- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন
১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষাপট Background of the Pakistan-India War of 1965
১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের পাক-ভারত যুদ্ধ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। কাশ্মীর সমস্যা বহুদিনের একটি অমীমাংসিত সমস্যা। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে দেশ বিভাগের সময় কাশ্মীর গণভোটের মাধ্যমে পাকিস্তানের পক্ষে চলে যায়। কিন্তু তা ভারত মেনে নিতে পারেনি। কাশ্মীরকে ভারত অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করতে থাকে। যে কারণে কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর পর পাকিস্তান ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে কাশ্মীরিদের সমর্থনে মুজাহিদ বাহিনী পাঠালে ভারতের সাথে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। পাক-ভারত যুদ্ধে পাকিস্তানের একমাত্র লক্ষ্য ছিল যুদ্ধে ভারতকে পরাজিত করে ভারত শাসিত কাশ্মির অধিকার করা এবং কাশ্মিরকে পাকিস্তান রাষ্ট্রভুক্ত করা। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ৬ সেপ্টেম্বর ভারত এক বিরাট ট্যাংক বহর নিয়ে পাকিস্তানের সীমানা অতিক্রম করে লাহোর অভিমুখে অগ্রসর হলে আনুষ্ঠানিকভাবে পাক-ভারত যুদ্ধ শুরু হয়। বাঙালি সৈন্যরা ভারতের এ আক্রমণ ব্যর্থ করে দিয়ে লাহোর শহর রক্ষা করে শৌর্যবীর্যের এক ইতিহাস সৃষ্টি করে। এই যুদ্ধ ১৭ দিন স্থায়ী হয়েছিল। যুদ্ধে পাকিস্তানের শোচনীয় অবস্থা অনুভব করতে পেরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পাশ্চাত্য শক্তি উভয়ই যুদ্ধ বন্ধ করতে আগ্রহী হয়। অবশেষে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে এই যুদ্ধের অবসান হয়। যুদ্ধ বিরতির পর সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী মি. কোসিগিনের আহ্বানে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান উজবেকিস্তানের রাজধানী) তাসখন্দে মিলিত হয়ে "যুদ্ধ নয় শান্তি" চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন (১০ জানুয়ারি, ১৯৬৬ খ্রি.)। এই চুক্তি ইতিহাসে 'তাসখন্দ চুক্তি' নামে অভিহিত হয়। সে যাই হোক, চুক্তি অনুযায়ী উভয় দেশ শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের সমস্যাগুলো সমাধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। কিন্তু এই শান্তি চুক্তিতে যুদ্ধের মূল কারণ কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের কোনো কথা উল্লেখ ছিল না।
পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থান: যুদ্ধ চলাকালে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে পাক সরকারকে সমর্থন করে। কিন্তু যুদ্ধ শেষে শান্তিচুক্তি পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এই যুদ্ধ পশ্চিম পাকিস্তানেই সীমাবদ্ধ থাকে। স্বাভাবিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। তাই সেখানে শান্তি চুক্তির তীব্র প্রতিবাদ হয়। কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়া ছিল ভিন্ন। কারণ যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল। যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথেই পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। প্রতিরক্ষার উপযুক্ত কোনো ব্যবস্থা না থাকায় এ অঞ্চলের জনসাধারণ প্রতি মুহূর্তে নিরাপত্তার অভাব মারাত্মকভাবে অনুভব করে। এ সময় পূর্ব বাংলার অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। খাদ্য সামগ্রী যথেষ্ট পরিমাণ মজুত না থাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেয়; যা পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের উদাসীনতার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। পূর্ব বাংলার এই চরম সংকটকালেও পূর্ব বাংলার সম্পদ অবাধে পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য ব্যয় করা হতো। উপরন্তু যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্গঠন বাবদ ট্যাক্সের মোটা অঙ্কের বোঝা পূর্ব বাংলার উপর বর্তায়। অথচ পাকিস্তানের জন্মলগ্ন হতে এই অঞ্চল নানাভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতো। তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক বৈষম্যের শিকার হতো। যুদ্ধ শেষে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব বাংলার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার নানান ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে। রবীন্দ্র সংগীতকে বেতারে নিষিদ্ধ করা হয়। সরকারের এই হীন কাজের বিরুদ্ধে দেশের জাগ্রত বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র সমাজ তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

