভাবে সম্পর্কযুক্ত।" ("Parliament and parties are essentially connected.") সাধারণত সংসদীয় ব্যবস্থায় বহুদলীয় রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব বিদ্যমান। সাধারণ নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, সেই দল সরকার গঠনপূর্বক শাসনকার্য পরিচালনা করে। আর যে দলগুলো প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভে ব্যর্থ হয় তারা বিরোধী দল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। অর্থাৎ, আইনসভার সংখ্যালঘিষ্ঠ এবং সরকারি দলের বাইরে যেসব রাজনৈতিক দল প্রতিনিধিত্ব করে তাদেরকেই বিরোধী দল হিসেবে গণ্য করা হয়। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

১. সমস্যা নির্বাচন ও সমাধান বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দেশের প্রধান প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এবং সমস্যাগুলোকে তালিকাবদ্ধ করে সরকার ও জনগণের সম্মুখে তুলে ধরে। সরকারি দলের ব্যর্থতাকে পুঁজি করে বিরোধী দল কর্মসূচি গ্রহণ এবং দলীয় নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে এ ধারণা প্রদান করে যে, তাদের অনুসৃত নীতিমালা ও কর্মসূচির মাধ্যমেই এসব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব।

২. সরকারের সমালোচনা করা সমালোচনার মাধ্যমে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করা বিরোধী দলের প্রধান কাজ। বিরোধী দল অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সুপরিকল্পিত উপায়ে, গঠনমূলক ও দায়িত্বশীল মনোভাব নিয়ে সরকারের আপত্তিকর নীতিগুলোর বিরোধিতা করে সরকারের দোষত্রুটি জনগণের সামনে তুলে ধরে। এছাড়া বিরোধী দল জনগণের অভাব-অভিযোগ, দাবিদাওয়া সরকারের, দৃষ্টিগোচর করে তার সমাধানের পথ সুগম করে।

৩. জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠ দল মন্ত্রিসভা গঠন করে। মন্ত্রিসভা তাদের কার্যের জন্য ব্যক্তিগত ও যৌথভাবে আইনসভার নিকট দায়ী থাকে। মন্ত্রিসভার যেকোনো সিদ্ধান্ত বা নীতি সম্পর্কে বিরোধী দলের সদস্যগণ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। মন্ত্রিগণ তার জবাব দিতে বাধ্য থাকেন। কোনো আপত্তিকর সিদ্ধান্ত বা নীতির বিরুদ্ধে বিরোধী দলীয় সদস্যগণ অভিযোগ উত্থাপন করতে পারেন।

৪. রাজনৈতিক শিক্ষার প্রসার: আইনসভায় বিরোধী দলের সদস্যগণ জনগণের অভাব-অভিযোগ তুলে ধরেন। এছাড়া পত্র-পত্রিকা, বেতার, টিভি ইত্যাদি গণমাধ্যমগুলোতে বিরোধীদের আলোচনা-সমালোচনা প্রকাশ পায়। জনগণ এ থেকে দেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করে। ফলে রাজনৈতিক শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটে।

৫. বিকল্প সরকার: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধী দলকে বিকল্প সরকার বলা হয়। কারণ নির্বাচনে বিরোধী দল জয়ী হলে সরকার গঠন করে। এ ব্যাপারে বিরোধী দল সদা তৎপর থাকে এবং সরকারের সমালোচনা করে জনমতকে নিজেদের দলের অনুকূলে নিয়ে আসে।

৬. জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি: বিরোধী দল জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টিতেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সকল সংকীর্ণ স্বার্থ পরিহার করে সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে ঐকমত্য সৃষ্টিতে তৎপর হয়।

৭. সহযোগিতা প্রদান গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো বিরোধী দল আইন প্রণয়ন ও সরকারি নীতির বাস্তবায়নে সরকারি দলকে। 

৮. বিকল্প কর্মসূচি প্রদান বিরোধী দল সরকারের পাশাপাশি দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিভিন্নভাবে অংশ নিয়ে থাকে। এছাড়া জরুরি অবস্থায় এবং দুর্যোগকালীন সময় বিরোধী দল আরও তৎপর হয়ে ওঠে এবং আর্তমানবতার সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার জন্য যেমন রাজনৈতিক দল অপরিহার্য, তেমনি গণতান্ত্রিক সরকারকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিরোধী দলের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। বিরোধী দল জনগণের দাবি-দাওয়াকে অত্যন্ত সচেতনতার সাথে বিবেচনা করে- যাতে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হওয়া যায়। এজন্য সরকারি দলের সাথে প্রতিযোগিতামূলক কর্মসূচি প্রদান করে বিরোধী দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ