- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধিকার আন্দোলন
পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্যমূলক নীতি Unfair Treatment East Pakistan to West Pakistan
দ্বি-জাতি তত্ত্বের (Theory of two nation) ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। এ অংশ দুটির মধ্যে দূরত্ব হয় ১৫০০ মাইল। এই দূরত্ব শুধুমাত্র ভৌগোলিক সীমারেখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বাস্তব ক্ষেত্রেও এই দূরত্ব ছিল পাহাড়সম। সৃষ্টিলগ্ন থেকেই পূর্ব পাকিস্তানকে পশ্চিম পাকিস্তান একটি উপনিবেশ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং সর্বক্ষেত্রে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভক্তির পর থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্যসমূহের সংক্ষিপ্ত চিত্র এখানে তুলে ধরা হলো:
অর্থনৈতিক বৈষম্য
পাকিস্তানের শাসনামলে বাংলাদেশের ইতিহাস ছিল শোষণ আর বঞ্চনার ইতিহাস। তার বাস্তব চিত্র দেখা যায় অর্থনৈতিক বৈষম্যের খতিয়ানে। ১৯৪৭ সালে করাচিতে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের রাজধানী স্থাপিত হয়। এর উন্নয়নের জন্য ব্যয় হয় ২০০ কোটি টাকা। পরে আইয়ুব খান ইসলামাবাদে রাজধানী স্থানান্তরিত করলে এর উন্নয়নের জন্য ব্যয় হয় ২০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাজধানী নামে পরিচিত ঢাকার উন্নয়নের জন্য ব্যয় হয় মাত্র ২ কোটি টাকা। ১৯৬৭খ্রিষ্টাব্দে ইসলামাবাদ নির্মাণের জন্য ব্যয় হয় ৩০০ কোটি টাকা এবং ঢাকার জন্য ব্যয় হয় ২৫ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় সরকারের সকল কার্যালয়, দেশ রক্ষার সদর দপ্তর, শিক্ষায়তন, স্টেট ব্যাংক, বিমা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বিদেশি দূতাবাসের হেড অফিস ইত্যাদি ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। ফলে বাংলাদেশের অর্জিত মুদ্রা অবিরামভাবে পশ্চিম পাকিস্তানে পাচার হতো। বাংলাদেশ তার প্রয়োজনীয় অর্থ চেকের মাধ্যমে পাকিস্তান থেকে সংগ্রহ করত। এই পক্ষপাতিত্বের ফলে বাংলাদেশে মূলধন গড়ে উঠতে পারেনি। পশ্চিম পাকিস্তানে অল্প সময়ের মধ্যে অসংখ্য শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে। ব্যাংক, বিমা ও শিল্পের ৮০ ভাগ মালিকানা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের। বাংলাদেশে মূলধন গড়ে ওঠেনি এই অযুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশে কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ব্যবসায়-বাণিজ্যের লাইসেন্স, বৈদেশিক আমদানির সকল সুবিধা পশ্চিম পাকিস্তানের ব্যবসায়ীদের দেওয়া হতো। বিদেশ থেকে আমদানি করে পরে সেগুলো বাংলাদেশে রপ্তানি করা হতো। আমদানিকৃত দ্রব্যের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানকে অনেক বেশি মূল্য দিয়ে কিনতে হতো। ফলে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি লেগেই থাকত।
বাংলাদেশের পাট পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের প্রধান অবলম্বন ছিল এবং দুই-তৃতীয়াংশ বৈদেশিক মুদ্রা এই পাট থেকেই আসত। অথচ এই দেশের চাষিরা পাটের মূল্য পেত না। উপরন্তু এই পাট দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের শিল্প-কারখানায় চট, বস্তা, কাপড় ইত্যাদি প্রস্তুত করে আবার পূর্ব পাকিস্তানে চড়া দামে বিক্রি করত। ১৯৪৭-১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মোট রপ্তানি আয়ে পূর্ব পাকিস্তানের অংশ ছিল ৫৪.৭%। অথচ পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আমদানি ব্যয় ছিল মাত্র ৩১.১৬%। পাকিস্তান তার সংগৃহীত রাজস্বের ৬২ ভাগ খরচ করত দেশ রক্ষায় এবং কেন্দ্রীয় সরকার ব্যয় করত ৩২ ভাগ। দেশ রক্ষার দফতর এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যালয় পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত থাকায় রাজস্বের শতকরা ৯৪ ভাগ পশ্চিম পাকিস্তানে ব্যয় হতো।
আইয়ুব খানের আমলের অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটি তুলনামূলক চিত্র নিচে দেওয়া হলো:
মোট রাজস্বের ৬০% আসে পূর্ব পাকিস্তান থেকে। এখানে ব্যয় হয় ২৫%। অপরদিকে, ৪০% রাজস্ব আসে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। সেখানে ব্যয় হয় ৭৫%। সকল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই এভাবে বৈষম্যের চিত্র ফুটে ওঠে।
রাজনৈতিক বৈষম্য
পাকিস্তানি শাসনামলে পশ্চিম পাকিস্তানে লোকসংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৫০ লক্ষ, পূর্ব পাকিস্তানে লোকসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৫০ লক্ষ। জনসংখ্যায় বাঙালিরা অধিক বলে তারা সর্বজনীন ভোটে সরাসরি নির্বাচনে সার্বভৌম আইনসভা গঠনের এবং গণপ্রজাতন্ত্রী সরকার গঠনের দাবিদার। কিন্তু পশ্চিমারা সর্বদাই সে পদে বাধা সৃষ্টি করত। স্বৈরাচারী সরকার ঔপনিবেশিক মনোবৃত্তির স্বার্থে পূর্ব বাংলাকে তাদের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সকল ন্যায়সংগত স্বাধিকার ও স্বায়ত্তশাসনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। পশ্চিমা শাসকবর্গ দেশ বরেণ্য নেতা শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক ও শহিদ সোহরাওয়ার্দীকে কল্পিত দেশদ্রোহিতার অভিযোগে কারাগারে নিক্ষেপ করে। সামরিক আইন জারি করে বহু বাঙালিকে বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারাগারে আটক রাখে। শেখ মুজিবসহ ৩৫ জনকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আটক করে। রাজনৈতিক ক্ষমতা পশ্চিমারা সর্বত্র কুক্ষিগত করে রাখত। এমনকি নির্বাচনে জয়লাভ করলেও ক্ষমতা নিয়ে তারা বিভিন্ন টালবাহানা করত। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হলো ১৯৫৫, ১৯৫৮, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য
শিক্ষা ও প্রশাসনের মতো উন্নয়নমূলক ক্ষেত্রেও দুর্ভাগ্যজনক অবস্থা বিরাজমান ছিল। শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। অথচ ১৯৪৭ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের তুলনায় পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র সংখ্যা ছিল দ্বিগুণ। যেখানে ১৯৬৮-৬৯ সালে ২০ বছর পূর্ব পাকিস্তানে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ৫ গুণ। অপর পক্ষে পশ্চিম পাকিস্তানে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পায় ৩০ গুণ। ১৯৫৫-১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ২০৮৪ মিলিয়ন রুপি বরাদ্দ করা হয়। অন্যদিকে, পূর্ব পাকিস্তানের জন্য ৭৯৭ মিলিয়ন রুপি বরাদ্দ করা হয়। বিদেশি সংস্থা যেমন- এশিয়া ফাউন্ডেশন, কলম্বো প্লান, কমনওয়েলথ থেকে প্রদত্ত অধিকাংশ স্কলারশিপ বিতরণ করা হতো পশ্চিম পাকিস্তানের ছাত্রদের মাঝে। ফলে পূর্ব বাংলার ছাত্ররা দেশ বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, কৃষি, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ১৬টির মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তান ১৩টি, পূর্ব পাকিস্তান ৩টি। একই বছরে যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭০ লক্ষ টাকা সেখানে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ কোটি ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বৈষম্য
প্রশাসনিক দিক থেকে পাকিস্তানের চালিকাশক্তি ছিল সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তাগণ। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের যে মন্ত্রণালয় গঠিত হয় তার শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাগণ নিয়োগ পান পশ্চিম পাকিস্তানে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় ৯৫৪ জনের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থাৎ বাঙালি ছিল ১১৯ জন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের ৪২০০০ কর্মকর্তার মধ্যে ২৯০০ জন কর্মকর্তা ছিলেন বাঙালি। করাচিতে রাজধানী হওয়ায় সকল সরকারি অফিস-আদালতে পশ্চিম পাকিস্তানিরা প্রশাসনের সকল পদগুলো দখল করেন। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব পাকিস্তানে গেজেটেড কর্মকর্তা ছিল ১৩৩৮ জন, পশ্চিম পাকিস্তানে এর সংখ্যা ছিল ৩৭০৮ জন। বহির্বিশ্বের সাথে পাকিস্তান সরকারের সুসম্পর্ক থাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত ৬৯ জন রাষ্ট্রদূতের মধ্যে ৬০ জনই পশ্চিম পাকিস্তানের ছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের ছিলেন মাত্র ৯ জন।
১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দের তথ্য অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের কর্মচারীদের একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র নিচে ছকের মাধ্যমে দেখানো হলো-
বিবরণ | পূর্ব পাকিস্তান | পশ্চিম পাকিস্তান |
|---|---|---|
প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিয়েট | ১৯% | ৮১% |
দেশরক্ষা | ৮.১% | ৯১.৯% |
স্বরাষ্ট্র | ২২.৭% | ৭৭.৩% |
শিক্ষা | ২৭.৩% | ৭২.৭% |
তথ্য | ২০.১% | ৭৯.৯% |
স্বাস্থ্য | ১৯% | ৮১% |
কৃষি | ২১% | ৭৯% |
আইন | ৩৫% | ৬৫% |
১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সচিবালয়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব (একটি সারণীর মাধ্যমে দেখানো হলো):
সরকারি পদের নাম | মোট সংখ্যা | পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান |
|---|---|---|---|
সচিব | ১৯ | ১৯ | X |
যুগ্ম সচিব | ৪১ | ৩৮ | ৩ |
উপ-সচিব | ১৩৩ | ১২৩ | ১০ |
সর্বমোট | ১৯৩ | ১৮০ | ১৩ |
[সূত্র: বাংলাদেশের ইতিহাস ১৯৪৭-১৯৭১ ড. মাহবুবুর রহমান পৃষ্ঠা নং ২৪২ ।
চাকরি ও সামরিক ক্ষেত্রে বৈষম্য
সরকারি চাকরি ও সামরিক ক্ষেত্রে বৈষম্যের চিত্র ছিল আরও ভয়াবহ। উচ্চপদস্থ চাকরির প্রায় সব কয়টি এবং নিম্ন ও মধ্যশ্রেণির চাকরির শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ লাভ করত পশ্চিম পাকিস্তানিরাই। তিন বাহিনীরই (সেনা, নৌ ও বিমান) সদর দফতর ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে এবং সেখানে অস্ত্র কারখানাও প্রতিষ্ঠিত হয়। সামরিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে চাকরির বৈষম্যের একটি তুলনামূলক চিত্র নিম্নে দেওয়া হলো-
বিষয় | পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান |
|---|---|---|
কেন্দ্রীয় বেসামরিক চাকরি | ৮৪% | ১৬% |
বৈদেশিক চাকরি | ৮৫% | ১৫% |
বিদেশি মিশনের প্রধান কর্মকর্তা | ৯১% | ৯% |
স্থল বাহিনী | ৯৫% | ৫% |
নৌবাহিনী (কারিগরি) | ৮১% | ১৯% |
নৌবাহিনী (অকারিগরি) | ৯১% | ৯% |
বিমান বাহিনীর বৈমানিক | ৯১% | ৯% |
সশস্ত্র বাহিনীর সংখ্যা | ৫,০০,০০০ | ২০,০০০ |
পাকিস্তান এয়ারলাইন্স | ৭,০০০ | ২৮০ |
ডাক্তার সংখ্যা | ১২,৪০০ | ৭,৬০০ |
পল্লিস্বাস্থ্য কেন্দ্র | ৩২৫টি | ৮৮টি |
জনসংখ্যা | ৫ কোটি ৫০ লক্ষ | ৭ কোটি ৫০ লক্ষ |
(তথ্য সূত্র: National Assembly of Pakistan Debates Vol. I No. 7 March, 1963/
১৯৫৬ সালের এক হিসাব অনুযায়ী
পদ | পশ্চিম পাকিস্তান | পূর্ব পাকিস্তান |
|---|---|---|
জেনারেল | ১ | ০ |
লে. জেনারেল | ৩ | ০ |
মেজর জেনারেল | ২০ | ১ |
বিগ্রেডিয়ার | ৩৫ | ০ |
কর্নেল | ৫০ | ০ |
সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য
ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির দিক থেকে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি চরম অবহেলা প্রদর্শন করেছে। পূর্ব পাকিস্তানের ৫৬% বাঙালি থাকা সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকচক্র বাঙালির মুখের ভাষা "বাংলা ভাষা"কে মুছে ফেলতে চেয়েছিল। মায়ের ভাষা মুছে ফেলে তারা উর্দু ভাষা চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। যাতে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়। যদিও বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের সে ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে দেয়নি।
বাঙালির ভাষার উপর শাসকগোষ্ঠী হামলা চালিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, বরং বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রচলিত করে এর মৌলিকত্ব নষ্ট করার চেষ্টা করে। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল অবহেলিত হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিন্দু ছিলেন বলে তাঁর গান পাকিস্তানের বেতারে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। কাজী নজরুল ইসলামকে সাম্প্রদায়িক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পরও তাঁর ইসলামি গানগুলো থেকে "হিন্দুয়ানি" শব্দসমূহ বাদ দিয়ে পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে বিদেশি অপসংস্কৃতির দ্বারা গতিরোধের চেষ্টা করা হয়।
শেষান্তে বলা যায়, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পুঞ্জীভূত অবহেলা, Big Brother আচরণ, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক শোষণ বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনাকে উজ্জীবিত করে। ফলশ্রুতিতে স্বায়ত্তশাসনের দাবি শেষ পর্যন্ত বাঙালিদের মুক্তির সংগ্রামে গড়ায়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

