- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি
বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় জনমতের ভূমিকা Role of Public Opinion in Different Types of Political System
বিভিন্ন সরকার ব্যবস্থায় জনমতের ভূমিকা বিভিন্ন রকম। নিচে এ সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:
উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা (Liberal democracy): এ ব্যবস্থায় জনগণের বাক্-স্বাধীনতা পূর্ণমাত্রায় স্বীকৃত হয়। সভা-সমিতি, রাজনৈতিক দল গঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ইত্যাদি করার আইনসঙ্গত অধিকার সব নাগরিকের জন্য উন্মুক্ত থাকে। ফলে জনগণ স্বাধীনভাবে তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পায়। গণতন্ত্রকে জনগণ কর্তৃক পরিচালিত শাসন ব্যবস্থা বলা হয়। এতে জনগণ সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। সরকার জন-স্বার্থবিরোধী কোনো নীতি বা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করতে পারে। জনমতের উপর গণতান্ত্রিক সরকারের সাফল্য নির্ভরশীল। এজন্য সরকার জনমতকে উপেক্ষা করতে পারে না। জনমত সরকারকে গতিশীলতা দান করে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করে।
সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা (Socialism): সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় একাধিক রাজনৈতিক দল না থাকায় দেশের প্রচার
মাধ্যমগুলোও থাকে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত। একটিমাত্র জাতীয় দল কমিউনিস্ট পার্টি এবং কমিউনিস্ট সরকারের অপ্রতিহত নিয়ন্ত্রণে জনমতের আত্মপ্রকাশ সম্ভব হয় না। সমাজতন্ত্রে সর্বহারা শ্রেণির একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে সমাজ থেকে কমিউনিস্ট মতাদর্শের বিরোধী সকল মত ও দলকে কঠোরভাবে উৎখাত করা হয়। সুতরাং এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ সর্বহারা শ্রেণি রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।
স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা (Tyranny): স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় কঠোর হস্তে সরকার বিরোধী সব মত ও দলকে দমন করে একাধিপত্য কায়েম করা হয়। এ ব্যবস্থায় সংখ্যালঘু ক্ষমতাসীনদের মতকে জনমত হিসেবে প্রচার করা হয়। শাসকবর্গ রাজনৈতিক সংহতি ও আনুগত্য লাভের জন্য বলপ্রয়োগের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করে বিধায় সরকারবিরোধী জনমত সহজে আত্মপ্রকাশ করতে পারে না।
ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা (Fascism): ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় সমাজের সর্বস্তরে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ পরিব্যাপ্ত। ব্যক্তির সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এমনকি পারিবারিক জীবনের উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান। সুতরাং এ ব্যবস্থায় জনমত প্রকাশের প্রশ্নই ওঠে না। শুধু সরকারি কর্তৃপক্ষের মতামতকে দেশের সব প্রচার মাধ্যমে এককভাবে প্রচার করা হয়। সরকার বিরোধী সবকিছুকে কঠোর হস্তে দমন করা হয়। তাই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থায় জনমতের ভূমিকা নিষ্ক্রিয় বলা যায়। জার্মানি ও ইতালিতে এরূপ ব্যবস্থা বিদ্যমান ছিল।
পরিশেষে বলা যায়, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। গণতান্ত্রিক সরকার জনমতের উপর নির্ভরশীল বলে জনমতকে উপেক্ষা করতে পারে না। জনমত বিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ মানেই সরকারের পতন। এজন্য গণতন্ত্রে জনমত গঠনের বাহন বা মাধ্যমগুলোর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ