- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
আমার প্রিয় খেলা: হা-ডু-ডু
ভূমিকা: স্বাস্থ্যকে সুন্দর রাখতে হলে খেলাধুলার বিকল্প নেই। খেলাধুলা মনকে প্রফুল্ল রাখে। আবার শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ সঞ্চালনে খেলাধুলা সহায়ক হয়। সুতরাং খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। খেলাধুলা মানসিক পুষ্টি বাড়ায়। জাতীয় জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব অপরিসীম। সুস্থসবল জাতি গঠনে এবং তারুণ্য ধরে রাখতে খেলাধুলা করা একটি উত্তম পন্থা। বাংলাদেশে ঐতিহ্যপূর্ণ বেশ কয়েকটি খেলা আজও জনপ্রিয়। এছাড়া বিদেশি কয়েকটি খেলাও জনপ্রিয়তা লাভকরেছে। দেশি-বিদেশি উভয় প্রকার খেলাই বর্তমানকালে জনপ্রিয়। দেশীয় ঐতিহ্যপূর্ণ খেলাগুলোর মধ্যে হা-ডু-ডু অন্যতম। সেজন্য আমার প্রিয় খেলা হচ্ছে হা-ডু-ডু। বাঙালির লোকজ জীবনে এ খেলা অদ্যাবধি জড়িয়ে রয়েছে। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এ হা-ডু-ডু খেলা অসম্ভব জনপ্রিয় হয়ে রয়েছে। হা-ডু-ডু খেলাটি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা।
হা-ডু-ডু খেলার পরিচিতি: দেশীয় খেলা হিসেবে হা-ডু-ডু একটি ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় খেলা। বাংলাদেশের প্রতিটি প্রত্যন্ত গ্রামে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তবে হা-ডু-ডু খেলাটি বাংলাদেশের আঞ্চলিকতার দরুন বিভিন্ন নামে খ্যাত। যেমন: কাবাডি, কাপাটি, কপাটি, ডু-ডু ইত্যাদি। এ খেলাটি বছরের যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। তবে বর্ষার আমেজে কাঁদাময় পরিবেশে এ খেলার স্বাদ আরও বেড়ে যায়।
খেলার মাঠ ও খেলোয়াড় হা-ডু-ডু খেলার জন্য বেশি জায়গার দরকার পড়ে না। বাংলাদেশের জলবায়ু এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ এ খেলার পক্ষে ইতিবাচক হয়ে থাকে। যেকোনো ছোট সমতল স্থানে এ খেলা হতে পারে। এ খেলাটির মাঠের নির্দিষ্ট কোনো মাপ নেই। তবে ২১ হাত লম্বা এবং ১৪ হাত চওড়া জায়গা দাগ কেটে হা-ডু-ডু খেলায় মাঠটিকে নির্দিষ্ট করা হয়। কোটের মাঝখানে মধ্যরেখা টেনে কোটকে সমান দুভাগে ভাগ করা হয়। উভয় ভাগে ১২ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে। তবে ৭ জন করেও খেলা করা যায়। বাকি ৫ জন অতিরিক্ত খেলোয়াড় থাকে।
হা-ডু-ডু খেলার নিয়ম: হা-ডু-ডু খেলায় ছয়/সাত জন করে মোট দুটি দল থাকে। খেলা পরিচালনা করেন একজন রেফারি। তিনি বাঁশি বাজিয়ে খেলা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন। সমগ্র খেলার মাঠটি দাগ কেটে সীমারেখা দেওয়া হয়। যেকোনো অবস্থায় খেলোয়াড় এ সীমারেখা অতিক্রম করলে সে একটি পয়েন্ট হারাবে। সমগ্র মাঠের ঠিক মধ্যস্থানে একটি রেখা-চিহ্ন থাকে। একে প্রথম লাইন বলা হয়। এ প্রথম লাইন থেকে খেলোয়াড় বেশি দম নিয়ে ছড়া কাটতে কাটতে প্রতিপক্ষের কোটে বা ঘরে প্রবেশ করে যেকোন একজনকে ছুঁয়ে দিতে চেষ্টা করে। এটি এক নিঃশ্বাসে করে। নিঃশ্বাস ছাড়া যাবে না। এক্ষেত্রে কাউকে ছুঁয়ে খেলোয়াড় দৌড়ে নিজেদের কোটে ফিরবে।
খেলায়াড় যে দম বন্ধ করে থাকে তা প্রমাণ করার জন্যই হা-ডু-ডু, হা-টিক টিক, কাবাডি-কাবাডি প্রভৃতি বোল বলে থাকে। খেলায়াড়ের এ অবস্থায় প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়রা তাকে ধরে রাখতে চেষ্টা করে। কিন্তু তার দম ফুরিয়ে যায় এবং সেখানে আটকে যায় তবে সে খেলোয়াড়ের হার হয়। অর্থাৎ সে 'মরা' হিসেবে গণ্য হয়। কিন্তু খেলোয়াড় যদি তাদের বেশ কয়েকজনকে ছুঁয়ে বীরদর্পে নিজেদের কোটে ফিরে আসে, তবে তার পয়েন্ট গণনা করা হয়। এভাবে পয়েন্ট অর্জন করে এবং প্রতিপক্ষের কাছে 'মরা' বা হার হতে হতে খেলাটি চলে। খেলা চলতে চলতে যখন এক পক্ষের সকল খেলোয়াড় 'মরা' হয় তখন অন্যপক্ষের জয় হয়।
আর এভাবেই হা-ডু-ডু খেলার স্বরূপটি পরিস্ফুট হয়। হা-ডু-ডু খেলার উপরিকারিতা ও অপকারিতা: যেকোনো খেলারই উপকারিতা রয়েছে। এ খেলায় তেমন খরচ নেই। হা-ডু-ডু খেলায় শারীরিক কসরৎ হয়। তাই এ খেলা দেহ ও মনকে সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ করে। অনেকের সমন্বয়ে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয় বলে পারস্পরিক ভাতৃত্ববোধ এতে জাগ্রত থাকে। আবার শৃঙ্খলাভাবও এতে দৃঢ় হয়। এ খেলা দ্বারা যুদ্ধকৌশল রপ্ত করা যায়। রক্ত সঞ্চালন হয় বলে শরীর রোগমুক্ত থাকে; আলস্য দূর হয়; কাজে অনুপ্রেরণা বাড়ে; অবসাদ থাকে না। প্রতিযোগী মনের উত্থান হয় এবং মুক্ত চিন্তার ভাবটি পরিলক্ষিত হয়। হা-ডু-ডু খেলার অপকারিতাও লক্ষ্য করা যায়। এ খেলায় হাত-পা ভেঙে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তবে সাবধানতা অবলম্বন করলে এ খেলাটি একটি উত্তম খেলা হিসেবে গণ্য হয়।
হা-ডু-ডু খেলার উপযোগিতা হা-ডু-ডু খেলা একটি নির্মল আনন্দদায়ক খেলা। এ খেলার নিয়মকানুন ও আয়োজন সহজ হয়ে থাকে। আবার এ খেলার তেমন কোনো উপকরণ ব্যবহৃত হয় না বলে এতে তেমন খরচ নেই। আবার দুটি পক্ষের আক্রমণাত্মক কৌশল আর দম ধরে রাখার রঙ্গ ও ব্যঙ্গাত্মক ছড়ার জন্য এটি বেশি উপভোগ্য। দেহ মনকে সুস্থ রাখতে এ খেলার বিকল্প নেই। অর্থাৎ এ খেলার মাধ্যমে ব্যায়াম হয়ে যায়। ফলে শরীরচর্চা এবং স্বাস্থ্য রক্ষায় হা-ডু-ডু খেলার যথেষ্ট উপযোগিতা লক্ষ্য করা যায়।
উপসংহার: যেকোনো খেলাধুলা মানুষের মনকে প্রতিযোগিতামুখী করে তোলে। আবার এ কারণে মন দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়। সে সঙ্গে খেলা মানুষকে সহিষ্ণুতার দীক্ষা দেয় এবং সংকীর্ণতা দূর করে। জয়-পরাজয়, ব্যর্থতা ও সফলতার মাধ্যমে মানুষ সুশৃঙ্খল হয়। তাই খেলার মাঠ মানুষের আদর্শবান চরিত্র ও মানসিকতার পীঠস্থান বলা যায়। বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে ঐতিহ্যবাহী হা-ডু-ডু খেলাটির প্রচলন আরও ব্যাপকভাবে অনুষ্ঠিত করা প্রয়োজন।