- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি Political Culture of Bangladesh
১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের মানুষ একটি শোষণহীন-অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। স্বাধীনতার এতদিন পরে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায় নি, গড়ে ওঠে নি কোনো উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি। ফলে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রত্যাশিত সেই বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে নিম্ন রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিদ্যমান। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. ধর্মের প্রভাব: বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো ধর্মের প্রভাব। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, রাজনৈতিক ও রাজনীতিবিদ সকলেই ধর্মকে সমীহ করে চলে। দেশের অধিকাংশ মানুষ মুসলিম হওয়ায় ইসলাম ধর্ম, রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের নির্ধারক শক্তি হিসেবে কাজ করে। দেশের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষ দলও ধর্মহীন নয়। এমনকি যারা প্রগতিশীল ও বামপন্থী রাজনীতি করেন তাঁরাও ধর্মের প্রতি দুর্বল। আবার কোনো কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী সাধারণ মানুষের ধর্মানুরাগকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের প্রয়াস চালায়।
২. রক্ষণশীলতা: বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ রক্ষণশীল এবং গ্রামে বাস করে। তারা তাদের দীর্ঘদিনের পুরাতন বিশ্বাস ও ধ্যানধারণা আঁকড়ে ধরে থাকে। রক্ষণশীল মানসিকতার কারণে জাতীয় রাজনীতি সম্পর্কে তাদের আগ্রহ কম। বর্তমানে শিক্ষা যোগাযোগ ও প্রচারের মাধ্যমে এ অবস্থার পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
৩. সহিংসতা: রাজনৈতিক সহিংসতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি বড় বৈশিষ্ট্য। এখানে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান আলোচনার টেবিলে না হয়ে রাজপথে সমাধান চাওয়া হয়। যার ফলে, রাজনৈতিক কোন্দল, জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা, খুন ইত্যাদি চলতে থাকে। স্বাধীনতা পূর্ব থেকে বর্তমান পর্যন্ত রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে রাজনৈতিক সংস্কৃতির উত্তরণ ঘটেনি।
৪. আমলাতন্ত্রের প্রাধান্য: বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্রের প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ ও ক্ষমতা পরিবর্তনে আমলাতন্ত্র নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করে। রাজনৈতিক সরকারগুলোর দুর্বলতার সুযোগে সামরিক-বেসামরিক আমলারা ঐক্যবদ্ধ ও ক্ষমতাশালী হয়। উচ্চপদস্থ আমলারা প্রকাশ্যে অনেক সময় সরকারি দল এবং বিরোধী দলের সাথে আঁতাত গড়ে তোলে।
৫. বহুদলীয় ব্যবস্থা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উল্লেখযোগ্য দিক হলো বহুদলীয় ব্যবস্থা। বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্বকারী বহু দল বিদ্যমান। এখানে যেমন উদার গণতান্ত্রিক দল রয়েছে, তেমনি রক্ষণশীল দল, আবার বামপন্থীও রয়েছে। আবার ধর্মকে কেন্দ্র করে বহু ইসলামি দল রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রতিনিধিত্ব করছে।
৬. সহনশীলতার অভাব বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। এ ধরনের সংস্কৃতি গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার পথকে বাধাগ্রস্ত করে।
৭. রাজনৈতিক কোন্দল বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে রাজনৈতিক কোন্দল। ছোট-বড় প্রতিটি রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী গোষ্ঠী, অন্যান্য সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক গোষ্ঠী সকলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল দ্বারা আক্রান্ত। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা, ক্ষুদ্র স্বার্থ, ব্যক্তিগত লাভ-লোকসান, আন্তরিকতা ইত্যাদি নিয়ে দলের ভেতর-বাইরে এই কোন্দল বিস্তার লাভ করে। রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে নিজেরা নিজেদের শক্তি ক্ষয় করছে' এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারছে না।
৮. বিশেষ ব্যক্তির অভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যক্তি বিশেষের প্রভাব লক্ষণীয়। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশেষ প্রভাব এদেশের রাজনীতিতে সবসময় লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানেরও প্রভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিদৃষ্ট হয়।
৯. জোট গঠন প্রবণতা বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলসমূহ নিজেদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন জোট গঠন করে থাকে। যুক্তফ্রন্ট, ঐক্য ফ্রন্ট, ঐক্য জোট ইত্যাদি নামে এগুলো গঠিত হয়। নীতি-আদর্শ, কর্মসূচি, অস্তিত্ব রক্ষা ইত্যাদির কারণে জোট গঠিত হয় বলে যুক্তি দেখানো হয়। রাজনীতিবিদদের দল ত্যাগ, নতুন দল গঠন, নতুন দলে যোগদান, জোট-গঠন ও ভাঙন ইত্যাদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিদ্যমান।
১০. গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অভাব বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি গণতান্ত্রিক হলেও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সেভাবে গড়ে ওঠেনি। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে গণতন্ত্র চর্চা হয় না। বিরোধী দলের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো হয় না। পরমতসহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহনশীলতার মনোভাব গড়ে না ওঠার কারণে এখানে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি।
১১. মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সংকীর্ণ বা অধীন সংস্কৃতির উপাদান লক্ষ করা যায়। আবার বাংলাদেশের জনগণ রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় না, তারা রাজনীতিতে সচেতন এবং অংশগ্রহণ করে। অগণতান্ত্রিক শক্তি এখানে মাঝে মাঝে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করলেও জনগণ একতাবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র ছিনিয়ে আনে। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি মিশ্র রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নতমানের না হলেও এদেশের মানুষ গণতন্ত্র ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে বার বার জেগে উঠেছে। দেশপ্রেমের প্রবল তাগিদে রাজপথে নেমেছে। তাই রাজনীতির উত্থান-পতনের এ পথ ধরে এখানে উন্নতমানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। সে আশায় অবশ্যই বুক বাঁধা যায়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ