- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
নারীশিক্ষার গুরুত্ব
ভূমিকা: প্রাচীনকাল থেকে আমাদের দেশে প্রচলিত আছে যে, 'সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে'। মানবসমাজে নারী ও পুরুষ পরস্পর নির্ভরশীল। আগের দিনে নারীকে গৃহসামগ্রীর কল্যাণার্থে বিবেচনা করা হতো। বর্তমানে নারীরা পুরুষের পাশাপাশি কাজে নেমেছে। তাই আজ নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। যেসব মহিলা অশিক্ষিত তারা শুধু 'পরিবারের বোঝাই নয়, জাতির জন্যও বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য নারীশিক্ষার গুরুত্ব অনেক।
'বাংলাদেশে নারীর অবস্থা বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থায় অনেক আগে থেকেই নারী ও পুরুষের বেলায় শিক্ষার গুরুত্ব সমানভাবে বিচার করা হয়নি। পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষের জন্য শিক্ষার সুযোগ ও উদার মানসিকতা যতটুকু আছে, 'নারীর জন্য ততটুকু নেই। ফলে একই পরিবারে পুরুষের শিক্ষার অগ্রগতির নমুনা থাকলেও নারীর বেলায় তেমন সুযোগ করে দেওয়া হয়নি। পরিণামে আমাদের সমাজ অগ্রসর হতে পারে নি, দেশ ও জাতির উন্নতি সাধিত হয়নি এবং পশ্চাদপদতার অভিশাপ আমাদের জীবনকে সমস্যাগ্রস্ত করে রেখেছে।
জাতীয় উন্নয়নে নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা: নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আজ আর কোনোরকম দ্বিধাদ্বন্দু নেই। নারীরা দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক। তাই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নারী জাতিকে অবশ্যই শিক্ষার আলো লাভ করতে হবে। নারীর ভূমিকা প্রধানত মা হিসেবে হলেও রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনে, ব্যবসায়-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও। আজ নারীর ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও বর্তমানে অফিস-আদালতে, কলকারখানায় কাজ করছে এবং আরও এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। শুধু তাই নয়, নারীরা আজকাল অবলীলায় দেশের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। তাই নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আরও একধাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। জনসংখ্যার অর্ধেক নারী যদি অশিক্ষিত থাকে, তবে দেশকে এক বিরাট বোঝা বহন করতে হবে। তাই জাতীয় জীবনের সর্বাঙ্গীণ কল্যাণের জন্য নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
শিক্ষিতা জননী হিসেবে নারী নারীর ভূমিকা প্রধানত জননী হিসেবে বিবেচ্য। আগামী দিনের নাগরিক আজকের শিশুরা জননীর কোলেই প্রতিপালিত হয়। ছেলেমেয়েদের লালন-পালনের দায়িত্ব মায়েরা বহন করেন। শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাদীক্ষার দায়িত্বও অর্পিত হয় মায়ের ওপর। ছেলেমেয়েদের চালচলন, আচার-ব্যবহার, রীতিনীতি, শিক্ষা ইত্যাদির উৎস হলেন জননী। মায়ের হাতে সন্তানের যে শিক্ষা লাভ হয়ে থাকে, তা তার আগামী দিনের জীবনকে নিয়ন্ত্রিত করে। এক্ষেত্রে মা যদি উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত না হন, তাহলে সন্তানের জীবন গঠনে তিনি তার ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে পারেন না। এদিক থেকে নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
শিক্ষিত নারীদের সাফল্য শিক্ষাদীক্ষায় পুরুষের মতোই নারীসমাজকে এগিয়ে যেতে হবে এবং শিক্ষার আলোকে নিজেদের জীবনকে যোগ্যতাসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে। ইতোমধ্যেই শিক্ষিত নারীরা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তারা পুরুষের চেয়ে নিম্নপর্যায়ভুক্ত নন। রাশিয়া, আমেরিকা, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশের নারীরা বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলা এমনকি সামরিক ক্ষেত্রেও যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন। সমাজসেবা ও রাজনীতির বেলায়ও তারা পিছিয়ে নেই।
প্রাসঙ্গিকভাবেই যাদের নাম আসে তাঁরা হলেন সুলতানা রাজিয়া, হেলেন কেলার, ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল, মাদাম কুরি, মাদার তেরেসা, চন্দ্রিমা কুমারাতুঙ্গা, বেনজীর ভুট্টো প্রমুখ। আমাদের দেশেও শিক্ষিতা নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য 'প্রদর্শন করেছেন। সাহিত্য ক্ষেত্রে নওয়াব ফয়জুন্নেসা, বেগম রোকেয়া, শামসুন্নাহার মাহমুদ, সুফিয়া কামাল, জাহানারা আরজু, রিজিয়া রহমান, সেলিনা হোসেন; সাহিত্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে ড. নীলিমা ইব্রাহিম, প্রফেসর হোসনে আরা শাহেদ,; রাজনীতি ও রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বেগম খালেদা জিয়া ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথেষ্ট সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন।
উপসংহার: নারীরা সমাজের অর্ধেক অংশ। তাদেরকে বাদ দিয়ে সমাজের উন্নতির কথা চিন্তা করা যায় না। আর তাই নারীসমাজকে শিক্ষিত হতে হবে। সে শিক্ষাই হবে নারীর জন্য শ্রেষ্ঠ, যে শিক্ষায় নারীরা নিজেদের উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে পুরুষের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ্য আসন লাভ করতে সক্ষম হবে। নারী এবং পুরুষকে এখন আর আসাদা দৃষ্টিতে বিবেচনা করা উচিত নয়। মানুষ হিসেবে উভয়ের সমান বিকাশ ও প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে শিক্ষার সমান সুযোগ দিতে হবে। তবেই দেশের উন্নতি ও জাতির যথার্থ কল্যাণ সাধিত হবে বলে আশা করা যায়।'