• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

যানজট

ভূমিকা: 'যান' শব্দের অর্থ হাতি, ঘোড়া, গাড়ি, নৌকা প্রভৃতি বাহন। এখানে বিভিন্ন প্রকারের গাড়ির বাহনকেই যান বলা হয়েছে। আর 'জট' অর্থ বিশৃঙ্খল অবস্থায় জড় হওয়া। অর্থাৎ শহরের পথে যেখানে ছোট বড় বিভিন্ন প্রকারের গাড়ি জড় হয়, পথিমধ্যে যানবাহনের প্রচণ্ড ভিড় ও নিশ্চল অবস্থায় জনজীবন অচল হয়ে পড়াকে যানজট বলে।

যানজটের ক্ষতির দিক: ঢাকাসহ দেশের বৃহৎ শহরগুলোতে যানজট একটি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যানজটের ফলে প্রায়ই ঘটে থাকে মারাত্মক দুর্ঘটনা। অনেক সময় যানজটে আটকা পড়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে না পেরে জনসাধারণ চরম ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়। ট্রাফিক জ্যামের কারণে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে অফিসগামী কর্মচারী, কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, উকিল, মোক্তার, বাদি, বিবাদি, ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারকসহ ডাক্তার, নার্স, রোগী, সকলকেই বর্ণনাতীত দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এতে যে শ্রমঘণ্টা নষ্ট হয় তা আমাদের অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

যানজটের কারণ: আমাদের দেশে ছোট বড় অনেক শহর আছে। আর এ শহরের রাস্তাগুলো এত ছোট বা অপ্রশস্ত যে, এখানে অনেক মানুষ ও গাড়িঘোড়া চলা দুষ্কর। বিশেষকরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকার ভিড় দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে এখানে এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তা, এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় পৌঁছতে কয়েক গুণ বেশি সময় লাগে। তাছাড়া যত্রতত্র মালামাল উঠানামা করানো, সারাবছর সংস্কারের নামে খানাখন্দক কেটে রাখা, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করা সর্বোপরি এ সবকিছুই যানজটের প্রধান কারণ।

যানজটের ফলে নাগরিক জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা যানজটে পড়ে ঠিকসময় ক্লাসে উপস্থিত হতে পারছে না, চাকরিজীবীদের অফিস উপস্থিতিতে দেরি হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বন্ধ, চিকিৎসকগণ রোগী দেখতে গিয়ে রোগীর বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে, আর সাধারণ মানুষের হয়রানির তো শেষ নেই। যেসব অব্যবস্থার দরুন যানজট ঘটছে, নিচে তার কয়েকটি কারণ লিপিবদ্ধ করছি। কারণগুলো হলো-

  • আমাদের দেশের আর্থসামাজিক অবক্ষয়ের কারণে যারা গ্রামে জীবিকার সংস্থান করতে পারছে না, তারা জীবিকার জন্য শহরমুখী হয়ে ভিড় বাড়াচ্ছে।
  • ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে রিকশার সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। আবার এ রিকশার সিংহভাগ বিনা লাইসেন্সে চলছে। ফলে রিকশার আধিপত্য এখানে বেশি।
  • একশ্রেণির বাবসায়ী যানবাহনের ব্যবসাকে অধিক লাভজনক মনে করে বৈধ-অবৈধভাবে এ ব্যবসা চালু করছে। ফলে যানবাহনের ভিড় ক্রমেই বেশি হচ্ছে।
  • কর্পোরেশন বা পৌরকর্তৃপক্ষের নির্দেশে অনেক সময়, রাস্তা মেরামতের দীর্ঘমেয়াদি কারণে যানজট হয়।
  • রাস্তা বা রাস্তার মোড়ে জনসভা অনুষ্ঠিত করা, গাড়ি মেরামত করা, হকার মার্কেট বসানো ইত্যাদি কারণেও যানজট হচ্ছে।
  • তাছাড়া ট্রাফিক পুলিশদের দায়িত্ব পালনে গাফলতি থাকায় অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয় ইত্যাদি।

যানজট নিরসনের উপায়: আমাদের দেশের শহরগুলোতে দিন দিন যানজট বেড়েই চলেছে। সরকার প্রাণপণ চেষ্টা করছে এর নিরসন করার জন্য, কিন্তু পারছে না। সংবাদপত্রসমূহে লেখালেখি হচ্ছে। রেডিও, টেলিভিশনে এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে, কিন্তু প্রকৃত সমস্যা দূর হচ্ছে না। আসলে এ সমস্যার সাথে আছে আমাদের জীবন ও জীবিকার সম্পর্ক। পরিকল্পিতভাবে চিন্তা না করে, ব্যাপকভাবে কর্মসূচি না নিয়ে এ সমস্যা কখনো দূর হবে না। বস্তুত এ সমস্যা দূর করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের যা যা করা দরকার, তা নিচে উল্লেখ করছি-

  • আমাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ এমনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে যে, যাতে গ্রামে বেকার হয়ে কেউ শহরমুখী না হয়, গ্রামেই তার জীবিকার সংস্থান হয়।
  • বিকল্প উপায় উদ্ভাবন করে রিকশার সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে এবং লাইসেন্সবিহীন রিকশা অচিরেই বন্ধ করতে হবে। যাতে করে মাত্রাতিরিক্ত রিকশার ফলে অহেতুক যানজটের সৃষ্টি না হয়।
  • অসাধু গাড়ি ব্যবসায়ীদের বল্লাহীনভাবে অবৈধ ব্যবসা বন্ধ করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সঠিক তালিকা তৈরি করে তাদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক গাড়ি বিক্রির ব্যবস্থা করতে হবে।
  • যখন তখন অপরিকল্পিতভাবে শহরে রাস্তা খোঁড়া বা মেরামত না করার ব্যবস্থা করতে হবে।
  • রাস্তায় সভা করা, গাড়ি মেরামত করা, দোকান বসান, ফুটপাত হকারদের দখলে নেওয়া ইত্যাদি কড়াকড়িভাবে বন্ধ করতে হবে।
  • যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে হবে।

উপসংহার: উপর্যুক্ত বিষয়সমূহ পর্যালোচনা করে যদি আমরা অ সচেতন ও সতর্ক হই, তাহলে দেখা যাবে, অদূর ভবিষ্যতে শহরগুলোর যানজট নিরসন-হয়ে সকল ধরনের নাগরিকদের জীবনে সুস্থতা ও সচলতা ফিরে আসছে।