- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
বাংলাদেশের পাখি
ভূমিকা: এ পৃথিবী যিনি সৃষ্টি করেছেন তাঁর সৃষ্টির প্রতিটি জিনিসই অপূর্ব সুন্দর। পাখি হলো তাঁর যাবতীয় সৃষ্টির মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর। পাখি কেবল নিজেই সুন্দর নয়। এরা সুন্দর করেছে আমাদের পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে। এ প্রজাতি পাখার উপর নির্ভর করে চলে বলে এদেরকে বলা হয় পাখি।
পাখির কলরবে প্রকৃতি: সুজলা-সুফলা, শস্য শ্যামলা বাংলার এ পল্লি প্রকৃতি। এখানে আছে মাঠে ফসল, নদী-নালা, পুকুরে মাছ এবং গাছে ফলফুল ও নানা ধরনের পাখির মিলন মেলা। বিচিত্র বর্ণের পাখি আমাদের পরিবেশকে রেখেছে মুখরিত করে। বাংলার মানুষ পাখির গানে গানে ঘুমিয়ে পড়ে। আবার পাখির গানে ঘুম থেকে ওঠে জেগে। কবির ভাষায়-
"আমরা পাখির ডাকে ডাকে ঘুমিয়ে পড়ি
পাখির ডাকে জাগি।"
বাঙালির কাছে পাখি অতি সুপরিচিত জীব। পাখিকে বাদ রেখে বাঙালির পরিবেশ কল্পনা করা যায় না। আমাদের দেশের পল্লি অঞ্চলে অসংখ্য পাখি বাস করে। এদের মধ্যে কিছুসংখ্যক পাখি আছে যার কূজনের সাথে বাঙালি হৃদয়ের সুপ্ত স্মৃতি জড়িত আছে।
পাখির প্রকার ও রূপ বৈচিত্র্য: বাংলাদেশের পাখিদের মধ্যে কাক, চড়ুই, বাবুই, দোয়েল, মাছরাঙা, টুনটুনি, শালিক, ময়না, কাকাতোয়া, কোকিল, বউ কথা কও, চিল, পেঁচা, ঘুঘু, ডাহুক, পাপিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে কয়েকটির ডাক আমাদের বিরক্তির উদ্রেক করে। কিন্তু অনেকগুলো পাখির ডাক আমাদের কাছে শ্রুতিমধুর। এদের মধ্যে অনেক পাখি স্থায়িভাবে এদেশে বাস করে। আবার কিছুসংখ্যক পাখি যারা বিশেষ ঋতুতে এদেশে আসে আবার কিছুদিন পরে আবার চলে যায়। এদেরকে বলা হয় অতিথি পাখি।
পাখি ও আমাদের বাংলা সাহিত্য: আমাদের দেশের অনেক কবি পাখিদের নিয়ে অনেক সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখেছেন। যেমন:
"পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল।"
এমনি অসংখ্য কবিতা, গান ইত্যাদি আমাদের বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
পাখির বর্ণনা: বাংলাদেশের পাখিগুলোর মধ্যে কয়েকটি সুপরিচিত পাখির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হলো:
১. কাক: এদেশের সুপরিচিত পাখির মধ্যে কাক অতি পরিচিত। কিন্তু কাক অতিশয় কুৎসিত ও ধূর্ত। এর স্বর অত্যন্ত কর্কশ ও বিরক্তিকর। কাক স্বভাবেও অতি জঘন্য, এটি চোর প্রকৃতির। সুযোগ পেলেই চুরি করে।
২. শালিক: শালিক একটি পরিচিত পাখি। এর আকার চড়ুই থেকে কিছুটা বড়। এরা খুবই শান্ত প্রকৃতির পাখি। শিক্ষা দিলে এরা মানুষের মত কথা বলতে পারে।
৩. কোকিল ও বউ কথা কও এ দুটি পাখি আমাদের দেশের স্থায়ী বাসিন্দা নয়। এরা বসন্তের অগ্রদূত। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে প্রকৃতি যখন মনোহর রূপ ধারণ করে তখন এরা পাতার আড়ালে গাছের ডালে বসে সুমধুর গান ধরে। এ সুমধুর গানে কবিদের মন নেচে উঠে। প্রকৃতিপ্রিয় কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ তো কোকিলের পেছনে সারাজীবন ঘুরেছেন কোকিলকে একবার দেখার জন্য। কিন্তু তিনি বারবার ব্যর্থ হয়েছেন। বউ কথা কও হলদে রঙের পাখি যখন ঘন কোন সবুজ অরণ্যের ভেতরে বসে অভিমান করে গান ধরে তখন বেরসিক মানুষকেও ভাবুক করে তোলে। উদাস মনে সে আবার উড়ে যায় অন্য এক অজানার দেশে।
৪. টিয়া ও ময়না: টিয়া ও ময়না সুন্দর মনের মিষ্টি পাখি। এরা মানুষের কণ্ঠস্বর অনুকরণ করতে পারে। ময়না ভীষণ অভিমানী পাখি। সে মারাত্মক অভিমান করে বসে। ময়নাকে অনেক মানুষ সখের বসে পোষণ করে।
৫. বুলবুল, দোয়েল, ঘুঘু ও পাপিয়া এরা প্রত্যেকেই গানের পাখি, প্রাণের পাখি। দোয়েলের শীষ অত্যন্ত চমৎকার। ঘুঘুর করুণ সুর মানুষের মনকে করে উদাস, তাইতো কবি বলেছেন-
"ঠিক দুপুরে করুণ সুরে ঘুঘু করে গান
জ্যোৎস্না রাতে পাপিয়াতে তুলে সেথায় তান।"
এছাড়াও আমাদের দেশে মাছরাঙা পাখি আছে। সে শুধু নদী, পুকুর কিংবা ডোবাতে এক ধ্যানে বসে মাছ শিকার করে। আমাদের কাছে চড়ুই ও বাবুই অতি সুপরিচিত নাম। চড়ুই আমাদের ঘরের চালে কিংবা পাকা ঘরের ভেন্টিলেটরের খোপে বাস করে। আর বাবুই সুনিপুণভাবে তাল গাছে তার বাসাটি তৈরি করে। এদেরকে বলা হয় কারিগর পাখি। এছাড়াও আমরা কিছুসংখ্যক পাখি পুষে থাকি; যথা: কবুতর, হাঁস-মুরগি, কোয়েল ইত্যাদি।
পাখির প্রয়োজনীয়তা: পাখির প্রয়োজনীয়তা বহুবিধ। পাখি নিজ সৌন্দর্য দিয়ে আমাদের পরিবেশকে করে 'মনোহর। কাককে বলা যায় প্রকৃতির ঝাড়ুদার। কাক ও শকুন নোংরা মরা আবর্জনা খেয়ে পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখে। হাঁস-মুরগি, কবুতর, কোয়েল আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। বর্তমানে এরা আমাদের অর্থনীতিতে যোগ করছে নতুন মাত্রা।
পাখি সংরক্ষণে সরকারের পরিকল্পনা: সরকার পাখি সংরক্ষণে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে শীতে অতিথি পাখি শিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ যেন অতিথি পাখিদের বিরক্ত না করে সে ব্যাপারে সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়ে থাকে। পাখি সংরক্ষণের ব্যাপারে বর্তমান সরকার খুবই যত্নশীল।
উপসংহার: আমাদের এদেশ পাখপাখালির দেশ। এখানে নানা প্রজাতির পাখি বাস করে। আবার শীতে বাইরের দেশ থেকে বেড়াতে আসে। পাখি পোষে মানুষ আনন্দ পায়। কাজেই এদের সংরক্ষণ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।