- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি
জনমত গঠনের বাহন বা মাধ্যম Agents or Media of Public Opinion
জনমত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রাণস্বরূপ। আধুনিক গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় জনমত সরকারকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালিত করে। জনমত গঠনে নিম্নোক্ত বাহন বা মাধ্যমগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:
১. পরিবার (Family): জনমতের প্রাথমিক ও প্রথম মাধ্যম হলো পরিবার। প্রতিটি মানুষ প্রথমে তার পরিবারেই দেশ, জাতি, সরকার ও বিশ্ব সম্পর্কে ধারণা ও মতামত লাভ করে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। পারিবারিক পরিবেশে মানুষ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মত গঠন করে। তাছাড়া পরিবারের অভিভাবক মহলের রাজনৈতিক মতামতের প্রতি সদস্যগণ অনুগত থাকে।
২. প্রচার মাধ্যম (Media): গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে প্রচার মাধ্যম জনমত গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। সংবাদপত্র, পত্র-পত্রিকা, পুস্তক-পুস্তিকা ইত্যাদির মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে জনসাধারণের জ্ঞান-পিপাসা পূরণে সক্ষম হয়েছে। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জনগণ দেশ-বিদেশের খবরাখবর জানতে পারে। এছাড়া পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বিভিন্ন পণ্ডিত ব্যক্তি বা বুদ্ধিজীবীমহলের বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ ছাপা হয়- যা থেকে জনগণ দেশ-বিদেশের চলমান সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হয়।..
৩. সভা-সমিতি (Public meeting): পত্র-পত্রিকা শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর জ্ঞান-পিপাসা পূরণ করলেও অশিক্ষিত, স্বল্প-শিক্ষিত মানুষের মতামত গঠনে সভা-সমিতি ও বক্তৃতামঞ্চের প্রভাব কোনো অংশে কম নয়। সভা-সমিতিতে বক্তৃতা প্রদান মানুষের রাজনৈতিক অধিকার। সেখানে দেশের অভিজ্ঞ, প্রবীণ, নবীন নেতৃবৃন্দ দেশ-বিদেশের প্রকৃত অবস্থা ও সমস্যা তুলে ধরে বক্তৃতা-বিবৃতি দেন। জনগণ এরূপ বক্তৃতা-বিবৃতি থেকে নিজেদের মতামত গঠনের সুযোগ পায়।
৪. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (Educational institutions): দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞানার্জন করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার্থীরা অনুকূল পরিবেশে আনন্দের মাধ্যমে বহুমুখী জ্ঞান লাভ করে যা তাদের চিন্তা- চেতনার উপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। শিক্ষালয়ে শিক্ষক সমাজ, দেশ ও বিশ্ব সম্পর্কে বাস্তব প্রেক্ষাপট তুলে ধরার পাশাপাশি সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ইত্যাকার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের যে আলোকপাত করেন, তা সংহত জনমত গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৫. রেডিও, টিভি ও চলচ্চিত্র (Radio, TV and cinemas): প্রচার ও বিনোদন মাধ্যম হিসেবে রেডিও, টিভি ও চলচ্চিত্র জনমত গঠনে প্রভৃত ভূমিকা পালন করে। রেডিও, টিভির মাধ্যমে দেশের নেতৃবৃন্দের সভা-সমাবেশের বক্তৃতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রচার করা হয়। সমাজ ও দেশের চলমান হাল-চালকে অবলম্বন করে যে সকল চলচ্চিত্র তৈরি হয় তাতে জনগণ বিভিন্ন বিষয়ে সচেতন হয়ে ওঠে এবং তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সুযোগ পায়। মূলত নাটক, সিনেমা, খবরাখবর, প্রামাণ্যচিত্র, যাত্রা, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা, সরকার ও বিরোধীদলের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রচারণা জনমত গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
৬. রাজনৈতিক দল (Political parties): গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় দল ব্যবস্থার কোনো বিকল্প নেই। অর্থাৎ রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমত গঠনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। প্রতিটি রাজনৈতিক দলই কতকগুলো আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। দলীয় আদর্শকে সামনে রেখে তারা নির্বাচনি কর্মসূচি ঘোষণা ও প্রচার করে জনসমর্থন লাভের চেষ্টা করে। সরকারি দল তাদের দলীয় কর্মসূচিকে জনগণের মাঝে জনপ্রিয় করে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করে। বিপরীতে বিরোধী দলগুলো সরকারি কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে নিজেদের কর্মসূচিকে উত্তম বলে দাবি করে প্রচারণা চালায়। এরূপ নানামুখী প্রচারণায় জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটে এবং সুস্থ ও সংহত জনমত গড়ে ওঠে।
৭. আইনসভা (Legislature): সাধারণত দেশের আইনসভায় জনগণের নির্বাচিত সদস্যরাই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। তারা আইনসভায় নিজ নিজ এলাকার জনগণের অভাব-অভিযোগ পেশ করে এবং উক্ত অভাব-অভিযোগের ওপর তুমুল তর্ক-বিতর্ক হয়। এতে জনগণ নিজস্ব মতামত প্রকাশ করার সুযোগ পায়।
৮. ধর্মীয় সংঘ (Religious association): অনেক সময় ধর্মীয় সাধক-গুরু/যাজকরা গুরুগম্ভীর বক্তৃতা দিয়ে থাকেন। যেগুলোর উপর ধর্মপরায়ণ লোকের ভাবাবেগের প্রতিফলন ঘটে। অর্থাৎ যেকোনো ধর্মের ধর্মগুরুরা যে সকল ধর্মীয় বাণী প্রচার করেন তাতে ধর্মপ্রাণ মানুষ অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে যা জনমত গঠনের হাতিয়াররূপে কাজ করে।
৯. পেশাজীবী সংগঠন (Professional organization) গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পেশাজীবী গোষ্ঠী বা সংগঠনগুলো নিজেদের দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলে। এর মাধ্যমে তারা পেশাগত দাবিদাওয়ার বাইরে অনেক সময় রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত হয়। এ সুবাদে দেশে বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে তাদের যোগাযোগ হয় এবং রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন হিসেবে কাজ করে।
১০. নির্বাচন (Election): আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের অনেকেই মনে করেন যে, নির্বাচনের মাধ্যমেও জনমত গঠিত হয়ে থাকে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় বহুদল ব্যবস্থার অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকায় নির্বাচনকে ঘিরে দলগুলোর মধ্যে দলীয় আদর্শ ও কর্মসূচিভিত্তিক প্রচার-প্রচারণা বেড়ে যায়। প্রতিটি দল নিজ দলীয় নীতি ও কর্মসূচি দিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন করে এবং প্রার্থীর পক্ষে জোর প্রচারণা চালিয়ে বিজয় অর্জনের আপ্রাণ চেষ্টা করে। বিশেষত নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য দলগুলো নিজ নিজ ব্যানারে আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। জনগণ দলীয় নীতি ও কর্মসূচি সেই সাথে প্রার্থীকে বিচার-বিবেচনা করে সমর্থন ব্যক্ত করে।
সর্বোপরি উপর্যুক্ত আলোচনার নিরিখে প্রতীয়মান হয় যে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা জনমতের উপর ভিত্তিশীল হলেও সুষ্ঠু ও সুসংহত জনমত গঠনে কোনো একক বাহন বা মাধ্যমের ভূমিকা যথেষ্ট নয়; বরং একাধিক মাধ্যমের সমন্বয়ে জনমত সুদৃঢ়ভাবে গড়ে ওঠে।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ