• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

মোবাইল ফোন

ভূমিকা: সেলুলার ফোন বা মোবাইল ফোন হচ্ছে আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অবদান। এ ফোনের আকার, আকৃতি ও ব্যবহার পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এটিকে মুঠো ফোন বলা হয়ে থাকে। এটি টেলিফোনের সর্বাধুনিক সংযোজন। মোবাইল ফোন আজ বিশ্বের মানুষের জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম। এর রয়েছে ব্যাপক উপযোগিতা।

মোবাইল ফোনের প্রচলন বিজ্ঞানী গ্রাহামবেল উনিশ শতকে টেলিফোন আবিষ্কার করের। টেলিফোন আবিষ্কারের পরবর্তী সময়ে এটিকে আরও সহজতর ও সর্বত্র বহনযোগ্য করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। এ প্রচেষ্টার ফলে আবিষ্কৃত হয় সেলুলার ফোন। বাণিজ্যিকভাবে সেলুলার ফোনের প্রচলন শুরু হয় বিশ শতকের শেষ পর্যয়ে। এ ফোন প্রথম ব্যবহৃত হয় জার্মানিতে। পরবর্তীতে সারাবিশ্বে পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে সেলুলার ফোন। ১৯৯৩ সালে সিটিসেল কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ মোবাইল ফোনের জগতে প্রবেশ করে।

মোবাইল ফোনের ইতিবাচক দিক: মোবাইল ফোন বর্তমানে অত্যাবশ্যকীয় উপাদানে পরিণত হয়েছে। এর আবিষ্কার যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে বৈশ্বিক পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে। মানবজীবন হয়েছে অধিকতর গতিশীল। মানবজীবনে মোবাইল ফোনের ইতিবাচক দিকসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো-

সহজ যোগাযোগ মাধ্যম: বিশ্বের যেকোনো মানষের সাথে যেকোনো মুহূর্তে যোগাযোগের সহজ মাধ্যম হচ্ছে মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোনের কল্যাণে মুহূর্তের মধ্যে আমরা আমাদের যেকোনো তথ্য বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পৌছে দিতে পারি। ব্যবসায়-বাণিজ্য, ব্যক্তিগত যোগাযোগ, শিক্ষা, চাকরি, তথ্যের আদান-প্রদান প্রভৃতি ক্ষেত্রে যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন সহজতর যোগাযোগ মাধ্যম।

ইন্টারনেটের ব্যবহার: সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুর হয়েছে। মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা যেকোনো সময় বিশ্বের যেকোনো খবরাখবর জানতে পারছি এবং তথ্য আদান-প্রদান করতে পারছি। মোটকথা, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গোটা বিশ্ব যেন আজ আমাদের হাতের মুঠোয়।

বিনোদনের মাধ্যম: মোবাইল ফোন বর্তমানে বিনোদনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠেছে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা রেডিও'র অনুষ্ঠান শুনতে পারি, টেলিভিশন দেখতে পারি, বিভিন্ন ধরনের গেমস খেলতে পারি, রেকর্ডকৃত গান বা অনুষ্ঠান দেখতে পারি। অর্থাৎ, মোবাইল ফোন ক্লান্তি দূর করে আমাদেরকে প্রাণবন্ত করে তুলছে। কাজেই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, মোবাইল ফোন অবসর সময় কাটানোর গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।

ব্যাংকিং লেনদেন: সম্প্রতি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাংকিং লেনদেন শুরু হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া যায় এবং টাকা ওঠানো যায়। এতে মানুষের সময় ও শ্রম উভয়ই সাশ্রয় হয়। আমাদের দেশেও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা ইতিমধ্যে চালু হয়েছে। 'হিসাব-নিকাশের কাজে ব্যবহার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা হিসাব-নিকাশের কাজ সমাধা করতে পারি। এটি বর্তমানে সহজে বহনযোগ্য ক্যালকুলেটর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাথে একটি মোবাইল থাকলে আমরা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে হিসাব-নিকাশ দ্রুত করতে পারি।

সঠিক তারিখ ও সময় নির্ণয় মোবাইল ফোনের বহুমুখী ব্যবহারের মধ্যে তারিখ ও সময় নির্ণয় অন্যতম। প্রতিটি মোবাইলে তারিখ ও সময় নির্ণয়ের জন্য ঘড়ি ও ক্যালেন্ডার সংযোজন করা হয়ে থাকে। তাছাড়া ক্যালেন্ডার থেকে বিভিন্ন দেশের স্থানীয় সময় জানা যায়।

তথ্য সংরক্ষণ: সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফোনে এমন সব সফটওয়‍্যার সংযোজন করা হচ্ছে যাতে করে মোবাইলে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করা যায়। এক্ষেত্রে অনেকে মোবাইল ফোনকে মিনি কম্পিউটার বলে আখ্যায়িত করে থাকেন।

রেকর্ডিং: বর্তমান সময়ে বাজারে যেসব মোবাইল ফোন পাওয়া যায় তার অধিকাংশে ক্যামেরা, ভিডিও ক্যামেরা, অডিও রেকর্ডিং সুবিধা রয়েছে। এসব সেট দিয়ে বিভিন্ন স্মরণীয় মুহূর্তের দুর্লভ ছবি যেমন ধারণ করে রাখা সম্ভব তেমনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানও রেকর্ডিং করে রাখা যায়।

মোবাইলের নেতিবাচক দিক: মোবাইল ফোনের যেমন রয়েছে কতিপয় ইতিবাচক দিক তেমনি এর নেতিবাচক দিকও কম নয়। নিচে এর নেতিবাচক দিকসমূহ তুলে ধরা হলো-
আর্থিক অপচয়: মোবাইল অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য হলেও বর্তমানে এটি ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকে ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে অপ্রয়োজনেও মোবাইল ব্যবহার করছে। ফলে আর্থিক অপচয় হচ্ছে।

শারীরিক ক্ষতিসাধন: সাম্প্রতিক সময়ে গবেষণায় দেখা গেছে মোবাইল ফোন আমাদের বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্ষতিসাধন করে থাকে। যেমন- অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে মানুষের শ্রবণশক্তি ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, হৃদরোগীদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় ইত্যাদি। এছাড়া গবেষকদের কেউ কেউ বলেছেন- মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষের ব্রেইন ক্যান্সার হতে পারে।

অপরাধ বিস্তার: এক শ্রেণির মোবাইল ব্যবহারকারী রয়েছে যারা বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। এ অপরাধীরা মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অপরাধ বিস্তারে ভূমিকা রাখছে।

দুষ্টলোক কর্তৃক শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট: একশ্রেণির দুষ্ট লোক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে নিরীহ মানুষকে হুমকি প্রদান করে তাদের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন ও শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে।
বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের প্রচলন: ১৯৯৩ সালে সিটিসেল কোম্পানির মাধ্যমে বাংলাদেশ মোবাইল ফোনের জগতে প্রবেশ করে। বর্তমানে আমাদের দেশে রয়েছে ৬টি মোবাইল কোম্পানি। এগুলো হলো- গ্রামীণ ফোন, রবি, সিটিসেল, বাংলা লিংক (সেবা টেলিকম এর পরিবর্তিত নাম), টেলিটক (টিএন্ডটি) ও এয়ারটেল।

উপসংহার: সেলুলার ফোন বা মোবাইল ফোন, যাকে আমরা মুঠো ফোন বলে থাকি। এ ফোন বিজ্ঞানের এক অভিনব সংযোজন। দ্রুত সম্প্রসারিত হয়েছে এ ফোন। মুঠো ফোনের মাধ্যমে মানুষ বিশ্বকে এনেছে হাতের মুঠোয়। সহজতর যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এটি মানবসভ্যতাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এর ব্যাপক ব্যবহার এর আবিষ্কারকে স্বার্থক করে তুলেছে। কতিপয় খারাপ দিক থাকা সত্বেও মোবাইল ফোন আধুনিক সভ্যতার আশির্বাদ বলা যায়।