• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন
পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন

আইয়ুব খানের ক্ষমতা দখল অক্টোবরের বিপ্লব Ayub Khan Ascends to the Power: October Revolution

১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা সমগ্র দেশে (দ্বিতীয় বার) সামরিক শাসন জারি করেন এবং সেনাবাহিনীর প্রধান আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক নিযুক্ত করেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধান বাতিল, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারগুলোকে বরখাস্ত, সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত এবং মৌলিক অধিকারসমূহ স্থগিত করা হয়। এই ঘটনার মাত্র অল্প কয়েকদিন পর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জার একান্ত বিশ্বস্ত সহচর আইয়ুব খান এক অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এক রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ইস্কান্দার মির্জাকে অপসারণ করে আইয়ুব খান নিজেই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন (২৭ অক্টোবর, ১৯৫৮)। সেই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন যে, তিনি প্রধান সেনাপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবেও বহাল থাকবেন। আইয়ুব খানের এ ক্ষমতা গ্রহণই ইতিহাসে 'অক্টোবর বিপ্লব' নামে খ্যাত। ক্ষমতা গ্রহণ করে আইয়ুব খান তার স্বঘোষিত অক্টোবর বিপ্লবের যৌক্তিকতা প্রমাণ করার জন্য দেশের ও দশের মঙ্গলের দিকে বিশেষ নজর দেন। তিনি রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার আরম্ভ করেন এবং অনেকের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। সস্তা জনপ্রিয়তা ও জনসমর্থন লাভের জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের ভীত সন্ত্রস্ত করে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক করেন, দুর্নীতি দমনের জন্য মারপিট ও গ্রেপ্তার করেন এবং দেশের অবস্থা স্বাভাবিক হলে তিনি সেনাবাহিনীতে ফিরে যাবেন এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। দেশবাসী তার কার্যকলাপ ও প্রতিশ্রুতিতে সহজে বিশ্বাস করে তাকে সত্যিকার জনদরদি শাসক মনে করে এ বিপ্লবকে অভিনন্দন জানায়। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য আইয়ুব খান ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ৭ আগস্ট 'পোডো' (Public office disqualification order) এবং 'এবডো' (Elective bodies disqualification order) নামে দুটি আদেশ জারি করে দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অযোগ্য ঘোষণা করেন। হোসেন শহিদ সোহরাওয়ার্দীও এই আইনের আওতায় পড়েন।

আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র

আইয়ুব খান সুচতুর রাজনীতিবিদ ছিলেন। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তিনি নানা পন্থা উদ্ভাবন করেন। তার অন্যতম একটি পন্থা ছিল 'মৌলিক গণতন্ত্র'। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ অক্টোবর 'অক্টোবর বিপ্লবের' প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর নিজস্ব চিন্তাধারা ও বহুদিনের উদ্ভাবিত পরিকল্পনা পেশ করেন, যা ইতিহাসে মৌলিক গণতন্ত্র নামে অভিহিত। সংসদীয় গণতন্ত্র বর্জন এবং তদস্থলে মৌলিক গণতন্ত্র প্রবর্তনের পক্ষে তিনি যুক্তি দেখান যে, এদেশে শিক্ষিতের হার কম বিধায় জনগণের মঙ্গলের জন্য পাশ্চাত্যের সংসদীয় গণতন্ত্র অপেক্ষা তার পরিকল্পিত গণতন্ত্রই এখানে ফলবতী হবে এবং জনগণ সহজে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এই অভিনব পদ্ধতি অনুযায়ী ১০০০ থেকে ১৫০০ লোকের মধ্য থেকে একজন সদস্য বা মৌলিক গণতন্ত্রী নির্বাচিত হবে। এভাবে দু'অঞ্চলের জন্য ৪০,০০০ করে মোট ৮০,০০০ মৌলিক গণতন্ত্রী নির্বাচিত হবে এবং এই নির্বাচিত মৌলিক গণতন্ত্রীরাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন। এই নির্বাচিত মৌলিক গণতন্ত্রীদের আস্থা ভোটে আইয়ুব খান পাঁচ বছরের জন্য পাকিস্তানের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন (১৯৫৯)।

আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন সূচনা

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ আতাউর রহমান খানের বাড়িতে পাকিস্তানে গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের উপায় বের করার জন্য মিলিত হন। এ ঘটনায়, "দেশকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত"- এ অভিযোগ এনে আইয়ুব খান ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দীকে করাচিতে গ্রেপ্তার করে। এর প্রতিবাদে ১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র ধর্মঘট ও বিক্ষোভ মিছিল বের হয়, যা ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এদিকে ১ মার্চ ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে আইয়ুব খান দ্বিতীয় সংবিধান ঘোষণা করলে পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা সমাবেশ ও ক্লাস বর্জন করে প্রতিবাদ জানায়। আইয়ুব খান জননিরাপত্তা অর্ডিনেন্স-এর বলে অনেক নেতৃবৃন্দকে কারারুদ্ধ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তোফাজ্জেল হোসেন (মানিক মিয়া), আবুল মনসুর আহমদ, কফিলউদ্দিন চৌধুরী, তাজউদ্দিন আহমদ প্রমুখ এ দমন নীতির শিকার হন।

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জুন পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকজন নেতা সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে বলেন, এক ব্যক্তি প্রদত্ত (আইয়ুব খান) শাসনতন্ত্র গ্রহণযোগ্য নয় এবং জনপ্রতিনিধি কর্তৃক একটি স্থায়ী শাসনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়। এই বিবৃতি 'নয় নেতার বিবৃতি' নামে প্রচুর জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর কিছু দিন পর সোহরাওয়ার্দীকে করাচির কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তিনি মুক্তি পেয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন। বিমানবন্দরে তিনি জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, "আমি নয় নেতার শামিল, আমার নম্বর দশ।" প্রচণ্ড বিক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও আইয়ুব খান পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় পরিষদের নির্বাচন ঘোষণা করেন (২৮ এপ্রিল, ১৯৬২)। নির্বাচনের একদিন আগেই শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক প্রাণ ত্যাগ করেন। বাঙালির অধিকার আদায়ের এই সংগ্রামী নেতার মৃত্যুতে পূর্ব পাকিস্তান থমকে দাঁড়ায়। রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি মহাযুগের অবসান হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ