- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি
সর্বজনীন ভোটাধিকারের পক্ষে যুক্তি (Arguments for Universal Adult Suffrage)
ভোটাধিকার নাগরিকের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক অধিকার। অনেক গণতন্ত্রী মনে করেন ভোটাধিকার সর্বজনীন হওয়া উচিত। অর্থাৎ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সকলের ভোট দানের অধিকার থাকা উচিত। তাদের যুক্তিসমূহ নিম্নরূপ:
১. গণ-সার্বভৌমত্বের বাস্তবায়ন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের সমষ্টিগত ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে এই গণ-সার্বভৌমত্বের (Popular Sovereignty) বাস্তবায়ন সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।
২. জন্মগত অধিকারের প্রকাশ অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন ভোটাধিকার নাগরিকের জন্মগত অধিকার। তাই কাউকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা উচিত নয়।
৩. আইনের সর্বজনীনতা রাষ্ট্রের আইন ও শাসননীতি সকলের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। আইন সকলের স্বার্থকেই রক্ষা করে। তাই সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে আইন ও শাসননীতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ থাকা উচিত।
৪. গণতন্ত্রের বিকাশ: সর্বজনীন ভোটাধিকার নীতিতে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। যেকোনো নির্বাচনে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ নির্বাচনে ভোটদানের সুযোগ পায়। একদিকে যোগ্য প্রার্থীদের সমারোহ ঘটে অন্যদিকে সর্বশ্রেণির ভোটার তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচন করতে পারে।
৫. সরকারের স্বৈরাচারিতা রোধ: সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকার স্বীকৃত হলে সরকার স্বৈরাচারী হওয়ার সুযোগ পায় না। কারণ প্রত্যেকেই সরকারের নীতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন থাকে। সরকার জনস্বার্থ বিরোধী কোনো নীতি গ্রহণ করলে পরবর্তী নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করতে পারে
৬. সমানাধিকারের নিশ্চয়তা: এই নীতিতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ সমান অধিকার ভোগের সুযোগ পায়। কারো জন্য কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা লাভের অবকাশ থাকে না।
৭. শান্তি-শৃঙ্খলার স্থায়িত্ব বৃদ্ধি: সর্বজনীন ভোটাধিকার নীতি না না থাকলে সরকার কোনো বিশেষ শ্রেণির স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করবে। ফলে সরকার বিরোধী মনোভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। এরূপ মনোভাব কখনো বিক্ষোভ, বিদ্রোহের রূপ নিতে পারে। এতে রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা হুমকির সম্মুখীন হবে। আর প্রাপ্তবয়স্কদের নীতি গৃহীত হলে রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকবে।
৮. রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার এ ব্যবস্থায় জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক শিক্ষার বিস্তার ঘটে। একদিকে একাধিক রাজনৈতিক দল তাদের বহুমুখী কর্মসূচি নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, অন্যদিকে সর্বস্তরের ভোটারগণ রাজনৈতিক দলগুলোর নীতি ও কর্মসূচি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে এবং পছন্দের প্রার্থীকে ভোটদানের সুযোগ পায়।
৯. শ্রেণি-বৈষম্য রোধ সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের পক্ষে আরেকটি যুক্তি হলো এতে সমাজে শ্রেণি-বৈষম্য রোধ হয়। কারণ এতে সব শ্রেণির জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান থাকে।
১০. ব্যক্তিত্বের বিকাশ: মানুষের ব্যক্তিত্বের বিকাশের অন্যতম উপাদান হলো ভোটাধিকার। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক নিজস্ব বুদ্ধি ও বিচার-বিবেচনা প্রসূত নির্বাচনে প্রার্থীকে ভোট দিয়ে থাকে।
১১. দেশপ্রেম জাগ্রত হয় সর্বজনীন ভোটাধিকার নীতিতে জনগণ দেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করে। দেশের প্রতিরক্ষার কাজেও নিজেকে নিয়োজিত করার মনোভাব পোষণ করে। এভাবে দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ