- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
আমাদের গ্রাম
অবস্থান: আমাদের মির্জাবাড়ী গ্রামটি টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর থানার অধীনে অবস্থিত। মধুপুর থানা শহরের পশ্চিম দিকে মাত্র তিন মাইল দূরত্বে আমাদের গ্রামটি অবস্থিত। গ্রামটি দৈর্ঘ্যে প্রায় এক মাইল ও প্রস্থে আধা মাইল। এর পূর্ব প্রান্ত দিয়ে সর্পিল গতিতে মধুপুর সড়কটি চলে গেছে। পশ্চিম দিকে এর পাশ দিয়ে বংশী নদী প্রবাহিত হচ্ছে।
জনসংখ্যা: আমাদের গ্রামে প্রায় তিন হাজার লোক বাস করে। এদের অধিকাংশই মুসলমান। কয়েক ঘর হিন্দুও আছে। এখানে হিন্দু ও মুসলমানেরা সম্প্রীতির সাথে বাস করে।
উৎপন্ন দ্রব্য: আমাদের গ্রামের ভূমি খুবই উর্বর। বর্ষাকালে কৃষিখেতগুলো পানিতে ডুবে যায়। গ্রামে বেশ কয়েকটি নারিকেল ও সুপারির বাগান আছে। আমাদের গ্রামের মাঠে ধান, আখ, পাট, কলাই, সরিষা, মসুর, মটর প্রভৃতি ফসল উৎপন্ন হয়। বিলের জমিতে বোরো ও ইরি ধান জন্মে। উঁচু জমিগুলোতে আউশ ধান, পাট ও শাকসবজি জন্মে। তবে অনেক সময় বন্যায় নিচু জমির ফসল পানিতে তলিয়ে যায় এবং ফসল নষ্ট হয়। তখন কৃষকদের কষ্টের সীমা থাকে না।
লোকের পেশা: ধনী লোকদের প্রচুর জমিজমা আছে। তাদের পেশা কৃষিকাজ। তাদের মধ্যে কেউ কেউ চাকর-বাকর রেখে নিজেরাই জমি চাষাবাদ করে থাকেন, অন্যেরা জমি বর্গা দিয়ে থাকেন। গ্রামে কিছুসংখ্যক ব্যবসায়ী আছেন, তারা ধান, চাল, কলাই, সরিষা, মটর, মসুর প্রভৃতি বাজারে বিক্রি করেন এবং এসব ফসল গ্রামের বাইরে পাঠিয়ে দেন। ফলে গ্রামবাসীর আয় বৃদ্ধি পায়।
বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট গ্রামের অধিবাসীদের বাড়িঘর প্রধানত কাঁচা মাটির ও উপরে খড়ের বা গোলপাতার ছাউনি দিয়ে তৈরি। এই কাঁচা বাড়িগুলো ছাড়া গ্রামে বেশ কয়েকটা পাকা বাড়ি আছে। তাছাড়া মধ্যবিত্ত লোকদের বাড়িতে ইট বা মাটির দালান ও টিনের ছাউনি আছে। বন্যার সময় কাঁচা বাড়িতে বাস করা অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে পড়ে। আমাদের গ্রামের পূর্ব পাশ দিয়ে একটি পাকা রাস্তা চলে গেছে। গ্রামের মধ্যে এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় যাওয়ার জন্য কয়েকটি উঁচু রাস্তা আছে, তাছাড়া পায়ে চলা গলিপথও আছে জালের মতো ছড়িয়ে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আমাদের গ্রামে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি মসজিদ ও মসজিদ সংলগ্ন মাদ্রাসা আছে। গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েরা এই মাদ্রাসায় সকাল বেলায় আরবি, নামাজ শিক্ষা ইত্যাদি বিষয় পড়ে এবং দশটার সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে যায়। এছাড়া একটি কৃষি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদ অফিস, একটি মাতৃসদন এবং একটি বেসরকারি ক্লিনিক আছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: প্রকৃতির আপন খেয়ালে এ গ্রামটি সাজানো। এ গ্রামের লোকেরা পাখির ডাকে ঘুম থেকে ওঠে এবং পাখির গানে নিদ্রা যায়। নানা রকম গাছপালায় আচ্ছাদিত গ্রামখানিকে দূরে থেকে বোঝাই যায় না ওখানে ঘরবাড়ি আছে। গাছে গাছে মৌসুমি ফুলের কী দারুণ সমারোহ। আর শাখে শাখে হরেক রকম পাখির কুহুতান। মধ্য দুপুরে ঘুঘু পাখির একটানা ডাক কার না ভালো লাগে। কোকিলের ঐকতান, পাপিয়ার ডাক, চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ সব মিলিয়ে এক অপরূপ পরিবেশ যেন গ্রামবাসীকে প্রশান্তি দান করে চলেছে। গ্রামটি ঘনবসতিপূর্ণ। বাড়িগুলো একটার সাথে একটা সম্পৃক্ত। সারিবদ্ধ বাড়িঘর যেন গ্রামবাসীর হৃদয়ের সাথে মিশে আছে। এ গ্রামটির পশ্চিম পাশ দিয়ে যে বংশী নদী প্রবাহিত হচ্ছে তার বুক চিরে ভেসে যায় কত পালতোলা নৌকা। আর সেসব নৌকার মাঝিমাল্লাদের ভাটিয়ালি গান আমাদের সব দুঃখকে ভুলিয়ে রাখে। শীত মৌসুমে কত বিচিত্র পাখির আগমন ঘটে সেই নদীতে। দেশ বিদেশের অসংখ্য পাখি এই নদীতে এসে গ্রামটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। ঠিক যেন ছবির মতো আমাদের গ্রামটি।
উপসংহার: আমাদের গ্রামটি অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম। সব দিক দিয়ে বিবেচনা করলে এটাকে একটা আদর্শ গ্রাম বলা চলে। আমরা আমাদের গ্রামকে খুব ভালোবাসি এবং এর জন্য গর্ব অনুভব করি।