• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

কী ধরনের বই আমার পড়তে ভালো লাগে

ভূমিকা: কবিতা আমি বুঝি না। নাটক বা উপন্যাস ভালো লাগে না। আকারে বড়ো বলে এগুলোর প্রতি আমার মন টানে না। যা পড়তে ইচ্ছা করে এবং আমার ভালো লাগে তা হলো গল্প। এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলা যায়। ছোট কোনো ঘটনা বা কাহিনি থাকে আর অল্প সময়ে শেষ হয়ে যায়। পাঠ্য বই পড়ার ফাঁকে ভাইয়া আর মাকে ফাঁকি দিয়ে দিনে একটা দুটো গল্প পড়া যায়। তাতে বকুনি খাওয়ার বা রাগারাগির ভয় থাকে না। এ কৌশলে অনেক গল্পের বই আমার পড়া হয়ে গেছে।

যে বই পড়তে ভালো লাগে গত দু'বছরে যত গল্পের বই পড়েছি তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'গল্পগুচ্ছ' আমার প্রিয়। এটা ছিল আমার জন্মদিনের উপহার। বাবা দিয়েছিলেন। 'গল্পগুচ্ছে'র অনেক গল্পই আমি বুঝি না। কিছু গল্প আছে বড়ো আকারের। 'বলাই', 'ছুটি', 'হৈমন্তী'র মতো গল্পগুলো পড়তে ভালো লাগে। এর মধ্যে 'ছুটি' গল্পটি আমার খুব প্রিয়। কেননা 'ছুটি'র ফটিক আমাকে খুব আকর্ষণ করে।

গল্পের কাহিনি: আমার ফটিক হতে ইচ্ছে করে। ফটিকের মতো অবাধ স্বাধীন জীবন যাপন করতে, সমবয়সী বন্ধুদের নিয়ে আনন্দ করতে, তাদের নেতৃত্ব দিতে। আমি তো শহরে জন্মেছি, শহরে বড়ো হচ্ছি। এখানে বিশাল খোলা প্রান্তর নেই, সবুজ ফসলের মাঠ নেই, নদীর তীর নেই, ঘুড়ি উড়ানোর সুযোগ নেই, কোনো স্বাধীনতা নেই। কেবল বাধা-নিষেধ, কেবল পড়াশুনা আর ছোট্ট ঘরে বন্দী থাকা। তাই কেবল ইচ্ছে করে 'তাইরে নাইরে না' বলে গলা ছেড়ে গাইতে, ঘুড়ি উড়াতে, নদীতীরে ছোটাছুটি করতে, ইচ্ছেমতো নানা রকম খেলা খেলতে। আহা, কী সুখ কী আনন্দ ফটিকের! স্কুলে না গিয়ে পড়াশুনা না করে উচ্ছৃঙ্খলতার জন্য বকা বা মার খাওয়ার মধ্যেও বৈচিত্র্য আছে। ছোট ভাই মাখনকে সে ভালোবাসে খুব। কেবল মিথ্যা কথার জন্যই সে মার খায়। মামার সাথে কলকাতা যাওয়ার স্বপ্ন তাকে বিভোর করে রাখে। মায়ের কথাও কিছু সময়ের জন্য ভুলে যায়। পথে স্টামার যাত্রার সবকিছু সে মনে ধরে রাখে।

মামা বাড়িতে এসেও ফটিক সবাইকে ভালোবাসতে চেষ্টা করে, সবাইকে আপন করে নিতে চায়। সে বুঝতে পারে মামা ছাড়া অন্য কেউ তাকে ঠিক পছন্দ করছে না। সবাই তাকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এমনকি মামিকে সাহায্য করার পরও তার মন পাচ্ছে না। মামাতো ভাইদের অসহযোগিতা, মামির স্নেহহীনতা তাকে মানসিক কষ্টের মধ্যে ফেলে দেয়। ফটিকের মতো এমন দুঃসহ মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে পড়লে হয়তো আমারও মায়ের কাছে গ্রামে ছুটে যাওয়ার কথাই মনে পড়তো। ফটিকের কষ্টে আমিও কষ্ট পাই, ফটিকের যন্ত্রণা আমাকেও বিদ্ধ করে। তার জন্য আমার খুব মায়া লাগে। আমি জানি না ফটিকের জায়গায় আমি থাকলে কী করতাম।

উপসংহার: ফটিকের জ্বর হয়েছে। হতেই পারে। চিকিৎসা চলছে। সে ভালো হয়ে যাবে। কিন্তু লেখক তাকে মেরে ফেললেন। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে এ কাজটা কেন তিনি করলেন? অনেক 'প্রশ্ন জেগেছে আমার মনে, অনেক ভেবেছি। ফটিকের এমন অকালমৃত্যু আমি মেনে নিতে পারি না। 'ছুটি' গল্পটা আমাকে যেমন আনন্দ দেয় তেমনি দেয় দুঃসহ কষ্ট।