• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

চরিত্র

ভূমিকা: চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ। যিনি চরিত্রবান তিনি সমাজে যেকোনো বিরাট সম্পদশালীর চেয়ে বেশি সম্মান পেয়ে থাকেন। আর যার চরিত্র নেই, সে যত সম্পদশালী বা ক্ষমতাবানই হোক না কেন, তাকে কেউ শ্রদ্ধা করে না। চরিত্র মানুষকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করে।

চরিত্র কী: মানবজীবনে চলাফেরায়, কথাবার্তায়, কাজেকর্মে, আচার-আচরণে এবং চিন্তাধারায় যে মহৎ ভাব পরিলক্ষিত হয়, তাকেই বলে চরিত্র। চরিত্রবান মানুষের এমন কতকগুলো গুণ থাকে, যা সমাজের অন্য লোকেরা পছন্দ করে। সমাজে পরস্পরের মধ্যকার আচরণবিধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করাই মানবিক চরিত্র।

চরিত্রের বৈশিষ্ট্য: চরিত্র বলতে যে ধারণা বোঝায় তাতে আছে কতকগুলো গুণের সমাবেশ। প্রেম, সৌজন্য, ক্ষমা, ত্যাগ, তিতিক্ষা, সাধুতা, সাহচর্য, শৌর্য, অনুগ্রহ, আত্মবিশ্বাস, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি, দয়া, সমদর্শন- এসব গুণের সমন্বয়ে চরিত্র-বৈশিষ্ট্য গড়ে ওঠে। তাই মানুষের লক্ষ্য জীবনের সকল আচার-আচরণের মাধ্যমে এমন চমৎকার বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দেওয়া যাতে সুন্দর চরিত্র গড়ে উঠতে পারে এবং পরিণামে শ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হয়।

সচ্চরিত্রের লক্ষণ: যেসব মহাপুরুষ পৃথিবীর বুকে যুগে যুগে অমরকীর্তি রেখে গেছেন, তাঁরা সকলেই ছিলেন চরিত্রবান। নামমাত্র নৈতিকতা বা ন্যায়নিষ্ঠাই চরিত্র নয়। ন্যায়, সত্য, সুন্দর ও জ্ঞানের পথ থেকে যাঁরা কোনোদিনই বিচ্যুত হননি তাঁরাই সচ্চরিত্রবান। তাই তাঁরা যুগ যুগ ধরে মানবসমাজের জন্য কর্মশক্তির প্রেরণার উৎস হয়ে রয়েছেন। দৃষ্টান্ত হিসেবে বিশ্বনবি হযরত মুহম্মদ (স), হযরত উমর ফারুক (রা), হাজী মুহম্মদ মহসীন প্রমুখ মহাপুরুষগণের নাম করা যায়। তাঁরা সকলেই তাঁদের বলিষ্ঠ চরিত্রের গুণে শতাব্দীর পর শতাব্দী পৃথিবীতে অমর হয়ে আছেন।

চরিত্র গঠন: মানবশিশুর জন্মের পর থেকে শৈশব ও কৈশোর অতিক্রমের সময় পর্যন্ত চরিত্র গঠনের কাল। মাতাপিতার হাতে চরিত্রের প্রথম রূপায়ণ এবং শিক্ষক ও অন্যান্য অভিভাবক আর পরিবেশের প্রভাব পড়ে আস্তে আস্তে একটি স্বতন্ত্র ও বিশিষ্ট চরিত্র কাঠামো দাঁড়ায়।

চরিত্র গঠনের উপায়: চরিত্রকে সুমহান করে গড়ে তুলতে হলে সাধনার প্রয়োজন হয়। সাধনার ফলে 'মহৎ গুণাবলি অর্জিত হয় এবং তা জীবনকে সুন্দর করে। সৎসঙ্গ, সংযমশীলতা, সত্যনিষ্ঠা, ন্যায়পরায়ণতা, গুরুজনের প্রতি ভক্তি, সুগ্রন্থ পাঠ, সঠিক নির্দেশনা প্রভৃতি গুণ সাধনার পথে সহায়ক হয়। চরিত্র গঠনের জন্য মানুষের এই সাধনা হয়তো বহু দুঃখকষ্টের বিচিত্র অভিজ্ঞতা এনে দেয়।

চরিত্র গঠনে পরিবেশের ভূমিকা: চরিত্র গঠনে পরিবেশের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত পারিপার্শ্বিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে চরিত্র গঠিত হয়। পরিবেশ প্রতিকূল হলে মানুষের চরিত্র বিনষ্ট হয়। অসৎ সঙ্গে পড়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়। ফলে চরিত্রের সার্থক ও সুন্দর বিকাশ আশা করা যায় না। সৎ সঙ্গের প্রভাবে জীবন সুন্দর ও মধুময় হয়, উত্তম চরিত্র গঠিত হয়। তাই অসৎ সঙ্গের দ্বারা সৃষ্ট পরিবেশ থেকে সবসময় দূরে থাকতে হবে।

চরিত্রহীনতার কুফল: চরিত্রহীন মানুষ পশুর চেয়েও অধম। চরিত্রবান না হলে মানুষ ভোগলালসায় মত্ত হয়ে পড়ে এবং পাপ কাজে লিপ্ত হয়। জীবনে তারা কারও শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পায় না, সমাজের সকলেই তাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখে। -এ ধরনের লোক মানবজাতির কলঙ্ক।

উপসংহার: চরিত্র মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের পর্যায়ে উন্নীত করে। চরিত্রই মানুষকে যথার্থ মানুষ করে তোলে। চরিত্রের জন্য মানুষের সুনাম অর্জিত হয়, সকলে শ্রদ্ধা করে ও জীবন সার্থক হয়। চরিত্রবান লোকেরা জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ।