• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

বাংলাদেশের একটি দর্শনীয় স্থান

ভূমিকা: সুজলা-সুফলা আমাদের এ বাংলাদেশ। ইতিহাস কিংবা ঐতিহ্যের দিক থেকেও এ দেশ অনেক সমৃদ্ধ। অতীতের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশে যুদ্ধবিগ্রহের অনেক প্রাচীন ইতিহাসের নিদর্শন রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অখণ্ড ভারতবর্ষ থাকাকালীন পলাশীর যুদ্ধের কথা স্মরণযোগ্য। এছাড়া ইংরেজ শাসনামলে ঘটেছে অনেক খণ্ড খণ্ড যুদ্ধ। এ যুদ্ধেরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলায় নীল চাষকে কেন্দ্র করে আমঝুপি গ্রামের নীলকুঠিতে ঘটে নিরীহ চাষিদের উপর অত্যাচার নির্যাতন। এ কারণে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আমঝুপি গ্রামের নীলকুঠি অদ্যাবধি একটি দর্শনীয় স্থান হয়ে রয়েছে। তবে বাংলাদেশে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে।

বাংলাদেশের কতিপয় দর্শনীয় স্থান: বাংলাদেশে অসংখ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এসব স্থানের মধ্যে দিনাজপুরের বাসন্তী মন্দির, নাটোরের দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি (উত্তর গণভবন), নওগাঁর পাহাড়পুর ও রাণী ভবানীর বাড়ি, রাজশাহীর পুঠিয়ার জমিদার বাড়ি, গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ি, ঢাকার আহসান মঞ্জিল, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, কুমিল্লার ময়নামতি, মেহেরপুর আমঝুপির নীলকুঠি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- দিনাজপুরের রামসাগর, নাটোরের চলনবিল, নেত্রকোনার বিরিসিড়ি, সিলেটের জাফলং, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ইত্যাদি।

আমঝুপি গ্রামের নীলকুঠির বর্ণনা: আমঝুপি আম গাছের সমারোহে ঘেরা যেন এক সবুজের গ্রাম। এ গ্রামের মানুষ সহজ- সরল মন-মানসিকতার। গ্রামের প্রবেশ মুখ থেকে পায়ে হেঁটে ৫/৭ মিনিটের পথ পেরিয়ে নীলকুঠি দর্শনীয় স্থানে যাওয়া যায়। নীলকুঠির চতুর্দিক এবং নির্দিষ্ট সীমানা নির্ধারণ করা রয়েছে। নীলকুঠি বাড়ির পিছনে বয়ে গিয়েছে কাজলা নদী। জানা যায় কাজলা নদীর অপর প্রান্তেই ভারতের পশ্চিম বঙ্গের নদীয়া জেলা অবস্থিত। তৎকালে যুদ্ধ বিগ্রহের সময় এ নদী পারাপার করেই অনেকে প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন।

নীলকুঠি বাড়ির বর্ণনা: ব্রিটিশদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এ বাড়িটি তৈরি হয়েছে। বাড়ির সামনে ও পিছনে বৃহৎ ও লম্বাটে বারান্দা। পিছনের বারান্দার সম্মুখেই ফুলের বাগান। হরেক জাতের ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে সেখানে। নীলকুঠি বাড়ির রুমগুলো বৃহদাকার। উচ্চতার দিক থেকেও তা স্বাভাবিক বাংলাদেশের কোনো ঘরের উচ্চতার চাইতে অনেক উপরে। কালের আবর্তে বর্তমানে এ ঘরগুলো জীর্ণ হয়ে পড়েছে। অবহেলা ও অযত্নের কারণে নীলকুঠির বাড়িটি তার নিজস্ব সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেছে প্রায়।

নীলকুঠির মূল বাড়িটির চারপাশে নারিকেল গাছ, তাল গাছ দিয়ে ঘেরা এক অপরূপ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। এছাড়া বিশাল বিশাল আম গাছের বাগান এ বাড়িটির ঐতিহ্য সমৃদ্ধ পরিবেশের স্মৃতিকে বহন করে চলেছে। এছাড়া নীলকুঠি বাড়ির চতুর্দিকেই কাঁঠাল বাগান, পেয়ারার বাগান, লেবু বাগান ইত্যাদি ছাড়াও হরেক রকম দেশি ফলের বাগান লক্ষ্য করা যায়। নীলকুঠির সমগ্র বাড়িটি পরিদর্শন করতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগে থাকে।

মূল বাড়িটির ভিতরের সাজ-সজ্জা ও আসবাবপত্র তেমন কিছু না থাকলেও এসব ঘরের ব্রিটিশ উপনিবেশিক পরিবেশের ছাপ সুস্পষ্ট হয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে নীলকুঠির বাড়িটির পরিচর্যা দু-একবার হলেও বর্তমানে সেখানে রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় নি বলে প্রতীয়মান হয়। আমঝুপি গ্রামটি নীলকুঠির কারণেই একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন স্থান হিসেবে বাংলাদেশে মর্যাদা পেয়ে এসেছে। তাই এই স্থানটির সঠিক পরিচর্যা প্রয়োজন। দর্শনার্থীদের জন্য এখানে তেমন কোনো আবাসিক ব্যবস্থা নেই বলে অনেক দেশি-বিদেশি পর্যটকের নানারূপ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তথাপি নীলকুঠি বাড়ির গুরুত্ব অপরিসীম বিধায় অদ্যাবধি দর্শনার্থীর ভিড় লেগেই রয়েছে।

উপসংহার: বাংলাদেশের ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান হিসেবে মেহেরপুর জেলার আমঝুপি গ্রামের এ দর্শনীয় স্থানটির তাৎপর্য অস্বীকার করা যায় না। তাই নীলকুঠি বাড়ির সঠিক তত্ত্বাবধানে ও পরিচর্যায় বাংলাদেশের মানুষকে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কারণ নীলকুঠি বাংলাদেশেরই নিজস্ব দর্শনীয় স্থান হিসেবে এক ঐতিহাসিক সম্পদ।