• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
  • ভারতবর্ষে ইউরোপীয়দের আগমন : ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা
ভারতবর্ষে ইউরোপীয়দের আগমন : ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ভারতবর্ষে ইউরোপীয়দের আগমন : ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা

পর্তুগিজদের আগমন

দুঃসাহসী পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-ডা-গামার আবিষ্কৃত পথ ধরে পর্তুগিজরা এ উপমহাদেশে আসতে শুরু করে। ইউরোপীয়দের মধ্যে পর্তুগিজরা সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে আগমন করে। এ সময় আরব বণিকদের সাথে তাদের সংঘর্ষ বাঁধে এবং পর্তুগিজদের পক্ষে সাফল্য আসে। ফ্রান্সিসকো ডি আলমিডা ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম পর্তুগিজ প্রতিনিধি বা গভর্নর (১৫০৫-১৫০৯ খ্রি.)। আলবুকার্ক দ্বিতীয় গভর্নর নিযুক্ত হন (১৫০৯-১৫১৫ খ্রি.)। আলবুকার্ক পর্তুগিজ গভর্নরদের মধ্যে ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। তার সুযোগ্য নেতৃত্বের ফলেই পর্তুগিজগণ ভারতীয় উপমহাদেশে খুবই শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে। ভারতীয় উপমহাদেশের রাজন্যবর্গের দুর্বলতার সুযোগে আলবুকার্ক উপমহাদেশে পর্তুগিজ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। এ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে তিনি বিজয়পুরের সুলতানের নিকট থেকে গোয়া দখল করে একটি বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন এবং ক্রমশ শক্তি বৃদ্ধি করেন।

অতঃপর তিনি মালাক্কা এবং হুরমুজ দখল করে কোচিনে একটি শক্তিশালী বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করেন। তিনি ভারতবর্ষে একটি স্থায়ী পর্তুগিজ সমাজ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি পর্তুগিজদের ভারতীয় রমণীদের বিয়ে করার নির্দেশ দেন। ভারতবর্ষে পর্তুগিজ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে তিনি নিঃস্বার্থভাবে কাজ করেন। ১৫১৫ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর পর পরবর্তী পর্তুগিজ প্রতিনিধিরা অল্পদিনের মধ্যেই ভারতবর্ষের পশ্চিম উপকূলের কালিকট, চৌল, কোচিন, বোম্বাই, সিংহল, হুগলী ও বঙ্গদেশে শক্তিশালী বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে এবং কুঠিগুলো দুর্গে পরিণত করে। ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে তারা চট্টগ্রামে ও সাতগাঁও-এ শুল্ক ঘাঁটি নির্মাণ করে। হুগলীতে ১৫৭৯ খ্রিষ্টাব্দে তারা উপনিবেশ গড়ে তোলে। এরপর উড়িষ্যা এবং বাংলায় কিছু অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন তার 'ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী' বইয়ে উল্লেখ করেছেন, ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় পর্তুগিজদের ৪১টি বাড়ি ছিল। ইসলামপুর, শরাফতগঞ্জ ও নবাবপুরে ছিল তাদের বসতি।

পর্তুগিজদের পতন: ভারতবর্ষে পর্তুগিজদের অবস্থান স্থায়ী হয়নি। তাদের অত্যাচার, নির্যাতন এবং ইংরেজ ও ওলন্দাজদের উত্থানে তাদের পতন শুরু হয়। নিম্নে পর্তুগিজদের পতনের প্রধান কারণগুলো আলোচনা করা হলো-

প্রথমত, ১৫৭৯ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবর পর্তুগিজদেরকে বাংলার সাতগাঁ নামক স্থানে বসতি স্থাপন এবং ব্যবসায়-বাণিজ্য করার অনুমতি প্রদান করেন। তারা কালক্রমে দুর্নীতিপরায়ণ হয়ে ওঠে। সম্রাট শাহজাহানের রাজত্বকালে তারা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে অন্যায়ভাবে অধিক শুল্ক আদায়, দাস ব্যবসায় লিপ্ত, ভারতীয়দের জোরপূর্বক খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত, সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের দুজন ক্রীতদাসকে অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হয়। ফলে সম্রাট শাহজাহান ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে তাদের হুগলী থেকে বিতাড়িত করেন। এরপর তাদের পতন শুরু হয়।

দ্বিতীয়ত, পর্তুগাল ও স্পেন মিলিত হয়ে ওলন্দাজ ও ইংরেজদের বিরুদ্ধে ইউরোপে ১৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। এই যুদ্ধে পর্তুগালের অনেক অর্থ ক্ষয় হয়। ফলে পর্তুগালের মতো ছোট দেশের পক্ষে দূরপ্রাচ্যের রাজ্যের ব্যয়ভার বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে; যা তাদের পতনের অন্যতম কারণ।

তৃতীয়ত, আলবুকার্কের পরে পর্তুগিজ সরকার অপর কোনো সুদক্ষ শাসনকর্তাকে ভারতবর্ষে প্রেরণ করতে পারেনি, যিনি পর্তুগিজ শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারেন; যা তাদের পতন ডেকে আনে।

চতুর্থত, পর্তুগিজদের অনুকরণে ওলন্দাজ, দিনেমার, ইংরেজ ও ফরাসি প্রভৃতি ইউরোপীয় বণিকরা ভারতবর্ষে আসতে থাকে। তাদের সাথে প্রতিযোগিতায় পর্তুগিজরা টিকে থাকতে পারেনি।

পঞ্চমত, স্বদেশ থেকে আর্থিক সাহায্যের অভাবে পর্তুগিজ কোম্পানি তাদের নিয়ম-শৃঙ্খলা হারিয়ে ফেলে। তারা অর্থ অভাবে নানান অবৈধ কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ে। মুঘল সম্রাট আকবর তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলে পর্তুগিজরা পিছুটান দেয়।

ষষ্ঠত, পর্তুগিজরা কেবল ব্যবসায়-বাণিজ্যই করত না, তারা এদেশের জমিদার ও প্রভাবশালী বারোভূঁইয়াদের সেনাবাহিনীতে চাকরি করত। আবার সুযোগ পেলেই জুলুম, নির্যাতন, লুণ্ঠন করত। পর্তুগিজ সৈন্যরা জোর করে এদেশের মেয়েদের বিবাহ করত। এসকল কর্মকাণ্ডই তাদের পতন ডেকে আনে।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ