- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
শিষ্টাচার
ভূমিকা: মানবজীবনের অত্যাবশ্যক গুণাবলির অন্যতম হলো শিষ্টাচার। দেহের সৌন্দর্য অলংকার এবং আত্মার সৌন্দর্য শিষ্টাচার। জীবনচর্চা ও জীবনবিকাশের ক্ষেত্রে এই গুণটি অপরিহার্য। চলনে-বলনে, আচার-আচরণে, পোশাক-পরিচ্ছদে এবং ব্যক্তিত্বে, আভিজাত্যে ও চারিত্রিক দীপ্তি প্রকাশেও এই গুণটি ক্রিয়াশীল থাকে। ঘরে-বাইরে সর্বত্র শিষ্ট আচরণ না থাকলে চলে না ব্যক্তির জীবন, চলে না সমাজের জীবন।
বৈশিষ্ট্য: প্রকৃতপক্ষে সৌজন্য, শিষ্টাচার, আদব-কায়দা তিনটিই সমার্থক। শিষ্টতা, নম্রতা, ভদ্রতা, মার্জিত ও নীতিনিষ্ঠ ব্যবহার ইত্যাদি ব্যক্তির অন্তরের ও বাইরের আবশ্যিক উপাদান। শান্তশিষ্ট মার্জিত ব্যবহারের ওপরেই গড়ে ওঠে ব্যক্তির বাইরের ভদ্র ও সৌজন্যমূলক আচরণ। প্রাত্যহিক অতি ক্ষুদ্র কাজে ও আচরণে এবং বৃহত্তর সামাজিক ক্ষেত্রেও শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ বা আদব-কায়দা আবশ্যক।
শিষ্টাচারের গুরুত্ব: মানুষের জীবনে শিষ্টাচার বা আদব-কায়দার গুরুত্ব অপরিসীম। শিষ্টাচার গড়ে ওঠার প্রকৃত সময়ই হলো ছাত্রজীবন। শিক্ষার্থীদের বই-পুস্তকের পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের সাথে সাথে সদাচার সম্পর্কেও শিক্ষা অর্জন করা প্রয়োজন। কারণ পুঁথিগত বিদ্যা যেমন একজন শিক্ষার্থীকে জ্ঞানী হতে শেখায়, তেমনি শিষ্টাচারও তাকে সভ্য, ভদ্র ও নাগরিক জ্ঞানসম্পন্ন হতে শেখায়। অপরকে আনন্দ দিয়ে নিজে আনন্দিত হওয়া এবং অপরের কাছ থেকে সম্মান অর্জন করা এটা জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। মানুষের এই পাওয়ার পিছনে শিষ্টাচারের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। শিষ্টাচারের মাধ্যমেই মানুষের হৃদয়কে জয় করা যায়।
সামাজিক রীতি ও শিষ্টাচার যে সমাজ যত সভ্য, তার লোকব্যবহার তত মার্জিত, সম্ভাবমূলক এবং সুরুচিব্যঞ্জক। সামাজিক অনুষ্ঠানে সৌজন্য এবং সৌষ্ঠব রক্ষার জন্য কতকগুলো সাধারণ সর্বজনীন রীতি অনুসরণ করে চলতে হয়। কিন্তু শিষ্টাচার অন্তরের দুর্লভ অমৃত ফল, অন্তরের বিকশিত কুসুম, হৃদয়ের অমূল্য সম্পদ।
মনুষ্যত্বের নিয়ন্তা: সবার আগে মানুষের সঙ্গে মানুষের সদাচরণ ও প্রীতির সম্পর্ক চাই। পিতামাতা, ভাইবোন, পুত্রকন্যা, আত্মীয়-প্রতিবেশী ইত্যাদি নানা রূপে মানুষের পরিচয়। এ পরিচয়কে সত্যসুন্দর করে প্রীতির আচরণ। কেবল তাই নয়, দুঃখী আর্তের প্রতি করুণা ও সেবা, সম্মানিতের প্রতি শ্রদ্ধা, নেতার প্রতি আনুগত্য, প্রতিবেশীর প্রতি সখ্য ইত্যাদি অজস্র দিক দিয়ে প্রত্যেকের সম্পর্কের গণ্ডিরেখা নির্মিত হয়েছে। এই আদর্শ আচরণবিধিই নিয়ন্ত্রিত জীবনের লক্ষ্যে পৌছে দেয়। শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধ গড়া থেকেই সকলকে সতর্ক করায়, অশিষ্ট, অন্যায়, উদ্ধত ও ইতরোচিত ব্যবহার থেকে বিরত করায়। মিথ্যাবাদিতা, নির্লজ্জতা, রূঢ় ভাষণ বা অপ্রিয় ভাষণ, রুচিহীন, অশালীন, উগ্র ও উত্তেজক পোশাক-পরিচ্ছদ পরিধান ইত্যাদি অসামাজিক উপসর্গগুলো সম্পর্কে আত্মসচেতন করায়।
সংহতিবোধের সূচক: সর্বপ্রথম আপনজনের সংসারের মধ্যে লোকব্যবহার ও সদাচারের শিক্ষালাভ হয়, পরীক্ষাও হয় সেখানেই। প্রত্যহের খাওয়া-পরা, মেলামেশা, আমোদ-আহ্লাদ ইত্যাদি সাধারণ কাজের মধ্যে শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলের আচরণের রীতি গড়ে ওঠে। ত্যাগে, ভালোবাসায় ও শুভৈষণায় গড়ে ওঠে তাদের মধুর সম্পর্ক। মানব জাতি শিষ্টাচার ও সৌজন্যবোধে উদ্বুদ্ধ হলে জাতি-বিরোধের কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
শিষ্টাচার ও সৌজন্যের অভাবের ভয়াবহতা ধনীর শোষণ উদ্ধত করে নির্ধনকে, শাসকের অপশাসন বিদ্রোহী করে জনগণকে। পিতামাতার দুর্ব্যবহার অভিমানাহত করে পুত্রকন্যাকে। শিক্ষক ও শিক্ষানিয়ামকদের অবিচার পথভ্রষ্ট করে ছাত্রসমাজকে। এভাবেই সমাজের মধ্যে চলেছে পারস্পরিক অনাচার, অসৌজন্যের প্রতিক্রিয়া। সামান্য ভদ্রতা, শিষ্টতা ও নৈতিকতার অভাবে সকল স্তরের মানুষ ধীরে ধীরে সামাজিক সম্পর্ক হারায়।
শিষ্টাচারী হওয়ার উপায়: শিষ্টাচারের অধিকারী হতে হলে অন্যান্য গুণের মতোই তার চর্চা প্রয়োজন। গৃহের সুন্দর পরিবেশে মাতাপিতা, ভাইবোন ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে শিশুরা শিষ্টাচার শিক্ষালাভ করে। স্কুল ও কলেজের শিক্ষাজীবনে শিক্ষকদের কাছ থেকেও শিক্ষার সুযোগ আছে। প্রকৃতপক্ষে, চারদিকের প্রভাব পড়েই মানুষের চরিত্রে শিষ্টাচারের পরিচয় প্রকাশ পায়।
উপসংহার: শিষ্টাচারের পরিচয় ফুটে ওঠে মানুষের কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে। শিষ্টাচার সমাজজীবনকে উন্নত করে, পরিবেশকে সুন্দর করে, মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বাড়ায়। শিষ্টাচারের বিকাশ ঘটাতে পারলে পৃথিবীতে শান্তির রাজ্য স্থাপিত হতে পারে। তাই শিষ্টাচার বা সৌজন্যবোধ বা আদব-কায়দার গুরুত্ব অপরিসীম।