• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি

জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি

গণতন্ত্র ও জনমত Democracy and Public Opinion

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি রাষ্ট্রেই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রচলিত আছে। গণতন্ত্র এমন এক ধরনের শাসন ব্যবস্থা যেখানে আপামর জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সরকার পরিচালিত হয়। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনমতের প্রাধান্য স্বীকৃত হয়। এজন্য বলা হয় জনমতই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার মূলভিত্তি।

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে সরকারের পরিবর্তন ঘটে। মূলত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সরকারের গঠন, সরকারের পরিবর্তন এবং সরকার পরিচালনা জনমতের উপর নির্ভরশীল। আধুনিককালে গণতন্ত্র বলতে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র বোঝায়। আর প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন ঘটে। নির্বাচনে জনগণের রায়ের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় এবং প্রতিনিধিরা সরকার গঠন ও পরিচালনা করে। তাই গণতন্ত্রে জনমতকে উপেক্ষা করে সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারে না। জোস আরগেটা ওয়াই ব্যাসেট মনে করেন, "জনমত ব্যতীত অন্য কোনো কিছুর ওপর নির্ভর করে পৃথিবীতে কেউ কোনোদিন শাসন করতে পারেনি।" গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার যে সকল মূলনীতি রয়েছে; যেমন- অধিকার, স্বাধীনতা, সাম্য ইত্যাদির সুষ্ঠু ও যথাযথ চর্চা ও বাস্তবায়নের জন্য জনমতের গুরুত্ব অপরিসীম। তবে এজন্য প্রয়োজন বুদ্ধিদ্বীপ্ত, সচেতন ও প্রভাবশালী জনমত।

গণতন্ত্রের প্রাণ হলো জনমত। বলা হয়, "সজাগ ও সতর্ক জনমত গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত।" ("An alert and intelligent public opinion is the first condition for democracy.") গণতন্ত্রে জনমতকে ঈশ্বরের বাণীর মতো বিবেচনা করা হয়। তাই দার্শনিক রুশো বলেন, "The voice of the people, voice of God."

উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগণের মতামত অত্যন্ত মূল্যবান। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে সরকার যত বেশি জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সে সরকার তত বেশি গণতান্ত্রিক।

গণতন্ত্র ও জনমত একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। সুষ্ঠু জনমত যেমন গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে, তেমনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা জনমত বিকাশেও বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে। কোনো স্বৈরাচারী বা একনায়কতান্ত্রিক পরিবেশে যেমন জনমত প্রকাশ করার সুযোগ নেই তেমনিভাবে জনমতের অনুপস্থিতিতে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধনী, গরিব, নারী পুরুষ, কালো-সাদা নির্বিশেষে সকল মানুষ একদিকে যেমন তাদের মত প্রকাশের সুযোগ পায় অন্যদিকে সরকারের কোনো নীতি বা কার্যক্রমে যদি সাম্য ও স্বাধীনতা বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা যায় তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠে। সরকার স্বাভাবিকভাবেই তখন জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়।

জবাবদিহিতা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাণ। জনমতের মাধ্যমে সরকারের এই জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। 'সরকার তার সকল কাজকর্মের জন্য জনগণের নিকট দায়ী থাকে। সরকার তার যেকোনো কর্মসূচি ঘোষণা করার পূর্বে জনমতের প্রতি আগে লক্ষ্য রাখে। জনমতের বিপক্ষে যায় এমন কোনো কর্মসূচি সরকার গ্রহণ করে না। এভাবে জনগণের সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত হয়। গণতন্ত্রের অন্যতম আদর্শ আইনের শাসন। আইনের শাসন ব্যতীত কোনো রাষ্ট্রে বা সমাজে গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারে না।

আইনের শাসনের মূল কথা হলো আইনের দৃষ্টিতে সকলে সমান। আইনের শাসন নিশ্চিত হয় জনমতের মাধ্যমে। জনগণ যদি কোনোভাবে বুঝতে পারে যে রাষ্ট্রে আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে, সাথে সাথেই সরকারের বিরুদ্ধে একটি জনমত গড়ে উঠে। তখন সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো নৈতিক অধিকার থাকে না। এভাবে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনমত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমুন্নত রাখে।

গণতন্ত্রে জনমত স্বৈরতন্ত্র প্রতিহত করে। গণতান্ত্রিক সরকারকে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে হয়। ক্ষমতা শেষে আবার জনগণের নিকট ফিরে যেতে হয়। তাই সরকার সব সময় জনগণের মতামতের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। জনমতকে এড়িয়ে ক্ষমতায় থাকা সম্ভব নয় তাই সরকার সব সময় জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। ফলে সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে না।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ