• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

শিশুশ্রম

ভূমিকা: আজকের শিশু ভবিষ্যতের কর্ণধার। একটি সুস্থ-সবল শিশুই আগামী দিনে একটি সুস্থ সুন্দর জাতি বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি বহন করে। মানুষ আজ লোভী পশুর মতো অসহায় মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। শিশুদেরকে কলকারখানার শ্রমিক বৃত্তিতে নিয়োগ করে একশ্রেণির স্বার্থান্ধ মানুষ প্রচুর মুনাফা অর্জন করে চলেছে। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা তাদের কাজ হাসিল করে চলেছে।

বাংলাদেশে শিশুশ্রমের প্রকৃতি: দারিদ্র্যের জাঁতাকলে নিষ্পেষিত বাংলাদেশের বহু সংখ্যক শিশুকে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার বয়সে নামতে হয় অর্থোপার্জনে। আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বাবা-মা শিশুদের স্কুলে পাঠানোর পরিবর্তে কর্মক্ষেত্রে পাঠাতে বাধ্য হন। যেকোনো কঠিন শ্রমে নিয়োজিত হয়ে তারা যৎসামান্য উপার্জনকেও গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে।

বাংলাদেশে শিশুশ্রমের ক্ষেত্র বেশ প্রসারিত। বাংলাদেশের অনেক শিশু ছোটখাটো কলকারখানা থেকে শুরু করে পাথর ভাঙা, ফেরি করা; বাস-ট্রাকের হেলপার, কাঠমিস্ত্রি, হোটেলের বয়, কুলি এবং ফুটপাতে কাগজ কুড়িয়ে বিক্রি করার কাজে নিয়োজিত। বর্তমানে পোশাক শিল্পেও অসংখ্য শিশু শ্রমিক কাজ করছে। যে বয়সে শিশুর বই নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, খেলাধুলার রঙিন স্বপ্নে বিভোর থাকার কথা, সে বয়সে হতভাগ্য নিয়তি তাকে জীবিকার তাগিদে অর্থ উপার্জনে বাধ্য করছে। এ বোঝা বইতে বইতে তারা নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় এবং অকালেই ঝরে যায়।

শিশুশ্রম জাতির অভিশাপ শিশুশ্রম যেকোনো জাতির জন্য অভিশাপ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি আরও ভয়াবহ অভিশাপ। কেননা যে শিশুরা জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ন্তা, শিশুশ্রমের কারণে তারা হয়ে ওঠে অযোগ্য ও অকর্মণ্য। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে তারা সামাজিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়ে। শহর ও বন্দর এলাকায় শিশুদের জোর করে মাফিয়াচক্রের অপরাধ জগতের কাজে লাগানো হয়। চোরাচালান, ছিনতাই, পকেটমার এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তাদের দিয়ে করানো হয় না। অনেক শিশুকে বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়। গডফাদারদের অবাধ্য হলে তাদের ওপর চালানো হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ফলে শিশুরা অভিশপ্ত জীবন নিয়ে সমাজে বেড়ে ওঠে।

বাংলাদেশে শিশুশ্রম বৃদ্ধির কারণ: বাংলাদেশের ৪৮ শতাংশ লোক এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এসব দারিদ্র্যপীড়িত মা-বাবা অভাব-অনটনের তাড়নায় তার শিশুসন্তানটিকে শ্রমবৃত্তি গ্রহণ করতে বাধ্য করে। এছাড়া শিক্ষা গ্রহণের পর কাজের নিশ্চয়তা না থাকায় এদেশের বাবা-মায়েরা তাদের ছেলেমেয়েদের কম বয়সেই কাজে পাঠায়। রাজনৈতিক বিপর্যয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, উচ্ছৃঙ্খল বাবা-মায়ের নৃশংস আচরণও এ সমস্যার জন্য অনেকাংশে দায়ী। পরিবারের যেখানে অনেক ছেলেমেয়ে সেখানে সবার ভরণপোষণের জন্য শিশুদেরকে রোজগার করতে হয়। ফলে শিশুশ্রম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শিশুশ্রমের পরিণতি: শিশুশ্রম একটি মানবতাবিরোধী কাজ। শুধু বাংলাদেশই নয়, যেকোনো দেশের জন্যই, এর পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। অতিরিক্ত শ্রমদানের ফলে এবং আধপেটা ও পুষ্টিকর খাবারের অভাবে শিশুদের স্বাস্থ্য নষ্ট হয়, তারা অপুষ্টিজনিত নানা রোগে ভোগে। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবনীশক্তি ক্ষয় হতে থাকে এবং ভগ্নস্বাস্থ্য আর উদ্ধার হয় না। অর্থ উপার্জনে নিয়োজিত শিশুরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে তাদের দ্বারা জাতির বা দেশের কাঙ্ক্ষিত উপকার হয় না। সর্বোপরি শিশুশ্রমের কারণে জনশক্তির অপচয় ঘটে।

শিশুশ্রম বন্ধে সরকারি উদ্যোগ: অসহায় ও নির্যাতিত শিশুদের রক্ষা করতে হলে সরকারি, বেসরকারি সর্বমহলের আন্তরিক প্রচেষ্টা প্রয়োজন। বঞ্চিত-নিপীড়িত-গৃহহীন এ শিশু-কিশোরদের পর্যাপ্ত জীবন ব্যবস্থা তথা বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা বিধান করতে না পারলে বিশ্বের কোনো আইনই নিষ্ঠুর শ্রমের হাত থেকে শিশুদের রক্ষা করতে পারবে না। বর্তমান সরকার প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ঘোষণা দিয়েছেন এ ব্যাপারটি দৃষ্টিযোগ্য। কিন্তু পেটে যার ভাত নেই সে শিশুর জন্য শিক্ষা অবাস্তব কল্পনা ছাড়া অন্য কিছু নয়। এ প্রেক্ষাপটের আলোকে বলা যায়, দেশকে শিক্ষাদীক্ষায় স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হলে সর্বপ্রথম দেশের মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, তারপর বিদ্যার্জনের মতো মহৎ কর্মের ব্রত গ্রহণ করতে হবে। কারণ ঈশ্বরচন্দ্রের মতে পেটে খেলেই পিঠে সইবে, নতুবা নয়।

শিশুশ্রম বন্ধে আমাদের করণীয়: বাংলাদেশে শিশু ও নারী নির্যাতন আইন-১৯৯৫ বলবৎ থাকলেও এর মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সমাজকল্যাণমূলক সংস্থাগুলোকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে। তাদের বোঝতে হবে যে, একটি জাতির ভবিষ্যৎ উন্নতি নির্ভর করে সেদেশের বর্তমান শিশুদের ওপর।

উপসংহার: শিশুশ্রম রোধ করতে না পারলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষের (১৯৮৯) প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়নি। মানবতার নিদারুণ সংকটের দিন সেদিন ঘনিয়ে আসবে, যেদিন পৃথিবীর আলোয় শিশুমনের স্থান হবে না। দেশে নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করতে হবে। কাজেই দেশের অন্যান্য জটিলতার সঙ্গে শিশুশ্রম ও শিশু নির্যাতনের ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। দেশের প্রতিটি শিশুকে সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। তবেই জাতি হিসেবে আগামী দিনে আমরা বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসন লাভ করতে পারব।