- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য
ভূমিকা: ছাত্রজীবন মানবজীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময়। মানুষের সমস্ত জীবনই শিক্ষার সময় মানুষ আমৃত্যু কোনো না কোনো বিষয়ে অল্পবিস্তর জ্ঞানলাভ করে থাকে। বিদ্যায়তনে গমন করে শিক্ষকের নিকট থেকে পাঠ গ্রহণ করার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করার সময়কেই বিশেষ করে ছাত্রজীবন বলা হয়।
ছাত্রজীবনের মূল্য: ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ জীবনের বীজ বপনের সময়। শস্যখেতে যেরকম বীজ বপন করা হয়, সেরকম শস্যই সেখানে জন্মায়। সেরূপ ছাত্রজীবনে লব্ধ শিক্ষাই শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎকে নির্ধারিত করে। অতএব এ মূল্যবান সময়ে আমরা যদি নিষ্ঠা এবং একাগ্রতার সাথে জ্ঞানের চর্চা করে যাই, তবে ভবিষ্যৎ জীবন উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। আর আমরা যদি হেলায় সময় নষ্ট করি, তার শোচনীয় পরিণামও আমাদের ভোগ করতে হবে। বস্তুত ছাত্রজীবনের শিক্ষা ভবিষ্যৎ জীবনের পাথেয়স্বরূপ।
ছাত্রজীবনের কর্তব্য: সংস্কৃতে একটি কথা আছে, 'ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ।' অর্থাৎ অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা। ছাত্রজীবনে উপযুক্ত শিক্ষালাভ করে ভবিষ্যৎ জীবনে সফলতা লাভ করাই প্রত্যেকের ব্রত হওয়া উচিত। ভালোভাবে অধ্যয়ন করে পাঠ্যবিষয়গুলো আয়ত্ত করা প্রত্যেক ছাত্রের কর্তব্য। বিদ্যার্থীকে একাগ্রচিত্তে অধ্যয়ন করতে হবে, অহেতুক ভোগবিলাস এবং অসৎ সঙ্গ বর্জন করে পরিচ্ছন্ন জীবনযাপন করতে হবে।
চরিত্র গঠন: ছাত্রজীবন চরিত্র গঠনের উপযুক্ত সময়। চরিত্রহীন ব্যক্তি পশুর সমান। এজন্য ছাত্রজীবনেই ত্যাগ, সংযম, সাধুতা, ধৈর্য, সত্যবাদিতা ইত্যাদি গুণের অধিকারী হতে হবে। ভদ্রতা, বিনয় এবং সদাচরণ শিক্ষা করে জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে হবে।
স্বাবলম্বন: ছাত্রজীবনে শ্রমশীলতা ও অধ্যবসায় একান্ত প্রয়োজন। সেজন্য বিদ্যার্থীদের আলস্য ও কর্মবিমুখতা অবশ্যই বর্জন করতে হবে। শিক্ষক ও গুরুজনদের আদেশ পালন করা ছাত্রদের অবশ্য কর্তব্য। শুধু পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের গুণে স্বল্প মেধাসম্পন্ন ছাত্রও জীবনে যথেষ্ট উন্নতি লাভ করতে পারে।
স্বাস্থ্য গঠন: অধ্যয়নের সাথে সাথে শরীর গঠনের প্রতিও ছাত্রদের মনোযোগী হতে হবে। কেননা স্বাস্থ্য মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। সুস্থ শরীরেই সুস্থ মনের অধিবাস। ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে বিদ্যার্জন করা যায় না। অতএব, নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি পালনের মাধ্যমে ছাত্রদেরকে শারীরিক সবলতা অর্জন করতে হবে।
ছাত্রজীবনের দায়িত্ব: আজকের ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ কান্ডারি। দেশ গড়ার দায়িত্ব তাদের ওপরই ন্যস্ত। এ গুরুদায়িত্ব পালন করতে হলে ছাত্রদের মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধের শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে এবং তাদের বুদ্ধিবৃত্তিকেও করতে হবে শাণিত। কিছু কিছু সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমে এ সময় থেকেই দেশের সেবা করা শিখতে হবে। পরোপকার, অসহায় মানুষের প্রতি সমবেদনা, গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রভৃতি গুণকে স্বভাবের অঙ্গীভূত করে নিতে হবে এ সময়েই। দেশের কোনো সংকটময় মুহূর্তে ছাত্রসমাজকে কাজ করতে হবে অতন্দ্র প্রহরীর মতো। দুর্গত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে 'ছাত্রদেরকে দাঁড়াতে হবে বন্ধুরূপে।
উপসংহার: ছাত্রসমাজের দায়িত্ব ও কর্তব্য বহুমুখী। কোনো বিশেষ একটি দিকে মনোযোগ নিবন্ধ করে এ দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করা সম্ভব নয়। লেখাপড়া করা ছাত্রদের প্রাথমিক ও মৌলিক কর্তব্য, তার সাথে সাথে সমাজের প্রতি, রাষ্ট্রের প্রতিও দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাহলেই সাধিত হবে জীবনের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ, গড়ে উঠবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বদেশ।