- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
- ভারতবর্ষে ইউরোপীয়দের আগমন : ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ভারতবর্ষে ইউরোপীয়দের আগমন : ইংরেজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা
ইংরেজদের আগমন
ভারতবর্ষে বিপুল ঐশ্বর্য সম্পর্কে ইংরেজরা পূর্ব থেকে অবগত ছিলেন। সর্বোপরি পর্তুগিজ, ওলন্দাজ ও দিনেমারদের বাণিজ্য উপলক্ষ্যে ভারতবর্ষে আগমনের কথা জেনে রানি প্রথম এলিজাবেথের সময় ইংরেজ বণিকদের মনে প্রাচ্যদেশে বাণিজ্য করার অদম্য আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ বণিকরা প্রাচ্যের সহিত বাণিজ্য করার উদ্দেশে "ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (East India Company) নামে একটি বণিক সংঘ গঠন করে। ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর এ সমিতিকে রানি এলিজাবেথ ১৫ বছরের বাণিজ্য সনদ প্রদান করেন। এই সমিতির মূলধন ছিল ৭০,০০০ পাউন্ড। সদস্য সংখ্যা ছিল রানি এলিজাবেথ সহ ২৪ জন।
সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে 'ইংলিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি' নামে অপর একটি বণিক সংঘ রাজার অনুমতিপত্র নিয়ে ভারতে আগমন করে। শীঘ্রই একই দেশের দুটি কোম্পানির মধ্যে প্রবল প্রতিযোগিতা শুরু হয়। অতঃপর ১৭০৮ খ্রিষ্টাব্দে উভয় কোম্পানি মিলিত হয়ে 'The United Company of Merchants of England Trading to the East Indies' নামে আখ্যায়িত হয়। এই সম্মিলিত কোম্পানিই ভারতবর্ষের ইতিহাসে 'ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি' নামে সু-পরিচিত। এই কোম্পানিই সময়ের ব্যবধানে বণিকের মানদণ্ড শাসকের রাজদণ্ডে পরিণত করে। অথচ সেদিন কেউই চিন্তা করেনি যে, এই বণিক সম্প্রদায়ই একদিন এদেশের ভাগ্যবিধাতা হবে।
১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হকিন্স ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের সুপারিশ নিয়ে ভারতবর্ষে আগমন করেন এবং মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের অনুমতি নিয়ে সুরাটে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে। এ সময় পর্তুগিজদের সাথে ইংরেজদের সংঘর্ষ হয়। শেষ পর্যন্ত ইংরেজরা জয়লাভ করে। ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের দূত হিসাবে ১৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে স্যার টমাসরো মোগল দরবারে আগমন করে ৩ বছর অবস্থান করে সম্রাট জাহাঙ্গীরের নিকট থেকে কতগুলো বাণিজ্যিক সুবিধা লাভ করেন। স্যার টমাসরো অত্যন্ত দূরদর্শী রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি বিলাতের কর্তৃপক্ষকে এই মর্মে পরামর্শ দেন যে, "এ দেশের মানুষের স্বভাব তিনি যা বুঝেছেন তা হলো, তারা ভীতি প্রদর্শন ও বল প্রয়োগ ছাড়া অন্য কিছুর দ্বারা বশীভূত হয় না। সুতরাং কোম্পানির উচিত প্রয়োজন মতো তরবারি ব্যবহার করা।" তার নীতি ছিল "আবেদন ও বল প্রয়োগ" যা পরবর্তীকালে ইংরেজদের ভারত শাসননীতিতে লক্ষণীয়।
১৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ ও পর্তুগিজদের মধ্যে এক চুক্তির মাধ্যমে স্বদেশে উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন হয়। অতঃপর ঐ বছরই ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস পর্তুগিজ রাজকন্যা ক্যাথরিন ব্রাগাঞ্জকে বিবাহ করে যৌতুক হিসেবে পর্তুগিজদের নিকট থেকে মুম্বাই শহরটি লাভ করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চার্লস-এর নিকট থেকে উক্ত শহরটি বাৎসরিক ১০ পাউন্ডের বিনিময়ে ইজারা গ্রহণ করে। কিন্তু পরে তা কোম্পানি পঞ্চাশ হাজার পাউন্ডে ক্রয় করে নেয়।
১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে মুম্বাই-এর ইংরেজ কর্তৃপক্ষের সাথে সম্রাট আওরঙ্গজেবের এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত চুক্তি মোতাবেক জব চার্ণক বঙ্গদেশে আসার অনুমতি লাভ করেন এবং ভাগীরথী নদীর তীরে সুতানটি, কালিকট এবং গোবিন্দপুর এই তিনটি গ্রাম ক্রয় করে কলকাতা নগরীর গোড়াপত্তন করেন। এ সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের নামানুসারে ফোর্ট উইলিয়াম নামে একটি দুর্গ তৈরি করেন। এভাবে কলকাতা, মাদ্রাজ এবং মুম্বাই তিনটি শহরেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

