- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি
গণতন্ত্রে জনমতের গুরুত্ব Importance of Public Opinion in Democracy
গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রাণ হলো জনমত। অনেকে জনমতের বাণীকে ঈশ্বরের বাণীরূপে কল্পনা করেছেন। বলা হয়, "Public opinion rules the world." অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বই জনমত কর্তৃক শাসিত হচ্ছে।
নিম্নে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো:
১. সরকার গঠন: আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের ওপর ভিত্তি করে সরকার গঠিত হয়। নির্বাচনের আগে জনমত যে দলের পক্ষে যায়, সে দলই নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে থাকে। সরকার তার জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য সবসময় জনমতকে সমীহ করে চলে।
২. জনকল্যাণ সাধন জনগণের রায় নিয়ে যে সরকার গঠিত হয়, সে সরকার জনমতের চাপে বা ভয়ে জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চালায়। কারণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকারগুলো ভালোভাবেই জানে যে, জনবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না বা পুনরায় ক্ষমতায় আসতে পারবে না।
৩. সরকারকে নিয়ন্ত্রণ: গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সরকার নিয়ন্ত্রণে জনমত বিরাট ভূমিকা পালন করে। সজাগ জনমতের কারণে সরকার তার অঙ্গীকার পালনে তৎপর থাকে। জনমতের চাপে সরকার জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। এভাবে জনমত সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
৪. মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতই জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে। জনগণের ব্যক্তিস্বাধীনতা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন অধিকার লঙ্ঘন করে সরকার জনগণের বিরাগভাজন হতে চায় না। কারণ এতে জনমত বিপক্ষে চলে যেতে পারে।
৫. সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা রোধ: জনমতই গণতান্ত্রিক সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার পথকে রুদ্ধ করে দেয়। শাসকশ্রেণি সর্বদাই জনমতের প্রতি দৃষ্টি রেখেই সরকারি নীতিনির্ধারণ ও শাসনকার্য পরিচালনা করে। তারা জনমতকে উপেক্ষা করে খেয়ালখুশিমতো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
৬. জনমতই সার্বভৌম গণতন্ত্রে জনমতই সার্বভৌম ক্ষমতার আধার বলে বিবেচিত হয়। নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে এ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। জনপ্রতিনিধিগণ জনমতের প্রতি লক্ষ রেখে শাসনকার্য পরিচালনা করে।
৭. গণতন্ত্রের গতিসঞ্চার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রক্ষণশীল রাজনৈতিক দলের প্রগতিবিরোধী মনোভাব দূর করে জনমত গণতন্ত্রের গতিসঞ্চার করে যাতে সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত হয়। এতে গণতান্ত্রিক রীতিনীতির বিকাশ ঘটে।
৮. স্থিতিশীলতা আনয়ন জনমত আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা আনয়ন করে। জনমতের অনুকূলে দেশের শাসনকার্য পরিচালিত হলে জনগণ বিদ্রোহ বা বিপ্লবের দিকে পা বাড়ায় না; কিংবা কোনো কুচক্রী মহল অভ্যুত্থান ঘটানোর দুঃসাহস পায় না।
৯. সরকারের স্থায়িত্ব জনমত সরকারের স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা বিধান করে। কারণ সরকারি নীতি বা সিদ্ধান্ত জনমতের প্রতিকূলে গেলে ঘন ঘন সরকারের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। আর সরকারের নীতি ও কার্যকলাপ জনমত কর্তৃক সমর্থিত হলে সরকারের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়।
১০. দমননীতির অবসান: গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় স্বাধীন মতামত প্রকাশের অবকাশ আছে। এজন্য সরকার জনমতের ভয়ে দমননীতি অনুসরণ করে কোনো মত ও আদর্শকে ধ্বংস করে গণতন্ত্রের বিপদ ডেকে আনতে পারে না।
১১. দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন জনমত দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গঠন ও পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জনমতের ভয়ে সরকারি প্রশাসন ও প্রতিষ্ঠানসমূহে দুর্নীতি করতে সাহস পায় না। তাই জনমত দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করে সুশাসনের পথ প্রশস্ত করে।
১২. জনগণের স্বার্থে আইন তৈরি হয় সরকারি নীতি ও আইনে জনমতের প্রতিফলন ঘটে। জনগণও সে আইন নিষ্ঠার সাথে মেনে চলে। তখন সরকার নিজ থেকেই জনস্বার্থে আইন তৈরিতে উদ্যোগী হয়। জনস্বার্থ রক্ষিত হলে সরকারি নীতি বাস্তবায়নে বলপ্রয়োগেরও প্রয়োজন হয় না।
১৩. বিরোধী দলের সক্রিয় ভূমিকা গণতন্ত্রে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো জনমতের আনুকূল্য বা সমর্থন লাভের জন্য সরকারের বিভিন্ন দোষত্রুটি জনসম্মুখে তুলে ধরে। ফলে সরকার ঐসব দোষ-ত্রুটি দূরীকরণে তৎপর হয়।
পরিশেষে বলা যায়, "সজাগ ও সতর্ক জনমত গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত।" ("An alert and intelligent public opinion is the first condition to democracy.") জনমত গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে। তাই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নাগরিক অধিকার, জনস্বার্থ সংরক্ষণ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনমতের গুরুত্ব অপরিসীম।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ