• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি

নির্বাচকমণ্ডলীর গুরুত্ব ও ভূমিকা (Role and Importance of Electorate)

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচকমণ্ডলীর গুরুত্ব ও ভূমিকা অপরিসীম। নিচে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

১. প্রতিনিধি নির্বাচন নির্বাচন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রেই স্বীকৃত হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলে ঘোষিত হয়। জনগণের এ সার্বভৌম ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রতিনিধি। নির্বাচনের মাধ্যমে। ভোটাধিকার নাগরিকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক অধিকার। নির্বাচকমণ্ডলী ভোট প্রদানের মাধ্যমে সৎ ও যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচন করে সরকার গঠন ও শাসনকার্য পরিচালনায় অংশগ্রহণ করে।

২. নীতি নির্ধারণে অংশগ্রহণ আইন প্রণয়ন ও সরকারি নীতি নির্ধারণে নির্বাচকমণ্ডলীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচকমণ্ডলী সাধারণত কতকগুলো পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ পদ্ধতি যেমন- গণউদ্যোগ (initiative), গণভোট (plebiscite). গণনির্দেশ (referendum) ইত্যাদির মাধ্যমে আইন প্রণয়ন, সংশোধন, পরিবর্তন ও রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে অংশগ্রহণ করে।

৩. প্রতিনিধি প্রত্যাহার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আইনসভার সদস্যগণ জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু কোনো প্রতিনিধি যদি পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ক্রমাগত জনমত বিরোধী কাজ করতে থাকে তাহলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই নির্বাচকমণ্ডলী উক্ত প্রতিনিধির উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে তার পদত্যাগ দাবি করতে পারে। রাশিয়া, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি রাষ্ট্রে এ পদ্ধতি প্রচলিত আছে।

৪. সংবিধান সংশোধন: কোনো কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচকমণ্ডলী সংবিধান সংশোধনে অংশগ্রহণ করে থাকে। সংবিধান সংশোধন বা নতুন সংবিধান প্রণয়নের পূর্বে নির্বাচকমণ্ডলীর মতামত গ্রহণ করা হয়। এভাবে নির্বাচকমণ্ডলী দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৫. জনমতের প্রতিফলন: নির্বাচকমণ্ডলী জনমতের মাধ্যমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংবাদপত্র, সভা-সমিতি, রাজনৈতিক দল ইত্যাদির মাধ্যমে এর প্রকাশ ঘটে। আইন প্রণেতা ও নীতি নির্ধারক মহল জনমতের গতিপ্রকৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়।

৬. গণতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচকমণ্ডলী সরকারের জনস্বার্থ বিরোধী নীতির সমালোচনা করে সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা রোধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে- যা গণতন্ত্রের বিকাশে যথেষ্ট সহায়ক।

৭. ক্ষমতার আদি উৎস সংসদীয় পদ্ধতিতে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। আবার রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারে রাষ্ট্রপতি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়। সুতরাং নির্বাচকমণ্ডলী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আদি উৎস হিসেবে পরিগণিত।

৮. রাজনৈতিক দলের উপর প্রভাব নির্বাচকমণ্ডলী রাজনৈতিক দলের উপরও প্রভাব বিস্তার করে। তাদের দাবিদাওয়া ও মনোভাব দ্বারা রাজনৈতিক দল প্রভাবিত হয়ে থাকে।

৯. বিচারক নিয়োগ: কোনো কোনো রাষ্ট্রে বিচারক নিয়োগেও নির্বাচকমণ্ডলীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। তবে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাধারণত রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক বিচারক নিয়োগ করা হয়। আর রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচকমণ্ডলী কর্তৃক নিযুক্ত হন।

১০. সরকারের চতুর্থ অঙ্গ: গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচকমণ্ডলীর এরূপ গুরুত্বপূর্ণ ও সুদূরপ্রসারী ভূমিকাকে বিবেচনা করে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নির্বাচকমণ্ডলীকে সরকারের চতুর্থ অঙ্গ বলে মন্তব্য করেছেন। কারণ সংসদীয় ব্যবস্থায় যেমন আইনসভার আস্থা হারালে সরকারকে পদত্যাগ করতে হয় তেমনি কোনো প্রতিনিধি নির্বাচকমণ্ডলীর সমর্থন হারালে তাকে পদত্যাগ করতে হয়। অধ্যাপক গেটেল (Prof. Gettell) বলেন, "নির্বাচকমণ্ডলী কার্যত সরকারের একটি স্বতন্ত্র ও প্রভাবশালী শাখা, কারণ এর বিস্তৃত ক্ষমতা রয়েছে এবং তা সরকারি ব্যবস্থায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রযোজ্য হয়।"

উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আধুনিক গণতন্ত্রে জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক। আর এ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে। নির্বাচকমণ্ডলীই সরকারের গঠনপ্রকৃতি এবং কার্যকরীভাবে সরকার নিয়ন্ত্রণ করে। এভাবে নির্বাচকমণ্ডলী শক্তিশালী ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সরকারের স্বতন্ত্র ও গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে পরিণত হয়েছে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ