• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন
পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন

আগরতলা মামলার কারণ (Causes of Agartala case)

আগরতলা মামলা বাঙালি জনগণ ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তৎকালীন পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠীর ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র ও দমননীতিরই বহিঃপ্রকাশ। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তি সনদ হিসেবে ৬ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলে তাকে ও আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার হীন ষড়যন্ত্রে এ মামলা দায়ের করা হয়। নিম্নে আগরতলা মামলার কারণসমূহ উল্লেখ করা হলো:

১. ৬ দফা দাবি নস্যাৎ: ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক উত্থাপিত ৬ দফা দাবি নস্যাৎ করাই ছিল আগরতলা মামলার মুখ্য উদ্দেশ্য। ৬ দফার আন্দোলন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হলে স্বৈরাচারী আইয়ুব-মোনায়েম সরকার শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগকে জনবিচ্ছিন্ন করার জন্য আগরতলা মামলার নীলনকশা (Blueprint) তৈরি করে।

২. শেখ মুজিবসহ কতিপয় দেশ প্রেমিককে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা: ১৯৬৭ সালের ডিসেম্বর মাসে আইয়ুব সরকার পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকজন রাজনৈতিক ও সামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পাকিস্তানের স্বার্থবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনয়ন করে। ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধান আসামি করে আরও ৩৪ জন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল শেখ মুজিবসহ কতিপয় সৎসাহসী দেশ প্রেমিককে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে চিহ্নিত করা।

৩. বাঙালিদের মধ্যে একাত্মতার সংকট সৃষ্টি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের প্রতি প্রবল সমর্থন ব্যক্ত করার মধ্য দিয়ে যে একাত্মতার সৃষ্টি হয় তাতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই মামলার মধ্য দিয়ে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগকে স্তব্ধ করে বাঙালিদের মধ্যে একাত্মতাবোধের সংকট সৃষ্টির প্রয়াস চালানো হয়।

৪. পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতার ভিত শক্তিশালী করা আগরতলা মামলার একটি অন্যতম কারণ ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ক্ষমতার ভিত আরও শক্তিশালী করা। এজন্য তারা ঘৃণ্য আগরতলা মামলার আশ্রয় গ্রহণ করে শেখ মুজিবকে 'পাকিস্তানের শত্রু' এবং 'ভারতের দালাল' বলে প্রচার চালায়।

৫. স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন নস্যাৎ করা আগরতলা মামলার একটি কারণ ছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দীর্ঘদিনের স্বাধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন নস্যাৎ বা বানচাল করা। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বায়ত্তশাসন প্রদানে গড়িমসি করে আসছিল।

৬. শাসন ও শোষণ অব্যাহত রাখা: পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই শাসক গোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর শাসন ও শোষণের যে স্টিম রোলার চালিয়ে আসছিল তা অব্যাহত রাখাও এ মামলার অন্যতম কারণ বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন।

৭. গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বন্ধ করা পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তানে অবাধ, সুষ্ঠু, সাধারণ নির্বাচনে অনীহা প্রকাশ করে আসছিল। কারণ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা পরাজিত হবে বলে তাদের মনে শঙ্কা ছিল। এই মামলার এটিও অন্যতম কারণ।

৮. বাঙালিদের দাবিয়ে রাখা বাঙালিরা তাদের ন্যায্য অধিকারে সব সময় সোচ্চার ছিল। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে যখনি পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালিদের ওপর জুলুম করেছে তখনই বাঙালিরা রুখে দাঁড়িয়েছে। ছয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করে যে জনস্রোত সৃষ্টি হয়েছিল তা থামিয়ে দেওয়া এবং ভবিষ্যতের জন্য বাঙালিদের দাবিয়ে রাখার জন্যই নেতৃস্থানীয় লোকদের বিরুদ্ধে আগরতলা মামলা দায়ের করা হয় বলে অনেকে মনে করেন।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ