- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি
রাজনৈতিক সংস্কৃতির শ্রেণিবিভাগ (Classification of Political Culture)
রাজনৈতিক সংস্কৃতির শ্রেণিবিভাগ আলোচনার পূর্বে অনেকেই বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি আলোকপাত করেছেন। অ্যালান আর, বল (Alan R. Ball) তাঁর 'Modern Politics and Government' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, রাজনৈতিক সংস্কৃতির শ্রেণিবিভাগের ক্ষেত্রে কতকগুলো বিষয় বিচার-বিবেচনা করা প্রয়োজন।
জি. এ. অ্যালমন্ড ও সিডনি ভারবা (G. A. Almond & Sidney Verba) তাঁদের "The Civic Culture' গ্রন্থে তিন ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো:
১. সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি (Parochial Political Culture)
২. অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি (Participatory Political Culture)
৩. নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি (Subject Politcal Culture)
বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও সমাজবিজ্ঞানীদের আলোচনার আলোকে রাজনৈতিক সংস্কৃতির শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো:
১. সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি (Parochial political culture): যেসব রাজনৈতিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক বিষয়াদি সম্পর্কে ব্যক্তিবর্গের চেতনা ও আগ্রহ কম থাকে তাকে সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলে। সাধারণত সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত বা অনুন্নত দেশসমূহে এবং সনাতন সমাজ ব্যবস্থায় এরূপ সংস্কৃতির অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। বস্তুত এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে রাজনৈতিক বিষয়ে জনগণ অসচেতন থাকে। সংকীর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জনগণের মধ্যে বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও অসচেতনতা পরিলক্ষিত হয়। তবে এরূপ সংস্কৃতির অবসানের লক্ষ্যে সমাজের মধ্যে শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার, রাজনৈতিক যোগাযোগ জোরদার ইত্যাকার বিষয়ের উপর গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন।
২. অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি (Participatory political culture): রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রত্যেক নাগরিকের সক্রিয় অংশগ্রহণ নির্দেশ করে অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি। অর্থাৎ প্রত্যেকেই সচেতন ও সক্রিয়ভাবে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করে থাকে। এতে' প্রত্যেক নাগরিক নিজেকে রাজনৈতিক ব্যবস্থার সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে। নিজের অধিকার ও কর্তব্য, সরকারের নীতি ও সিদ্ধান্তসমূহ ইত্যাদি বিষয়ে আন্তরিক ও সচেতন থাকে। বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নাগরিকের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও মূল্যায়ন এ ধরনের অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি ব্যক্তিবর্গের মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি অনুকূল কিংবা প্রতিকূল হতে পারে। তারা বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা সংরক্ষণে ব্রতী হতে পারে আবার এর আমূল পরিবর্তনের ব্যাপারেও উদ্যোগী ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে।
৩. নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি (Subject political culture): নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জনগণ রাজনৈতিক বিষয়াদি সম্পর্কে সচেতন থাকে। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার কোনো সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করে না বরং সরকারের সিদ্ধান্তকে কর্তৃত্বসম্পন্ন বলে স্বীকার করে নেয়। তাছাড়া সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় জনগণ তেমন আগ্রহ দেখায় না। রাজনৈতিক বিষয়াদি সম্পর্কে জনগণের মধ্যে এরূপ প্রবণতা বিদ্যমান থাকায় এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলা হয়। এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জনগণ 'Input structure' তথা উপকরণ কাঠামোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করার প্রয়োজন মনে করে না।
৪. সংকীর্ণ নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি (Parochial subject political culture): যে সমাজে জনগোষ্ঠীর এক বৃহৎ অংশ উপজাতীয়, গ্রামীণ বা সামন্ততান্ত্রিক কর্তৃত্বকে প্রত্যাখ্যান করে এবং বিশেষীকৃত কেন্দ্রীয় সরকার কাঠামোভিত্তিক অধিকতর জটিল, রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাই সংকীর্ণ নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জনগণের আনুগত্য আঞ্চলিক গণ্ডি পেরিয়ে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষের দিকে ধাবিত হয়।
৫. নিষ্ক্রিয়-অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি (Subject-participatory political culture): এ ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে জনগণের মধ্যে নিষ্ক্রিয় ও অংশগ্রহণ উভয়ের সংমিশ্রণ পরিলক্ষিত হয়। একদিকে যেমন জনগোষ্ঠীর এক বৃহৎ অংশ 'Input' কার্যাবলি তথা সরকারের কাছে দাবিদাওয়া ও প্রাপ্য উত্থাপন সম্পর্কে সচেতন তেমনি নিজের অধিকার ও কর্তব্য (Rights and Duties) সম্পর্কেও সচেতন। অন্যদিকে জনগোষ্ঠীর একটি অংশ কর্তৃত্ববাদী সরকার কাঠামোর প্রতি নিষ্ক্রিয় প্রবণতা দেখায় এবং নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে উদাসীন থাকে।
৬. সংকীর্ণ অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি (Parochial-participatory political culture): অধিকাংশ নবীন রাষ্ট্রে সংকীর্ণ প্রকৃতির রাজনৈতিক সংস্কৃতি অধিক শক্তিশালী, তবে কাঠামোগত বিন্যাস থাকে অংশগ্রহণমূলক। এক্ষেত্রে জনগণ রাজনৈতিক ব্যবস্থার Input ও output সম্পর্কে সচেতন থাকে না। এজন্য তাদের সচেতন করে তোলা বড় ধরনের সমস্যা রূপে গণ্য হয়।
এছাড়া ওয়াল্টার এ. রোজেন বাম (Walter A. Rosen Baum) দুধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কথা উল্লেখ করেছেন। যথা:
১. খণ্ডিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি (Fragmented political culture) ও
২. অখণ্ড রাজনৈতিক সংস্কৃতি (Integrated political culture) 1
আবার এস. ই. ফাইনার (S. E. Finer) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'The Man on Horsback'-এর মধ্যে চার ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কথা বলেছেন। সেগুলো হলো:
১. বিকশিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি (ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ড)।
২. উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি (মিশর, আলজেরিয়া, কিউবা)।
৩. নিম্নমানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি (ইরাক, সিরিয়া, বার্মা)।
৪. অতি নিম্নমানের রাজনৈতিক সংস্কৃতি (হাইতি, কংগো, প্যারাগুয়ে)।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ