- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- ভারতবর্ষে ইউরোপীয়দের আগমন : ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ভারতবর্ষে ইউরোপীয়দের আগমন : ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা
ভারতবর্ষে আধিপত্য বিস্তারে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
ভারতবর্ষে বাণিজ্য বৃদ্ধির পর ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে রাজ্য স্থাপন ও শাসনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। জব চার্নক ১৬৯০ সালে সুতানটি, কালিকট এবং গোবিন্দপুর এই তিনটি গ্রাম নিয়ে কলকাতা নগরীর গোড়াপত্তন করেন। অতঃপর ইংরেজ কোম্পানির সুরক্ষার জন্য ১৭০০ সালে কলকাতায় একটি দুর্গ নির্মাণ করে। তৎকালীন ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের নামানুসারে এ দুর্গের নামকরণ করা হয় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ। ঐ বছর বাংলার ইংরেজ কুঠিগুলো নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠন করা হয়। নবগঠিত এই কাউন্সিলের সদর দফতর স্থাপিত হয় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে। চার্লস আইয়ার সর্বপ্রথম এর গভর্নর নিযুক্ত হন। ইতোমধ্যে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্যান্য ইউরোপীয় জাতিকে বাণিজ্যিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হারিয়ে ক্রমশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতবর্ষে বাণিজ্য বিস্তার তথা শক্তিশালী হওয়ার ক্ষেত্রে বেশি অবদান রেখেছে 'ফররুখ শিয়ার' কর্তৃক প্রদত্ত ছাড়পত্র। মোগল সম্রাট ফররুখ শিয়া একবার কঠিন রোগে আক্রান্ত হন। রাজ্যের ডাক্তার-হেকিমরা অনেক চেষ্টা করেও তার রোগ মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারলেন না।
এসময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ডাক্তার হ্যামিলটনের চিকিৎসায় ফররুখ শিয়া সুস্থ হয়ে ওঠেন। সম্রাট রোগ মুক্তির প্রতিদান দিতে চাইলে সুচতুর হ্যামিলটন নিজের জন্য কিছু না চেয়ে কোম্পানির জন্য কিছু বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা প্রার্থনা করলেন। ১৭১৭ খ্রিষ্টাব্দে ফররুখ শিয়া এক ফরমান জারি করে বাৎসরিক মাত্র তিন হাজার টাকার বিনিময়ে বিনা শুল্কে বাংলায় একচেটিয়া বাণিজ্য করার অনুমতি প্রদান করেন। এই ফরমান বলে কলকাতার ইজারাসহ বিনা শুল্কে মাদ্রাজ ও মুম্বাই শহরেও বাণিজ্য করার অনুমতি লাভকরেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য প্রসারে এই ফরমান এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, ঐতিহাসিক রবার্ট ওর্ম এই ফরমানকে (সনদ) 'ম্যাগনাকার্টা' বলে আখ্যায়িত করেছেন।
অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে (১) মোগল সম্রাটদের দুর্বলতা; (২) নাদির শাহের আক্রমণ; (৩) প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের স্বাধীনতা ঘোষণা এবং (৪) ইউরোপীয় বণিকদের বাণিজ্য ও রাজনৈতিক তৎপরতা প্রভৃতি কারণে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়ে। এ সময় দক্ষিণ ভারতের সুবেদারের অধীনে কর্ণাটক নামে একটি প্রদেশ ছিল। এর রাজধানী ছিল আরকট। নবাব পদমর্যাদার শাসনকর্তা স্বাধীন ছিলেন। কর্ণাটকের রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ইংরেজ ও ফরাসি বণিক সম্প্রদায় এ অঞ্চলে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। ডুপ্লের নেতৃত্বে ফরাসিরা এবং ক্লাইভের নেতৃত্বে ইংরেজরা দক্ষিণ ভারতে প্রভাব বিস্তারের জন্য অগ্রসর হয়। ফলে প্রকাশ্য যুদ্ধ আরম্ভ হয়। এই যুদ্ধ ইতিহাসে 'কর্ণাটকের যুদ্ধ' নামে পরিচিত। এখানে ১৭৪৬ থেকে ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী ফল ছিল ভারতবর্ষে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ফরাসিদের বিলুপ্তি এবং পরাক্রমশালী ইংরেজদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

