• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

জনমত ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি

রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণ Political Culture and Political Participation

রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারণা প্রাচীন। তবে অতি সাম্প্রতিককালে রাজনীতি অধ্যয়নের ক্ষেত্রে এই ধারণা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কারণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার (Political system) অচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিগণিত। প্রতিটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার মূলে রয়েছে কতকগুলো লক্ষ্য ও মূল্যবোধ। তাই কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সঠিক ও যথার্থভাবে মূল্যায়নের জন্য প্রয়োজন ঐ সব লক্ষ্য ও মূল্যবোধের অনুধাবন। আর এজন্যই রাজনৈতিক সংস্কৃতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা শ্রেয়।

কোনো রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ভাবধারা ও বিদ্যমান রীতিনীতির সবকিছুই রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত। জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভবের ফলে একদিকে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ডের পরিধির বিস্তৃতি ঘটেছে অন্যদিকে এ ব্যবস্থায় জনগণের সম্পৃক্ততাও বেড়েছে। এজন্যই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অ্যালমন্ড (Almond) মনে করেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারণা রাজনৈতিক ব্যবস্থার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানী রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারণার সংজ্ঞায়ন করেছেন। Almond and Verba তাঁদের 'Civic Culture' নামক গ্রন্থে বলেন, "রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি এবং উক্ত ব্যবস্থায় সক্রিয় ভূমিকা।" ("Political Culture as the specifically political orientations, the attitudes towards the political system and its various parts and to the role of the self in the system.") রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অ্যালান আর, বল (Alan R. Ball) আরও সহজভাবে বলেছেন, "রাজনৈতিক সংস্কৃতি সমাজের ঐসব মনোভাব, বিশ্বাস, আবেগ ও মূল্যবোধ নিয়ে গঠিত যেগুলো রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক প্রশ্নাদির সাথে জড়িত।" মোটকথা রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার লক্ষ্য এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কার্যকলাপ সম্পর্কে জনগণের ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস ও অনুভূতির সমষ্টি যা রাজনৈতিক কার্যকলাপে সুশৃঙ্খল এক ভাবের সৃষ্টি করে।

রাজনৈতিক অংশগ্রহণও সকল রাষ্ট্র ব্যবস্থার এক অপরিহার্য অংশ হিসেবে গণ্য হয়। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় জনগণের অংশগ্রহণের অধিকার স্বীকৃত। রাজনৈতিক অংশগ্রহণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে স্যামুয়েল পি হান্টিংটন এবং জন নেলসন বলেন, "সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে ব্যক্তির যেকোনো প্রকার কর্মতৎপরতাকে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বুঝানো হয়।" ("By Political participation we mean those activities of private citizens designed to influence governmental decision making.") অর্থাৎ, রাজনৈতিক কর্মতৎপরতায় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, রাজনীতিতে ৪ অংশগ্রহণের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যেমন- নির্বাচনি কর্মকাণ্ড তথা ভোটপ্রদান, নির্বাচনি প্রচারকার্য চালনা, কোনো নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে জনমত গঠন ইত্যাদি।

আবার লবিং-এর মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করা যায়। কিংবা কোনো সংস্থা বা সংগঠনের মাধ্যমে সরকারি নীতি গ্রহণ বা কোনো নীতির পরিবর্তন করার সমন্বিত প্রয়াস গ্রহণ করা যায়। অন্যদিকে ব্যক্তিগতভাবে সরকারি নীতি প্রণয়নকারীদের সাথে যোগাযোগ করে নিজের বা মুষ্টিমেয় ব্যক্তির বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বা স্বার্থ আদায় করার প্রচেষ্টা চালানো যেতে পারে। বর্তমানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেও সরকারি নীতির উপর প্রভাব বিস্তারের প্রবণতা লক্ষণীয়। বিশেষ করে সরকার বিরোধী আন্দোলন, হরতাল, বিক্ষোভ, ধর্মঘট কিংবা জনজীবনে ভীতি সঞ্চারমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করা।

মোটকথা রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণ দুটি প্রত্যয়ই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ। যে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি যত উন্নত সে দেশের রাজনীতিতে জনগণের অংশগ্রহণও তত বিস্তৃত। রাজনৈতিক অংশগ্রহণের উপর রাজনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাফল্য নির্ভর করে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ